অধ্যাপক সিয়ে নিং কাও হলেন চীনের বিখ্যাত পন্ডিত। তিনি চীনের ২০০টিরও বেশি বিখ্যাত স্থানগুলো পরিদর্শন করেছেন। তিনি প্রথমে প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের ওপর যৌথ গবেষণা শুরু করেন।
সিয়ে নিং কাও ১৯৩৪ সালে পূর্ব চীনের চেচিং প্রদেশের ওয়েন লিং শহরে জন্ম গ্রহন করেন। তার বাড়ি চীনের বিখ্যাত পর্যটন স্থান ইয়েন তাং শান থেকে বেশি দূরে নয়। ছোটবেলা থেকেই তিনি সব সময় ইয়েন তাং শানে বেড়াতে যেতেন। সেখানকার সুন্দর দৃশ্য দেখার পর সিয়ে নিং কাওয়ের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ভ্রমণের ধারণা গড়ে উঠেছে। তিনি বলেছেন:
"মাঝে মাঝেই আমি ইয়েন তাং শান পাহাড়কে আমার শিক্ষক হিসেবে মনে করতাম। ছোটবেলা থেকে তা আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। বড় হওয়ার পর আমি চিন্তা করতে শুরু করেছি যে, কিভাবে চীনের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করতে পারবো। ভূবিজ্ঞান শিখল বিভিন্ন জায়গা সম্পর্কে জানতে পারবো অনেক বেশি। তাই এ বিষয় নিয়ে পড়াশোনার ধারণা গড়ে উঠেছে।"
বিংশ শতাব্দীর ৫০এর দশকে সিয়ে নিং কাও পিকিং ইউনিভার্সিটির ভূবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৬৪ সালে মাস্টার ডিগ্রী নেয়ার পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। প্রথমে বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানের ওপর গবেষণা করা ছিল তার আগ্রহ, এখন তা এক রকম দায়িত্বে পরিণত হয়েছে।
১৯৮৪ সালে সিয়ে নিং কাও দশ জনেরও বেশি বিশেষজ্ঞদের একটি দল গঠন করে চীনের বিখ্যাত পাহাড় থাই শান প্রদর্শন ও গবেষণা শুরু করেন। এই প্রকল্পের ফলাফল ১৯৮৪ সালের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে প্রথম স্থান লাভ করেছে। এবং তার আরেকটি সুফল হলো ১৯৮৭ সালে থাই শান বিশ্বের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এরপর থেকে সিয়ে নিং কাও গবেষণার ফলাফল বাস্তবতায় ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরো বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করেন। তিনি বলেছেন:
"প্রথমে আমাদের গবেষণার লক্ষ্য বিশ্ব উত্তরাধিকারে অন্তর্ভুক্ত করা নয়। আমরা শুধু এইস্থানের মূল্যায়ন করতে চাই। থাইশানকে কিভাবে সুরক্ষা করা যায়, এবং তাকে কিভাবে ব্যবহার করা যায়, এসব নিয়ে আমরা বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরী করেছি।"
সিয়ে নিং কাও এখন পিকিং ইউনিভার্সিটির বিশ্ব উত্তরাধিকার গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান এবং সিনেরি পার্ক পরিষদের উপ-পরিচালক। অনেক বছর ধরে তিনি বিশ্বের উত্তরাধিকার সম্পর্কে গবেষণা চালিয়ে আসছেন এবং এই ক্ষেত্রে অনেক বই লিখেছেন। ৭৩ বছর বয়স্ক অধ্যাপক সিয়ে নিং কাও ইতোমধ্যেই বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করছেন। আমাদের সংবাদদাতার সাক্ষাত্কার নেয়ার সময় তিনি মাত্র পেইচিং-হাংচৌ খাল পরিদর্শন করেছিলেন। পেইচিং-হাংচৌ খালের ১৪০০ বছরের ইতিহাস রয়েছে। তা হলো প্রাচীনকালে উত্তর চীনের অর্থনৈতিক কেন্দ্র পেইচিং ও দক্ষিণ চীনের অর্থনৈতিক কেন্দ্র হাংচৌয়ের মধ্যে যোগাযোগের একটি প্রধান পদ্ধতি। এখনো তার ১৪৪২ কিলোমিটারের অংশ জাহাজ চলা বাকী।
১৯৮৫ সাল চীন "বিশ্বের সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক উত্তরাধিকার চুক্তি"তে যোগ দেয়ার পর থেকে চীনের ৩৩টি সাংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক স্থান এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই সংখ্যা বিশ্বের তৃতীয় স্থানে রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন সরকার উত্তরাধিকার সুরক্ষা ক্ষেত্রে অনেক কাজ করেছে, কিন্তু এখনো কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। যেমন পর্যটন সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহার । সিয়ে নিং কাও বলেছেন:
"সবাই উত্তরাধিকারের উপরে জ্ঞান জানে, দৃষ্টি রাখে এবং সুরক্ষার ধারণা গড়ে তুলে কেবল আমাদের বাচ্চারা এবং তাদের বাচ্চারা উপভোগ করতে পারবে। এর জন্য আমি চেষ্টা করছি।"
|