v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-07-06 20:18:02    
চীনের রুই আনের গ্রামীণ সমবায় সমিতি

cri
    আর্থিক উন্নয়নের মন্থর গতি সবসময় চীনের গ্রামীণ অর্থনীতি উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি মস্ত বড় বাধা । অথচ পূর্ব চীনের চে চিয়াং প্রদেশের রুই আন শহরে কৃষকদের কাছে পুঁজি আহরণ এখন আর কোনো সমস্যা নয় । কেন না , তারা সহজে কৃষক সমবায় সমিতি থেকে ক্ষুদ্র ও নিম্ন সুদের ঋণ পেতে পারছেন , যাতে তারা এ ঋণ দিয়ে নানা কাজে নিয়োজিত করতে পারেন ।

    চে চিয়াং প্রদেশের রুই আন শহরের চু আও তি গ্রামে ৪০ বছর বয়সের চু ইং তি নিজের বাড়ির আংগিনায় ঝাড়ু তৈরি করছিলেন । তার চারপাশে ছড়িয়ে ছিল স্তুপীকৃত ঝাড়ু । সুবিধাজনক ও বাস্তবভিত্তিক ঋণের পরিসেবার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে চু ইং তির মুখে হাসি আর ধরল না । তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন ,

    পুঁজি সহজে পাওয়া গেলে আমি বেশি কাঁচামাল আনতে পারি । অতীতে খুব অল্প পরিমাণে কাঁচামাল নিতাম । এখন অনেক বেশি কাঁচামাল নিতে পারছি । আপনি দেখুন , কত বাঁশের বেণী । ২০ হাজারেরও বেশি । সংখ্যা বেশি হলে কাঁচামালের দামও কমে আসে । এমনি হিসাব করলে আমার মাসিক আয় ৫ থেকে ৬ শ' ইউয়ান বাড়তে পারে ।

    চু ইং তি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেন , চু আও তি গ্রাম সেই এলাকার ঝাড়ু তৈরির সুপরিচিত গ্রাম । গ্রামটির দু শ' পরিবারের মধ্যে অর্ধেক পরিবার ঝাড়ু তৈরি করে থাকে । ঝাড়ু তৈরির কাজ সম্পূর্ণভাবে হাত দিয়ে সম্পন্ন করতে হয় । এ কাজ করতে যেমন সময় লাগে, তেমনি শ্রম সাপেক্ষ । বেশি টাকা উপার্জন করতে চাইলে এর উত্পাদন সম্প্রসারণ করতে হয় । তবে সাধারণত কৃষকদের পুঁজির অভাব রয়েছে । তাদের ব্যাংকে গিয়ে ঋণ নিতে হয় । অথচ অতীতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হলে তারা অনেক ঝামেলার সম্মুখীণ হতেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে তারা ঋণ নিতে পারতেন না । তবে এখন তারা সবাই কৃষক সমবায় সমিতিতে যোগ দিয়েছেন । তাদের কাছে ঋণ নেয়া আর কঠিন ব্যাপার নয় । তারা সহজে নিম্ন সুদের ঋণ পেতে পারছেন ।

   চু ইং তির উল্লিখিত কৃষক সমবায় সমিতি হচ্ছে বিশেষভাবে কৃষকদের জন্যে বহুমুখী পরিসেবায় নিয়োজিত সংস্থা । এ সংস্থা গ্রামীণ ক্রেডিট সমবায় সংস্থা , সরবরাহ ও বিক্রয় সমবায় সংস্থা ও বিশেষ পেশার সবমায় সংস্থা নিয়ে গঠিত । এ তিনটি ধরণের সমবায় সংস্থা আলাদা আলাদাভাবে কৃষকদের পুঁজি , বাজারে বিক্রয় ও কারিগরি পরামর্শসহ নানা ধরণের পরিসেবা প্রদান করে থাকে । রুই আনের এ গ্রামীণ ক্রেডিট সমবায় সংস্থাকে সেই এলাকার প্রথম গ্রামীণ সমবায় ব্যাংকও বলা চলে । রুই আন শহরের সহকারী মেয়র ছেন লিন মনে করেন যে , রুই আনের গ্রামীণ সমবায় সমিতি স্থানীয় কৃষকদের জন্যে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে একটি সুগম পথ খুলে দিয়েছে । তিনি বলেন ,

    গ্রামীণ সমবায় সমিতি কোনো ব্যাংক নয় । এটি ব্যাংকের সংগে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি সংস্থা । কৃষকরা এ সমিতিতে যোগ দিলে তারা আরো কার্যকর ও সুবিধাজনক আর্থিক পরিসেবা ভোগের একটি দ্রুত পথে পদার্পণ করবেন । এটি একেবারে বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংকের মত । অর্থাত কৃষকদের , বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের নিম্ন ও মাঝারী স্তরের কৃষকদের জন্যেই আমরা এসব কাজ করেছি ।

   যেমন ছেন লিন বলেছেন , কৃষক সমবায় সমিতি সরাসরি ঋণ দেয় না । সমিতিটি কেবল কৃষকদের আস্থার মূল্যায়ণ ও পারস্পরিক যুক্ত নিশ্চিতকরণসহ নানা ধরণের পরিসেবা প্রদান করে থাকে । এই তিনটি ধরণের সমবায় সংস্থার সম্মিলিত ভূমিকায় কৃষকদের উত্পাদন থেকে বিক্রয় পর্যন্ত গোটা প্রক্রিয়ার নিশ্চয়তা বিধান সম্ভব হয়েছে । এভাবে কৃষকদের ঋণ শোধের ক্ষমতাও বেড়েছে ।

ছেন লিন বলেন , তাদের সেখানকার কৃষকরা অত্যন্ত আস্থাশীল । তিনি বলেন ,

    বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংকের মত আমরাও মনে করি যে , গরীবদের আস্থা নেই , এমন নয় । কৃষকরা আপনার বাড়িতে গিয়ে কোনো একটি জিনিস ধার নিলে , অকুস্থলে কোনো তৃতীয় ব্যক্তি না থাকলেও , কোনো প্রটোকল স্বাক্ষর না করলেও , তিনি নিশ্চয়ই জিনিসটি আপনাকে ফেরত দেবেন । কৃষকদের আস্থা তাদের আবাসভূমির আওতায় অত্যন্ত কার্যকর ।

   গত বছর রুই আন শহরে কৃষক সমবায় সমিতি গঠনের পর সবসময় পুঁজির জন্যে উদ্বিগ্ন চু ইং তি তার কয়েকজন প্রতিবেশীর সংগে একটি গ্রুপ গঠন করেন । এ গ্রুপের যে কোনো সদস্যের পুঁজির দরকার পড়লে অন্য সদস্যরা যৌথভাবে তার জন্যে নিশ্চিতকরণের ব্যবস্থা করেন । এবাবে তিনি সময়মত ঋণ নিতে সক্ষম হন । চু ইং তি বলেছেন , গ্রামীণ সমবায় সমিতি সত্যি সত্যিই তাদের জন্যে উপকার বয়ে এনেছে । তিনি বলেন ,

    ঋণের উপকার খুব বেশি । যেমন এক বছর ক্রেডিট সংস্থা সাধারণত কয়েক মিলিয়ন ইউয়ান ঋণ দেয় । সুদের হিসাব করলে আমাদের গ্রামের কৃষকদের বেশ উপকার হচ্ছে । কৃষকরা সত্যিকারভাবে লাভবান হচ্ছেন ।

    কৃষক লুই সিং ছাইও স্থানীয় কৃষক সমবায় সমিতিতে যোগ দিয়েছেন । তিনি বলেন , এ সমিতি তাকে বিরাট সাহায্য দিয়েছে । তিনি বলেন ,

    অবশ্যই গ্রামীণ কৃষক সমবায় সমিতিতে যোগ দিতে হবে । বাড়িতে বেশি ঝাড়ু তৈরি করতে পারলে এবং নিম্ন সুদের ঋণ নিতে পারলে আমাদের কৃষকদের অনেক উপকার হবে ।

    সকলের জানা আছে , বাংলাদেশে ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুসের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক গরীবদের সহায়তাকে নিজের দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করলেও কোনোদিন তার লোকসান হয় নি । অনুরূপভাবে চীনের চে চিয়াং প্রদেশের রুই আন শহরের গ্রামীণ সমবায় ব্যাংক গ্রামীণ সমবায় সমিতির মাধ্যমে কৃষকদের ক্ষুদ্র ঋণ দেয়ার পর কৃষকরা তাদের কাছ থেকে ঋণ নিতে পেরেছেন এবং ব্যাংকটি নিজের আশংকা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে এবং নিজের মুনাফাও বাড়িয়েছে ।

    জানা গেছে , চীন সরকার এখন গ্রামাঞ্চলে আর্থিক সংস্কার চালিয়ে যাচ্ছে । এ সংস্কারের এক অংশ হিসেবে প্রথম কিস্তিতে চীন সরকার পরীক্ষা হিসেবে চে চিয়াং প্রদেশের রুই আন শহরে গ্রামীণ সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা করেছে । এ সংস্কার কৃষকদের মধ্যে সমাদর পাচ্ছে । অনেক বিশেষজ্ঞ ও পন্ডিতও এ সংস্কার সম্পর্কে তাদের প্রত্যাশা প্রকাশ করেছেন । চীনা গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রামাঞ্চলের সমস্যা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ওয়েন থিয়ে চুন বলেছেন , শরহ ও জেলা পর্যায়ে গ্রামীণ সমবায় সমিতি গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা । এ ক্ষেত্রে রুই আন সফল হয়েছে । অবস্থা পরিপক্ক হলে সারা দেশে তা জনপ্রিয় করে তোলা হবে ।