১৯৯৭ সালে থাইল্যান্ড থেকে শুরু এশিয়ার ব্যাংকিং সমস্যা এশিয়া দেশগুলোর অর্থনীতির ওপর গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ১০ বছর পর ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ও অঞ্চলের অর্থনীতি ক্রমান্বয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে। চীন এবার ব্যাংকিং সমস্যায় কী ভূমিকা পালন করেছে? চীনের আধুনিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গবেষণালয়ের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক চিয়াংইয়ং সি আর আই'র সাংবাদিক চাং জুয়ানকে সাক্ষাত্কার দেয়ার সময় বলেছেন, চীন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের এবারের ব্যাংকিং সমস্যা মোকাবেলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। চীন একটি দায়িত্বশীল বৃহত্ দেশ হিসেবে তার ভাব মুর্তি তুলে ধরেছে। এখন শুনুন এ সম্পর্কিত একটি বিশেষ প্রতিবেদন।
চিয়াংইয়ং বলেছেন, ১৯৯৭ সালের ব্যাংকিং সমস্যার পর চীন রেনমিনবির মূল্য হ্রাস না করার নীতিতে অবিচল থাকে এবং ধারাবাহিকভাবে ইতিবাচক ব্যবস্থা নিয়ে সমস্যা মোকাবেলা করে। এরফলে চীন প্রতিবেশী দেশগুলোর আস্থা লাভে সক্ষম হয়। 'চীন রেনমিনবির হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পাশাপাশি ব্যাংকিং সমস্যার কারণে গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে যথাযথ সময়ে অর্থ সাহায্য প্রদান করে। এসব ব্যবস্থা ব্যাংকিং সমস্যার সম্প্রসারণ ও অবনতি প্রতিরোধ এবং ব্যাংকিং সমস্যার পর অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে কল্যাণকর ভূমিকা রেখেছে। এক্ষেত্রে চীন অনেক অবদান রেখেছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বাড়িয়েছে ও চীন বৃহত্ দেশ হিসেবে তার ভাবমূতিকে তুলে ধরেছে।'
তিনি মনে করেন, চীনের এসব ব্যবস্থা হংকংয়ের অর্থনীতির সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতাকে গুরুত্বপূর্ণভাবে নিশ্চিত করেছে এবং আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। তিনি বলেছেন, 'তখন আমরা হংকংয়ের অর্থনীতি পরিচালনা ব্যুরোর সঙ্গে থেকে দ্ব্যর্থহীনভাবে আর্থিক ক্ষেত্রের আন্তর্জাতিক চক্রান্তের মোকাবেলা করেছে। তখন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এর বিরোধীতা করা হয়। কিন্তু তা খুবই প্রয়োজনীয় ছিল তখন। এটি আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।'
তখন চীন প্রতিবেশী দেশগুলোকে সমস্যা নিরসনের সাহায্য দেয়ার জন্য রেনমিনবি মূল্য হ্রাস না করার নীতিতে অবিচল থাকে। এর জন্য এশিয়ার অনেক দেশ ধন্যবান জানায়। চিয়াংইয়ং মনে করেন, চীনের জন্য এমনি করা সহজ কথা ছিল না।। চীন প্রতিবেশী দেশগুলোর স্বার্থের কথা বিবেচনা করে এমন ব্যবস্থা নিয়েছে। চীনের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। তখন অর্থনীতিতে মন্ধা দেখা দিলো। '১৯৯৮ সালে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের ওপর অনেক চাপ পড়ে। তখন মুদ্রা-সংকোচনের সমস্যাও ছিল। অন্যদিকে মুদ্রা নীতির ফলে কিছু সৃষ্টি সমস্যা দেখা দিল। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, চীনের রেনমিনবির মূল্য হ্রাস করা উচিত। যদি রেনমিনবির মূল্য হ্রাস করতো, তাহলে চীনের এত বেশি চাপ পড়তোনা। রেনমিবির মূল হ্রাস না করায় চীনের অর্থনীতিতে গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।'
তিনি বলেছেন, চীন বিশ্বের অর্থনীতির স্থাতিশীলতা সুরক্ষা, প্রতিবেশী দেশগুলোর সমস্যা নিরসনের জন্য নিজের স্বার্থকে বিসর্জন দিতে প্রস্তুত থাকে। পাশাপাশি চিয়াংইয়ুংয়ের নিজের উদ্বেগও রয়েছে। তিনি বলেছেন, ১০ বছর আগে চীন ব্যাংকিং সমস্যার মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়। সেজন্য অনেকই মনে করেন, চীন যথেষ্ট শক্তিশালী ও চীন সমস্যা সমাধানে সক্ষম এবং চীন এখন আরো গুরুতর সমস্যার মোকাবেলা করতে পারে। আসলে এখনও চীনের অর্থনীতিতে কিছু সমস্যা রয়েছে। যেমন, চীনের সম্পত্তির ফটকা বাজী ক্রমান্বয়ে স্পষ্ট হচ্ছে। কিন্তু চীনের ব্যাংকিং বাজারের এ সমস্যা মোকাবেলার সামর্থ্য অনেকটা কম।
তিনি বলেছেন, চীনের উচিত ১০ বছর আগে এশীয় ব্যাংকিং সমস্যা থেকে অভিজ্ঞতা নেয়া। এ অভিজ্ঞতা হল ব্যাংকিং বাজারের উন্মুক্তকরণ মুশৃংখলভাবে এবং ধাপে ধাপে চালানো উচিত। তিনি বলেছেন, 'ব্যাংকিং বাজার সংক্রান্ত বাস্তব সংস্থা অবাধকরণের মাধ্যমে উন্মুক্ত করণকে করা উচিত। বাস্তব শিল্প সংস্থার কাঠামোর সমন্বয় করা উচিত। যাতে শিল্প কাঠামো ব্যাংকিং বাজারের ব্যাপক উন্মুক্ত মোকাবেলা করতে পারে। উন্মুক্ত করণের পর, ধারাবাহিক প্রস্তুতিও নেয়া উচিত। এরমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন বাস্তবায়ন, মুদ্রা সংশ্লিষ্ট নীতি মোকাবেলা, ব্যাংকিং বাজারে আরো বেশি স্বচ্ছতা বাস্তবায়ন ও একটি বাস্তব ভিত্তিক মোকাবেলা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।'
তিনি বলেছেন, নতুন অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে চীনের উচিত সাবধানে অর্থনীতির উন্নয়ন করা। চীন অব্যাহতভাবে দায়িত্বশীল বৃহত্ দেশের ভূমিকা পালন করবে এবং বিশ্বের অর্থনীতির উন্নয়নে জন্য অবদান রাখবে।
|