মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাবলিউ বুশ সফররত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মেইন অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত বুশ পরিবারের খামারবাড়ীতে বৈঠক করেছেন। তাঁরা পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোতে মার্কিন পরিকল্পনা মোতাবেক ক্ষেপণাস্ত্র-বিধ্বংসী সিস্টেম স্থাপন করা এবং ইরানের পরমাণু সমস্যাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মত বিনিময় করেছেন। তথ্য মাধ্যম মনে করে, এবারের শীর্ষ সম্মেলন হচ্ছে দু'জনের যার যার দায়িত্ব ত্যাগ করার আগে দিন দিন উত্তেজনামজয় হয়ে উঠা দু'দেশের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নের একমাত্র সুযোগ।
বৈঠকের পর পুতিন সংবাদদাতাদেরকে বলেন, তিনি মনে করেন, চেক প্রজাতন্ত্র এবং পোল্যাণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সিস্টেম স্থাপন করার দরকার নেই। কিন্তু ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সমস্যায় সংক্রান্ত মতভেদ সমধানের জন্যে যেসব ইউরোপীয় দেশ এ সমস্যার ব্যাপারে আগ্রহী সেসব দেশকে "রাশিয়া ও ন্যাটোর সহযোগিতার প্লাটফর্মের আওতায় আনার সম্ভবনা রয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়াকে একটি তথ্য বিনিময় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছেন। পুতিন বলেন, এভাবে রাশিয়া ও মার্কিন সম্পর্ক একটি নতুন উচ্চতায় উন্নীত হবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অংশগ্রহণকারী বুশ বলেন, পুতিনের নতুন প্রস্তাব খুব আন্তরিক। এটি হচ্ছে একটি গঠনমূলক কৌশলগত অভিযান। কিন্তু পাশাপাশি তিনি পোল্যাণ্ড এবং চেক প্রজাতন্ত্রে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সিস্টেম স্থাপন করার পরিকল্পনায় অবিচল রয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি প্রতিরোধের জন্য এ বছরের প্রথম দিকে পোল্যাণ্ডে এবং চেক প্রজাতন্ত্রে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সিস্টেম স্থাপন করার প্রস্তাব দিয়েছে। রাশিয়া এই পরিকল্পনার বিরোধিত করে। জুন মাসের জি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে আজারবাইজানে ক্ষেপণাস্ত্র-বিধ্বংসী সিস্টেম স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে আজারবাইজানে রুশ বাহিনীর রাডার কেন্দ্র ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে। বুশ সরকার পুতিনের এই প্রস্তাবের কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। দু'দেশের সর্ম্পকও অচলাবস্থায় রয়েছে। এবারে বুশ পুতিনকে মেইন অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত তাঁর পরিবারের খামার বাড়ীতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এটি দু'দেশের মতভেদ সমাধানের জন্যে বুশের একটি প্রচেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে।
ক্ষেপণাস্ত্র-বিধ্বংসী সিস্টেম ছাড়া, পুতিন বুশের সঙ্গে ইরানের পরমাণু সমস্যা নিয়েও আলোচনা করেছেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে দু'দেশ ঐকমত্যে পৌঁছাবে কিনা বুশ এ সম্পর্কে কিছু বলেননি। তিনি শুধু বলেন, ইরানের পরমাণু সমস্যায় দু'দেশের মতামত একই।
গত সপ্তাহের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া ও নিরাপত্তা পরিষদের অন্যান্য সদস্য দেশগুলোকে ইরানের ওপর আরো কঠোর শাস্তি আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে। এ প্রস্তাবে ইরানে প্রবেশ করা বা বাইরে যাওয়া তল্লাসি করার কথাও বলা হয়েছে। যাতে ভিতরে পরমাণু পণ্য বা অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র আছে কিনা তা পরীক্ষা করা যায়। তথ্যমাধ্যম থেকে জানা গেছে, মার্কিন কর্মকর্তারা ইতোমধ্যেই রাশিয়া ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অন্যান্য সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছে। কিন্তু নতুন শাস্তির ব্যাপারে একমত হয়েছে কিনা এদিন বুশ ও পুতিন স্পষ্টভাবে কিছু বলেননি।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা স্টিফেন হ্যাডলে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে এবং রাশিয়া বেসামরিক পরমাণু জ্বালানীসম্পদের সহযোগিতা সমস্যার ব্যাপারে একমত হয়েছে। এ সপ্তাহের মঙ্গলবারে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডেলিত্জা রাইস এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই লাভরোভের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করার কথা।
জনমত মনে করে, এবারের যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার শীর্ষ বৈঠকটি দু'দেশের স্নায়ু যুদ্ধের পর একটি সর্বনিম্ন পর্যায়ে আয়োজিত হয়েছে। পুতিন হচ্ছেন বুশের খামার বাড়ীতে আমন্ত্রণ জানানো সফরকারী প্রথম বিদেশী শীর্ষ নেতৃবৃন্দের একজন। বুশ বলেন, এদিনের বৈঠকটি ছিল দীর্ঘ ও কৌশলগত সংলাপের সমৃদ্ধ। কিন্তু মার্কিন তথ্য মাধ্যম মনে করে, এ বৈঠকে বাস্তবতাকে অস্বীকার করা যায় নি। এই বাস্তবতা হলো দু'দেশের উত্তেজনাপূর্ণ মতভেদ ও দ্বন্দ্ব, তা এবারের বৈঠক থেকেও বাদ যায় নি।
|