পেইচিং মহানগর একটি পুরনো রাজধানী । পেইচিংয়ের রাজধানী হওয়ার ইতিহাস সাড়ে আট শ' বছরেরও বেশি । শহরের সব স্থানে পুরাকীর্তি রয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ের সংরক্ষিত পুরাকীর্তির সংখ্যা দু হাজারের বেশি । দীর্ঘ দিন থাকার দরুন চীনের কিছু ঐতিহ্যিক স্থাপত্য নষ্ট হতে শুরু করে । এ সব পুরনো স্থাপত্যে আগুন ও বজ্রপাত প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেই । ২০০০ সালে পেইচিং পৌর সরকার পুরাকীর্তি মজবুত ও মেরামতের জন্য ৩৩ কোটি ইউয়ান বরাদ্দ করেছিল। এই ৩৩কোটি সরকারী বরাদ্দের সাহায্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগ বিভিন্ন অঞ্চল ও জেলা থেকে এবং সমাজের গন্যমান্য ব্যক্তিদের অনুদানসহ মোট ৫ বিলিয়ন অর্থ জোগাড় করেছে । এই অর্থ দিয়ে তিন বছরের মধ্যে পেইচিংয়ের সব পুরাকীর্তি ও পুরানিদর্শন মেরামত করা হয়েছে । চীনের পুরাকীর্তি সংরক্ষণ ইতিহাসে এত বড় আকারের মেরামত বিরল । তবে এবারের অলিম্পিক গেমসে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নেয়ার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রচারের জন্য অনেক সহায়ক হবে।

    সম্প্রতি, তৃতীয় সংবাদ বৈজ্ঞানিক ফোরাম পেইচিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা----সিনহুয়া বার্তা সংস্থার উপপ্রধান লু ওয়েই এক ভাষণে বলেছেন, প্রযুক্তি অলিম্পিক গেমসের তথ্য প্রচারের কাজে অনেক ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন:" ' বৈজ্ঞানিক অলিম্পিক' হচ্ছে ভিত্তি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি হচ্ছে অলিম্পিক সাফল্যের সঙ্গে শেষ হওয়ার সুনিশ্চয়তা। এ থেকে বুঝা যায় যে, ' পেইচিং অলিম্পিক গেমস----২০০৮' সংক্রান্ত প্রচারের কাজে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে"।

    সম্প্রতি চীনের বেসামরিক বিমান চলাচল ব্যুরো "বেসামরিক বিমানচলাচল পরিচালনা সংক্রান্ত অলিম্পিক গেমস সুরক্ষা কর্মসূচী" কার্যকর করেছে। এর ফলে ২০০৮ সালে পেইচিং অলিম্পিক গেমস চলাকালে আকাশের নিরাপত্তা সার্বিকভাবে সুরক্ষিত হয়েছে। কর্মসূচীতে বলা হয়েছে, পেইচিং, থিয়েনচিন , ছিনতাওসহ অলিম্পিক গেমস আয়োজনকারী শহরগুলোয় বিমান চলাচলের জন্যে বিমান সীমা, বিমান লাইন এবং উড্ডয়নের সীমিত অঞ্চল নির্ধারণ করে দেয়া হবে। পেইচিংসহ বিভিন্ন মহা নগরের মধ্যে জরুরী বিমান লাইন গড়ে তোলা হবে। এর পাশাপাশি অনুষ্ঠান আয়োজনকারী শহরগুলোতে টেলিযোগাযোগ , লক্ষ্যভেদী ব্যবস্থা,আবহাওয়া ব্যবস্থা এবং আকাশ পরিচালনা সংক্রান্ত পরিসেবা ব্যবস্থা স্বয়ংসম্পূর্ণ করা হবে।

    এবারের অলিম্পিক গেমসে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ইন্টারনেট প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার করা। চীনের ইন্টারনেট যোগযোগ লিমিটেড কোম্পানির অলিম্পিক টেলিযোগাযোগ বিভাগের উপপ্রধান চাং লিং বলেছেন:" এবারের অলিম্পিক গেমসে সংশ্লিষ্ট অলিম্পিক তথ্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিদেশে পাঠাতে সক্ষম হয়েছি। আমি চিন্তা করছি টেলিযোগাযোগ বিষয় নিয়ে বেশি নিরাপত্তা সুনিশ্চিয়তা দিতে পারবে।" তাছাড়া চীনের বেসামরিক ব্যুরো পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিমানের সমন্বিত ব্যবস্থা প্রণয়ন করবে। রাষ্ট্রীয় অলিম্পিক সাংগঠনিক কমিটির সঙ্গে বিনিময় জোরদার করবে। যাতে বিশেষ বিমান ও গুরুত্বপূর্ণ উড্ডয়নের কর্মসূচী যথাশীঘ্র নিশ্চিত করা যায়।

    পেইচিং অলিম্পিক গেমসের সাংগঠনিক কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ওয়াং ওয়েই সম্প্রতি সংবাদদাতার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় বলেছেন, চীন "পেইচিং অলিম্পিক গেমস ও প্রস্তুতিমূলক অবস্থায় বিদেশী সংবাদদাতাদের চীনে সাক্ষাত্কার নেয়া সংক্রান্ত নিয়নকানুন" প্রকাশ করেছে। এতে বিদেশী সংবাদদাতার সাক্ষাত্কার নেয়ার ওপর কোন বাধানিষেধ আরোপ করে নি। বিদেশী সংবাদদাতারা সাধারণ আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে সাক্ষাত্কার নিতে পারেন। অলিম্পিক গেমসের তথ্য কেন্দ্রে ২৪ ঘন্টা বিদেশী সংবাদদাতাদের জন্য শুল্ক সহায়তা ও স্থানীয় কর্মীদের নিয়োগ করাসহ নানা ক্ষেত্রের ধারাবাহিক পরিসেবা দেয়া হয়। যাতে সংবাদদাতাদের কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে।

    অলিম্পিক গেমসের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে ওয়াং ওয়েই বলেছেন, চীন অলিম্পিক গেমসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এথেন্স অলিম্পিক গেমসের নিয়োগকারী নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞকেও নিয়োগ করেছে এবং অলিম্পিক গেমসের জন্য হেলিকপ্টারসহ উন্নত মানের নিরাপত্তা সাজসরঞ্জাম ব্যবহার করবে।

    উল্লেখ্য, চীনের চুং সিং টেলিযোগাযোগ কোম্পানি হচ্ছে ২০০৪ সালে গ্রীস এথেন্স অলিম্পিক গেমসের ইন্টারনেট সংক্রান্ত সিস্টেমের স্থাপর্তি। এ কোম্পানির উপপ্রধান সু মিং বলেছেন " প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পেইচিং অলিম্পিক গেমস----২০০৮" সংক্রান্ত প্রচারের কাজে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার জন্য আমাদের উচিত আরও বেশি প্রচেষ্টা চালানো।"