v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-07-06 17:18:41    
কানা মেয়ে ওয়াং স্যুয়েন ও তার পরিবার

cri
    দুটো চোখের দৃষ্টি হারানো বুড়ো মানুষ ওয়াং ছিছাইয়ের নাতনী ওয়াং স্যুয়েনের চোখও ভাল না । তার চোখের চিকিত্সার জন্য বুড়ো ওয়াং ছাছিছাই ও তার পরিবারের সবাই অক্লান্তভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে ।

    পেইচিং থেকে নানচিং পর্যন্ত ছোটো বড় শহরের রাস্তায় বা গলিতে প্রায়ইএই দৃশ্য দেখা যায় যে , চার সদস্য বিশিষ্ট একটি বিশেষ পরিবার গান পরিবেশন করছে । তারা গান পরিবেশনের মাধ্যমে টাকাপয়সা সংগ্রহ করে । চারজনের মধ্যে আছে ,৬ বছর বয়সী মেয়ে ওয়াং স্যুয়েন । ওয়াং স্যুয়েনের মামাতো নানী ফু ছুইইউয়ুন , দাদা ওয়াং ছিছাই এবং তার বাবা মানসিক প্রতিবন্ধী ওয়াং স্যুয়েওয়েন । ওয়াং স্যুয়েন ও তার পরিবার একটি ছোটো ভাড়া বাড়িতে থাকে ।

    প্রতিদিন সকালে পরিবারের সবাই কিছু বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বের হয় ।তাদের এই চমত্কার শিল্পী দলের মধ্যে দাদা ওয়াং ছিছাই চারজনের প্রধান অবলম্বন । মানসিক প্রতিবন্ধীবাবা ওয়াং স্যুয়েওয়েন চারজনের চোখ ।চোখের দুর্বল দৃষ্টির মামাতো নানী ও ওয়াং স্যুয়েন গানের শিল্পী । ওয়াং স্যুয়ের চোখের চিকিত্সা করার জন্য এই পরিবারটি নানচিং শহরে এসেছে । ওয়াং স্যুয়েনের বাড়ি চিয়াংসু প্রদেশের ইউয়ু ই জেলার একটি ছোটো পাহাড়ী গ্রামে । ওয়াং স্যুয়েনের দাদী একজন মানসিক প্রতিবন্ধী। সত্যিই "কষ্ট" শব্দ দিয়ে এই পরিবারের অবস্থা বর্ণনা করা যায় না ।

    দাদা ওয়াং ছিছাই বিশ বছর বয়সে বিয়ে করেন । তাঁর দুটি ছেলে একটি মেয়ে আছে । মেয়ের চোখ ভাল না । ওয়াং ছিছাই পালিত ছেলে হিসেবে বড় ছেলেকে নিজের বড়ভাইকে দিয়ে দিয়েছেন । বড় ছেলে ও মেয়ের বিয়ে হওয়ার পর ওয়াং ছিছাই ও তার স্ত্রী দুজনই তাদের মানসিক প্রতিবন্ধী ছোটো ছেলে ওয়াং স্যুয়েওয়েনেরে সঙ্গে বসবাস করেন ।

    ওয়াং স্যুয়েন ও তার পরিবার নানাচিং শহর ঘুরে ঘুরে গান পরিবেশন করে উপার্জন করে । কিন্তু ওয়াং স্যুয়েনের মা তাদের সঙ্গে ছিলেন না । তিনি নিজের গ্রামেও ছিলেন না । তাহলে তিনি কোথায় ?

    দাদা ওয়াং ছিছাইর প্রস্তাবে পরিবারের সবাই ওয়াং স্যুয়েনের চোখেরচিকিত্সার জন্য যাত্রা শুরু করে । কিন্তু তাদের পক্ষে কাজটা তত সহজ নয় । ২০০২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ওয়াং স্যুয়েনের মা মিয়াও ইয়েনসহ পরিবারের সবাই নানচিং শহরে আসে । ওয়াং স্যুয়েনের চোখে দুবার শল্যচিকিত্সা করা হল ।কিন্তু দুবারই শল্যচিকিত্সায় ওয়াং স্যুয়েনের চোখের দৃষ্টি উন্নত হয়নি । হাতে জমানো টাকাপয়সা সব শেষ হয়ে যায় । পরিবারের সবার দৈনদিন জীবনযাপনে অসুবিধা দেখা দেয় । এই অসুবিধাজনক পরিবারের সম্মুখে ওয়াং স্যুয়েনের মা আস্থা হারায় । ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি মেয়ে ওয়াং স্যুয়েনকে ছেড়ে চলে যান ।

    মিয়াও ইয়েন চলে যাওয়ার পর ওয়াং ছিছাই স্মরণ করেছেন , নিজের স্ত্রীর বোন ফু ছুইইউয়ুন যিনি আগে গণ মুক্তি ফৌজের শিল্পী দলে গান গেয়েছিলেন । যদি তিনি তাদের সাহায্য করতে আসতে পারেন এবং তাদের মধ্যে যোগ দেন তাহলে তাদের অবস্থা ভাল হবে । ফু ছুইইউয়ন রাজী হয়েছেন । গরিব ও ভাঙ্গা পরিবারটি প্রথমবারের মত বলিষ্ঠ সমর্থন পেয়েছে । ফু ছুইইউয়ন একদিকে ওয়াং স্যুয়েনের দেখাশোনা করতে পারেন , অন্যদিকে গান গাইতে পারেন এবং তিনি ওয়াং স্যুয়েনকে গান শেখাতেও পারেন । এই পরিবারে আসার পর তিনি ওয়াং স্যুয়েনের মা মিয়াও ইয়েনের দায়িত্বগ্রহণ করেন । তার আসায় ভেঙ্গে পড়াপ্রায় পরিবারটি হঠাত একটি বলিষ্ঠ স্তম্ভ পায় ।

    ওয়াং স্যুয়েনের চোখ ভাল না , তবে সে অত্যন্ত বুদ্ধিমতী মেয়ে । বাড়ির কাছে এক প্রাথমিক স্কুল , স্কুলে শহরে মজুরী করতে আসা কৃষকের ছেলেমেয়েরা পড়ে । ওয়াং ছিছাইয়ের বারবার অনুরোধে স্কুলের নেতৃবৃন্দরা ওয়াং স্যুয়েনকে গ্রহণ এবং স্কুলফি সহ নানা ফি মৌকুফ করতে রাজী হন । স্কুলে লেখাপড়া ছাড়াও ওয়াং স্যুয়েনকে শনিবার ও রবিবার ছুটির দিনে রাস্তায় বা গলিতে গান পরিবেশন করতে দেখা যায় ।

    ভাগ্য আবার ওয়াং স্যুয়েনের ওপরে হাজির হয় । নানচিং শহরের রেড ক্রসসোসাইটিরএকজন কর্মকর্তা রাস্তায় ওয়াং স্যুয়েন ও তার পরিবারকে দেখেছেন । "আলো" নামে একটি কর্মসূচীনানচিং চিকিত্সা বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু হাসপাতালে চালানো হচ্ছে । হাসপাতালটি বিনাখরচে চক্ষু রোগীদের চোখের ছানি চিকিত্সা করছে । তিনি ওয়াং স্যুয়নের জন্য হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করেন । হাসপাতালের বিশেষজ্ঞরা মনোযোগের সঙ্গে ওয়াং স্যুয়েনের চোখ পরীক্ষা করেন । পরীক্ষার ফলাফল ভাল না । জন্মগত চোখের ছানি ছাড়া ওয়াং স্যুয়েনের চোখের অনেক গুরুতর সমস্যা রয়েছে । সমস্যাগুলোর সামনে হাসপাতালের নেতৃবৃন্দরা অবশেষে একমত হয়েছেন যে, বিনাখরচে ওয়াং স্যুয়েনের জন্য শল্যচিকিত্সা করবেন ।

    শল্যচিকিত্সার ফলাফল অত্যন্ত সন্তোষজনক হয়েছে । চোখেবন্ধন করা ফিতা খুলে দেয়ার দিন ওয়াং স্যুয়েনের চোখের দৃষ্টি আগের ০.০২ থেকে ০.১৫তে উন্নীত হয়েছে। তিন দিন পর তার চোখের দৃষ্টি ০.২-এর উপরে উন্নীত হয়েছে । ডাক্তার বলেছেন , পরবর্তীকালে অনবরতভাবে চিকিত্সা করার পর ওয়াং স্যুয়েনের বয়স যখন দশ বারো বছর হবে তখন তার চোখের দৃষ্টি সাধারণ মানুষের মতো হতে পারবে । শল্যচিকিত্সার ফলাফলে ওয়াং স্যুয়েন ও তা পরিবারের সবাই উদ্বুদ্ধ হয়েছে ।

    ওয়াং স্যুয়েনের বাবা, ৩০ বছর বয়সের ওয়াং স্যুয়েওয়েনকে ছোটো বেলা থেকেই মানসিক প্রতিবন্ধী বলা হত । সবাইকে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওয়াং স্যুয়েওয়েন স্ত্রী মিয়াও ইয়েনের প্রতি কিছু কথা বলেছে যে , মিয়াও ইয়েন তুমি ফিরে এসো । শল্যচিকিত্সার পর মেয়ের চোখ আগের চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে । তুমি ফিরে এসো । আমি তোমার কথা শুনব । আমার ভুল হলে শুদ্ধ করব ।

    কিছু দিন আগে "নানচিং মনিং" পত্রিকার আশেপাশে আবাসিক এলাকায় গানের প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে কথাটা শুনে ওয়াং ছিছাই বন্ধুর মাধ্যমে নাম দিয়েছেন । প্রতিযোগিতার আয়োজকরা রাজী হবেন না ভয়ে তিনি নিজেই নাম দিতে সাহস করেননি । তিনি ভাবতে পারেননি যে, আয়োজকরা বিনাশর্তে তাদেরকে গ্রহণ করবেন । গানের প্রতিযোগিতায় ভালভাবে গান শোনাবে এবং নিজের গানের মাধ্যমে যে তাদের সাহায্য করেছে সেই সকলকে ধন্যবাদ জানাবে বলে ওয়াং ছিছাই ও তার পরিবারের সবাই আশা করে ।

    " কানা মেয়ে ওয়াং স্যুয়েন ও তার পরিবার" শিরোনামে গল্পটি শুনলেন । কন্যা জায়া জননী অনুষ্ঠান আজকের মতো এখানে শেষ হল । শোনার জন্য অশেষ ধন্যবাদ ।