ভারত ও পাকিস্তান বুধবার নয়াদিল্লীতে সদ্য সমাপ্ত স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক সম্পর্কে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে । বিবৃতিতে দু পক্ষ আগামী ১৪ থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে প্রতিপক্ষের আটক যাবতীয় জেলে এবং মেয়াদোত্তীর্ণ আসামীদের ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সন্ত্রাসবাদ ও আন্তসীমান্ত অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরো জোরদার করার কথা ব্যক্ত করেছে । বিশ্লেষকরা বলেছেন , বৈঠকে উপনীত মতৈক্যে পারস্পরিক আস্থা জোরদার হয়েছে এবং প্রতিফলিত হয়েছে যে , দু দেশের সম্পর্ক এখন স্থিতিশীলভাবে উন্নত হচ্ছে ।
এবারের স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক ছিল ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চতুর্থ দফা সার্বিক সংলাপের অংশ বিশেষ । এ বৈঠক ৩ থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত দুদিন ধরে চলার কথা ছিল । অথচ পাকিস্তানে লাল মশজিদে রক্তাক্ত সংঘর্ষ ঘটায় পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র সচিব কামাল শাহ তত্ক্ষানিকভাবে স্বদেশে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন । সুতরাং বৈঠক মাত্র একদিন চলে । তা সত্ত্বেও একদিনের বৈঠকে উভয় পক্ষ বেশ কয়েকটি বিষয়ে একমত হয়েছে এবং সময়মত যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে । যৌথ বিবৃতিতে উভয় পক্ষ আগামী ১৪ থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে প্রতিপক্ষের আটক যাবতীয় জেলে এবং মেয়াদোত্তীর্ণ আসামীদের ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে । ভারতের পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ , বর্তমানে পাকিস্তানের কারাগারে ৫ শ'রও বেশি ভারতীয় জেলে আটক রয়েছে এবং ভারতের কারাগারে আটক রয়েছে ৫০জন জেলেসহ ৫১৩জন পাকিস্তানী নাগরিক । এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হলে নিসন্দেহে প্রতিপক্ষের স্বাধীনতা দিবসের জন্যে তা হবে ভারত ও পাকিস্তানের অর্পণ করা উত্তম উপহার ।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয় , উভয় পক্ষ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসবাদের তীব্র ভাষায় নিন্দা করে এবং সন্ত্রাসী তত্পরতা দমনের জন্যে কার্যকর ও নিরন্তর ব্যবস্থা নেবে । যৌথ বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলা হয় , ভারতীয় কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো ও পাকিস্তান ফেডারেল তদন্ত ব্যুরো জনবল চোরাচালান , অবৈধ অভিবাসী ও জালিয়াতী মুদ্রা দমনের ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা জোরদার করবে । যৌথ বিবৃতিতে আরো বলা হয় , নতুন ভিসা চুক্তি নিয়ে আলোচনা ও যৌথভাবে মাদক দমনের ক্ষেত্রেও দু পক্ষ অগ্রগতি লাভ করেছে ।
বিশ্লেষকরা মনে করেন যে , পাক-ভারত স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যাযের বৈঠকের সাফল্যে আবারো প্রতিফলিত হয়েছে যে , ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক ক্রমে ক্রমেই উন্নত হচ্ছে । এ বছরের শুরু থেকে ভারত ও পাকিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়া প্রাথমিকভাবে সন্ত্রাসী হামলার দরুণ সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্ত হয় । দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কৌশলগত দিক থেকে দু দেশের সম্পর্কের কথা বিবেচনা করেছেন বলে দুই দেশের সম্পর্ক স্থিতিশীলভাবে উন্নত হচ্ছে । অন্যদিকে উভয় পক্ষ শান্তি প্রক্রিয়ার ব্যর্থতাজনিত পরিণতিও গভীরভাবে উপলব্ধি করেছে । ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এ বছর সংসদে বৈদেশিক নীতি ব্যাখ্যা করার সময় বলেছেন , ভারতের পক্ষে পাকিস্তানের সংগে দীর্ঘকালীন সুপ্রতিবেশীসূলভ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন । ভারত দৃঢ়ভাবে এ দিকে অগ্রসর হবে । তিনি মনে করেন , সংলাপের মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিদ্যমান সমস্ত লক্ষ্যণীয় সমস্যা সমাধান করা যাবে । পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফও বহুবার জোর দিয়ে বলেছেন , পাক-ভারত শান্তি অপ্রতিরোধ্য । তাছাড়া তিন বছররের উঠানামা শান্তি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সমঝোতা কিছুটা জোরদার হয়েছে । তাই দুই পক্ষ সন্ত্রাসী হামলা সম্পর্কে আগের চেয়ে অনেক সংযত হয়েছে ।
পাশাপাশি বিশ্লেষকরা লক্ষ্য করেছেন যে , পাক-ভারত সম্পর্কের কিছু উন্নতি হলেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাশ্মির সমস্যায় দু পক্ষের মধ্যে এখনো বিরাট মতভেদ রয়েছে । এ সমস্যা সমাধানের জন্যে আরো বেশি বিজ্ঞতা ও সময়ের দরকার । এ সমস্যায় অগ্রগতি হলেই কেবল দু দেশের সম্পর্কের মূল পরিবর্তন ঘটবে ।
|