ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন পার্টি----লেবার পার্টির নতুন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন২৭ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন । এ পর্যন্ত , ইউরোপের ফ্রান্স, জার্মানী এবং ব্রিটেনসহ তিনটি বড় দেশের নতুন নেতা নির্বাচিত হওয়ায় ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি নতুন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
প্রথমত , ব্রিটেনে দেখা যায় যে, দেশটির সাবেক প্রধান মন্ত্রী টনী ব্লেয়ারকে ইরাক যুদ্ধের কারণে তৃতীয় মেয়াদ সম্পন্ন না করে পদ ত্যাগ করতে হয় । এ থেকে বুঝা যায় যে, ব্রাউন নতুন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করার পর, ইরাক বিষয়ে কি ধরণের নীতি কার্যকর করা হবে। এই নীতি ব্রিটেনের নতুন সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট নীতি পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত। ব্রাউন প্রধান মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণকালে এক ভাষণে বলেছেন, নতুন সরকার ব্রিটেনের সংবিধান সংস্কার করার ব্যাপারে প্রচেষ্টা চালাবে। সংস্কার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত রয়েছে যুদ্ধ ও শান্তি সংক্রান্ত সমস্যায় সংসদের ক্ষমতা সম্প্রসারণ করা এবং জনগণকে সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্তে অধিকার প্রদান করা। সম্প্রতি ব্রাউন সংবাদ-মাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে ইরাক যুদ্ধ সম্পর্কে ভুল গোয়েন্দা তথ্য দেয়ায় ইরাকের কাছে পুনরায় ক্ষমা চেয়েছেন । এ থেকে বুঝা যায় যে, ব্লেয়ারের পরিনতি দেখার পর, ব্রাউন নিশ্চিতভাবে ইরাক যুদ্ধ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের ওপর বেশি গুরুত্ব দেবেন।এর মধ্যে রয়েছে ইরাক থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করা।
দ্বিতীয়ত, ফ্রান্স ও জার্মানীর ক্ষেত্র দেখা যায় যে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সার্কোজি এবং জার্মানীর চ্যান্লেলর এন্জেলা মার্কেল উভয়েই " মধ্যপন্থী" হিসেবে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের সুষ্ঠু উন্নয়নের মতামত পোষণ করেন। তবে " ইউরোপের ইঞ্জিনের" দু'টি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ফ্রান্স ও জার্মানীর নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হওয়ায় ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের সার্বিক উন্নয়নে একটি নতুন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
তৃতীয়ত, শুধু ফ্রান্সের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ২০০৩ সালে সাবেক শিরাক সরকার দৃঢ়ভাবে ইরাক যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধীতা করেছে । আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তার উচ্চ পর্যায়ের মূল্যায়ন করেছে। একই সঙ্গে ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এর ফলে দু'পক্ষের বেশ কিছু আন্তর্জাতিক বিষয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। এ ব্যাপারে ফ্রান্স জানে যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহত অবনতি হওয়া ফ্রান্সের জন্য কোন উপকার বলে আনবে না। তাই নতুন প্রেসিডেন্ট সার্কোজি স্পস্টভাবে বলেছেন যে, ফ্রান্সের উচিত কূটনীতির বিষয়টি সুরক্ষা করা এবং এর সঙ্গে সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট নীতির সম্বনয় করা। ফ্রান্সের ঐতিহ্যিক স্বাধীন কূটনীতির উত্তরাধিকারী হিসেবে সার্কোজি জোর দিয়ে বলেছেন, ফ্রান্স যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার ব্যাপারে আশাবাদি। তবে তা যুক্তরাষ্ট্রের অনুসরণ নয়। তবে ইরাক যুদ্ধ , ইরানের পরমাণু সমস্যা, ন্যাটোর সংস্কার এবং ইউরোপের প্রতিরক্ষা বিষয়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সমস্যা সমাধানে ফ্রান্স আরও নিজের দৃঢ় অভিমত অনুসরণ করবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
জার্মানীর চ্যান্লেলর মার্কেল দায়িত্ব গ্রহণের আগে বলেছেন, জার্মানী ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক একটি " সুষ্ঠু আস্থাবান ভিত্তিতে" উন্নয়ন করার জন্য সবচে' গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করা। কারণ আটলান্টিক মহাসাগরীয় অংশদারি সম্পর্ক জার্মানীর স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ । তিনি চ্যান্লেলরের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর, নতুন সরকার ইরাক যুদ্ধের সংশ্লিষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে । তবে এ ব্যাপারে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট সার্কোজির মতামতের মতো মার্কেলও জোর দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠভাবে উন্নয়ন করতে ইরাক সমস্যায় জার্মানীর মৌলিক মতামত পরিবর্তন করা হবে না, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন মানে রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সুষ্ঠু সম্পর্কের উন্নয়নে বন্ধ করা নয়।
|