গত ১ জুলাই ছিল হংকংয়ে চীনের সার্বভৌমত্ব পুনপ্রতিষ্ঠার দশম বার্ষকী ।গত দশ বছরে অধিক থেকে অধিকতর সংখ্যক হংকংবাসী চীনের মূলভূভাগে কাজ করতে ও উন্নযনের সুযোগ অন্বেষণ করতে এসেছেন । তাদের উপস্থিতিতে মূলভূভাগ ও হংকংয়ের সংযোগ আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছে ।
মাদাম ফান হুই সিন হলেন পেইচিংয়ে নিযুক্ত হংকং বাণিজ্য উন্নয়ন ব্যুরোর কার্যালয়ের একজন কর্মচারী । ২০০৬ সালের বসন্তকালে হংকং বাণিজ্য উন্নয়ন ব্যুরো সদর দফতর তাকে পেইচিংয়ে পাঠায় । তিনি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পেইচিংয়ে কাজ করছেন । তিনি বলেছেন ,
আমি এই প্রথমবার দীর্ঘসময় ধরে হংকংয়ের বাইরে জীবনযাপন করছি । এক বছরের মধ্যে আমি বসন্ত , গ্রীষ্ম , শরত ও শীত - এ চার ঋতুতে দিন কাটিয়েছি । হংকংয়ের আবহাওয়ার সংগে এখানকার আবহাওয়া সম্পূর্ণই আলাদা । আমি আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়েছি । আমার বেশ মজা লাগে ।
মাদাম ফান বলেছেন , আবহাওয়ার ব্যবধান ছাড়া পেইচিংয়ে আসার পর তার প্রথম অভিজ্ঞতা হচ্ছে , হংকংয়ের চেয়ে পেইচিং অনেক বড় । তিনি বলেছেন ,
যখন আমি সবেমাত্র পেইচিংয়ে এসে পৌছলাম , তখন আমি একজন পথচারীকে জিজ্ঞেস করলাম , কিভাবে তুং ফাং চত্বরে যাওয়া যায় ? তিনি আমাকে বললেন , বেশি দূর নয় । আগামী চৌরাস্তায় তা পড়বে । হংকংয়ে একটি চৌরাস্তা থেকে অন্য একটি চৌরাস্তা খুব কাছেই । যেতে হলে মাত্র ৩ থেকে ৫ মিনিট লাগে । তবে পেইচিংয়ে এ চৌরাস্তায় যেতে আমার ২০ মিনিট লাগল । এটি আমার একটি অনন্য অভিজ্ঞতা । পেইচিং সত্যিই খুব বিশাল ।
মাদাম ফানের চোখে পেইচিং ও হংকংয়ের পার্থক্য অবশ্য এ দুটো ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয় । হংকংয়ে সকলের কাজ ও জীবনযাপনের ব্যস্ততা বেশি । অনেকে দিনে বেশি সময় করে কাজ করেন এবং সরকারী ছুটির দিনেও মাঝেমধ্যে ওভারটাইম করে থাকেন । অথচ পেইচিংয়ে কাজের ব্যস্ততা থাকলেও ছুটির পর আমাদের নিজেদের ব্যক্তিগত সময় বেশি পাই । এভাবে আমি অবসর পেয়ে ভিন্ন জীবন উপভোগ করতে পারি । তিনি বলেছেন ,
পেইচিং সত্যিই একটি সাংস্কৃতিক নগর । এখানে অনেক দেখার জিনিস আছে । তাই সপ্তাহান্তে আমি ৭৯৮র মত জায়গায় যেতে পছন্দ করি । আমি নানা ধরণের সাংস্কৃতিক জিনিস দেখতে চাই । আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে , এখানে বসবাস করে আমি বেশ কিছু ব্যক্তিগত অবকাশ পাচ্ছি । অতীতে হংকংয়ে যেসব সাংস্কৃতিক জিনিস উপেক্ষিত ছিল , এখানে এসে আমি সেসব জিনিস আবিষ্কার করতে পারি ।
মাদাম ফানের উল্লেখিত " ৭৯৮" হচ্ছে পেইচিংয়ের উত্তর-পূর্বাংশের ছাও ইয়াং এলাকায় অবস্থিত ৭৯৮ শিল্পকলা এলাকা । এটি ছিল গত শতাব্দির পঞ্চাশের দশকে প্রতিষ্ঠিত একটি ইলেক্ট্রোনিক কারখানা - ৭৯৮ নং কারখানা । পরে কারখানাটি পেইচিংয়ের উপকন্ঠে স্থানান্তর করা হয় । এ কারখানার কর্মশালা আদর্শ জার্মান স্থাপত্যরীতিসম্পন্ন। এশিয়ায় এটি কদাচিত দেখা যায় । তাই কর্মশালাটি সংরক্ষিত হয় । ক্রমেই অনেক শিল্পী এখানে তাদের শিল্পকলার কর্মকক্ষ খুলেন । এখন ৭৯৮ নং কারখানা বিভিন্ন ধরণের শিল্পকলার সমন্বয়ে ৭৯৮ শিল্পকলা এলাকায় পরিণত হয় । মাদাম ফান বলেন , এ রকম জায়গা হংকংয়ে মোটেই থাকার কথা নয় । কেবল পেইচিংয়ে চীনের শিল্পকলার কেন্দ্রের আমেজ অনুধাবন করা যায় ।
মাদাম ফান আমাদের সংবাদদাতাকে পেইচিংয়ে সবেমাত্র আসার সময়ের একটি মজার কথা বর্ণনা করেছেন । তিনি বলেন ,
পেইচিংয়ে আসার আগে পেইচিং সম্পর্কে আমার তেমন কোনো ধারণা ছিল না । তখন আমার মনে হতো , চীনের মূলভূভাগ হয়তো অনেক পেছনে পড়ে রয়েছে । তাই হংকং থেকে পেইচিংয়ে আসার সময় আমি অনেক দৈনন্দিন জিনিসপত্র সংগে নিয়ে এসেছি । তবে পেইচিংয়ে এসে দেখতে পেয়েছি , হংকংয়ে যেসব মার্কার পণ্য পাওয়া যায় , এখানেও সেগুলো পাওয়া যায় । বস্তুত এখানে আমার কোনো অসুবিধা নেই ।
হংকংয়ের তরুণ কাও ছি পিন এখন পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন । তার পাঠ্য বিষয় হচ্ছে বাজারে বিক্রয় । এখন তিনি তৃতীয় বর্ষে পড়েন । তিনি বলেছেন , এখন বিশ্ব চীনের উন্নয়নের সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছে । যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মূল ভূভাগে এসে এখানকার অবস্থা জেনে নিতে পারলে তা নিশ্চয়ই তার পড়ার বিষয়ের জন্যে উপকার হবে । তিনি বলেছেন ,
আমি হংকংয়ে বড় হয়ে উঠেছি । এখন আবার আমি মূলভূভাগে লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছি । আমার মনে হয় , এ রকম পটভূমি আমার ভবিষ্যত উন্নয়নে উপকার করবে ।
আগামী বছর কাও ছি পিন পেইচিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হবেন । তিনি আশা করেন যে , তিনি মূলভূভাগে কাজ করার সুযোগ পাবেন ।
বিভিন্ন কোম্পানির কর্মচারী ও ছাত্রছাত্রী ছাড়া মূলভূভাগে আরো কিছু হংকংবাসী খুব তত্পর রয়েছেন । তারা হলেন হংকংয়ের ব্যবসায়ী । মিস্টার চেং চি মিং হংকং চিন লি লাই গোষ্ঠীর প্রশাসনিক চেয়ারম্যান । গত শতাব্দির আশির দশকে এ গোষ্ঠী মূলভূভাগে বাজার খুলেছে । কাজেই মিস্টার চেং স্বচোখে মূলভূভাগের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে অবলোকন করেছেন । তিনি বলেছেন ,
বহু বছর ধরে সংস্কার ও উন্মুক্ততার পর চীনের দ্রুত উন্নতি হয়েছে । সারা পৃথিবীতে এটি সত্যিই একটি বিস্ময় ।
চিন লি লাই গোষ্ঠীর পণ্য মূলভূভাগে সবসময় সমাদর পাচ্ছে । বিশেষ করে পুরুষের পোষাক ও টাই ইতোমধ্যে উন্নত মানের পণ্যের নামান্তরে পরিণত হয়েছে । মিস্টার চেং বলেছেন , মূলভূভাগ হংকংয়ের ব্যবসায়ীদের জন্যে স্থিতিশীল পুঁজি বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে এবং তাদের জন্যে সুবিধাজনক নীতি চালু করেছে । তাই তিনি মূলভূভাগে তার পুঁজি বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবেন । তিনি বলেন ,
একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আমরা প্রধানত তিনটি দিক দেখি । প্রথমত তার নীতি ব্যবস্থা স্থিতিশীল হয় কি না । দ্বিতীয়ত মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় কি না । তৃতীয়ত কর্তৃপক্ষকে কর বেশি দেয়া হয় কি না । বস্তুত মূলভূভাগের পুঁজি বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে ।
|