আচ্ছা ছালাউদ্দিন, ছোংছিং শহরের রীতিনীতি এলাকা যাওয়ার পর আমরা এখন ছেংতু শহরের আরেকটি রীতিনীতি রাস্তা চিনলিতে যাবো ,কেমন ? আচ্ছা, চিনলি রাস্তা ছেংতু'র দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত। রাস্তার মোট দৈর্ঘ্য ৩৫০ মিটারেরও বেশি , রাস্তার স্থাপত্যে প্রাচীনকালের বৈশিষ্ট্য রয়েছে । দু'টি বড় লাল লণ্ঠন ঝুলানো তোরণে প্রবেশ করার পর পর্যটকরা একটি পাথর দিয়ে তৈরী প্রাচীনকালের রাস্তা দেখতে পাবেন । রাস্তার দুই পাশে প্রাচীনকালের স্থাপত্য ভবন রয়েছে । দোকান ও চা ভবন সবই দুই বা তিন তলা উচুঁ। কালো ইট এবং গভীর লাল কাঠের স্তম্ভ থেকে প্রাচীনকালের ছোট জেলার ছায়া উপলদ্ধি করা যায় । দোকানগুলো প্রধানত প্রাচীনকালের নানা রাজবংশের চীনা মাটির পাত্র ও কুটির শিল্প বিক্রি করে । চীনের তাইওয়ান প্রদেশ থেকে আসা পর্যটক ইয়াং মিং বলেছেন, আজ আমি চিনলিতে এসেছি, খুব ভালো লাগছে । এখানে প্রাচীনকালের অনেক জিনিস বিক্রি করা হয় এবং সুস্বাদু খাবার ও পাওয়া যায় অনেক ধরনের ছেংতু'র খাবার সত্যি খুবই সুস্বাদু ।
পর্যটকরা চিনলিতে পৌঁছার পর ঘনিষ্টভাবে স্থানীয় সংস্কৃতিকে উপভোগ করতে সক্ষম । রাস্তায় কুটির শিল্পীদের তৈরী মাটির পুতুল ও পেপার কাটিংসহ অনেক মজার মজার জিনিস পাওয়া যায় । তা দেখতে নিজেদের ছোটবেলার সুখী সময়কে মনে করিয়ে দেয় । সিছুয়ান প্রদেশের শুচিন নামক রেশম হচ্ছে স্থানীয় অঞ্চলের এক ধরনের বিশেষ রেশম দিয়ে তৈরী কাপড় । চিনলিতে এ কাপড় পাওয়া যায় । শুচিন দোকানে ঐতিহ্যিক কাপড় পড়া মেয়েরা পর্যটকদের জন্য রেশমী লেপ বোনানোর পদ্ধতিও পরিদর্শন করে ।
চিনলি রাস্তার মাঝখানে একটি খালি মাটির চিবি রয়েছে । সেখানে একটি প্রাচীনকালের অপেরা মঞ্চে নিয়মিতভাবে সিছুয়ান অপেরার বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন অনুষ্ঠান উপভোগ করা যায় । পর্যটকদের চিনলির ছায়া পুতুল দ্বারা অভিনীত নাটক বেশ ভালো লাগে । ছায়া পুতুল দ্বারা অভিনীত নাটক হল চীনের ঐতিহ্যিক শিল্পকলা,এর ইতিহাস এক হাজারেরও বেশি বছরের । শিল্পীদের নির্দিষ্টভাবে সঞ্চের পার্দার পেছনে সাজানো ও পরিচালনার পর ছোট ছায়া পুতুল প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠে । প্রতিদিন ছায়া পুতুল নাটক দোকানের সামনে নানা দেশ থেকে আসা পর্যটকদের ভীড় লেগে থাকে । বিশেষ করে বিদেশী পর্যটকদের জন্য চীনের ছায়া পুতুল অনেক মজার । অস্ট্রেলিয়ার দু'জন নারী পর্যটক ক্যাথেরিন জনস এবং রয় জ্যাক্সন আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন, আমি ক্যাথরিন এবং আমি রয় । আমরা দু'জন অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছি । আমাদের এ রাস্তায় পৌঁছাতে শুধু মাত্র ১০ মিনিট লেগেছে, কিন্তু আমরা এখানকার পরিবেশ পছন্দ করি । রাস্তার লাল লণ্ঠন খুবই সুন্দর, তা দেখতে মনে উদ্দীপনা জাগে । এ ছায়া পুতুল নাটক আমাদের বেশ ভাল লাগছে , তা খুবই মজার ।
ছায়া পুতুল নাটক ব্যাপক জনপ্রিয় হওয়ার কারণে চিনলিতে ছায়া পুতুল নাটক শিল্পী চৌ ই নোং গর্বিতভাবে বলেছেন, আমার অনেক বিদেশী বন্ধু আছে । গত মাসে ইতালি টেলিভিশনে তৈরী একটি অনুষ্ঠানে আমি তাদের ছায়া পুতুল তৈরী ও পরিবেশনা শিখিয়েছি । তারা স্বদেশে ফিরে যাওয়ার পর এসব শিল্পকলা তাদের জন্য অধিবাসীদের জানিয়েছে এবং তাদের চীনা সংস্কৃতি বোঝা সহজ হয়েছে । এর ফলে আরো বেশি বিদেশী চীনের সংস্কৃতি জানতে পারবে ।
চিনলি হল সিছুয়ানের আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং আধুনিক ব্যবসার সঙ্গে সংযুক্ত একটি চমত্কার চিহ্ন । ২০০৪ সালের অক্টোবর মাসে এ রাস্তা পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়ার পর হাজার হাজার পর্যটক এখানে এসেছেন । চিনলি অঞ্চলের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা ম্যাডাম চাং লি চুন বলেছেন, এ রাস্তার সংস্কৃতি হল প্রাচীনকালে চীনের ইতিহাসের একটি চিহ্ন । ছেংতু হল একটি ঐতিহাসিক শহর । পুরনোদিনের ছেংতুর অধিবাসীদের বাসভবনের স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন এবং সিছুয়ানের রীতিনীতি দেখানোর জন্য আমরা এ রাস্তা মেরামত করেছি । নতুন রাস্তা খুলে দেয়ার পর তা বিভিন্ন অঞ্চলের লোকদের সিছুয়ানের ইতিহাস ও রীতিনীতি জানার জন্য সুযোগ এনে দিয়েছে ।
|