রাশিয়া-নেটো পরিষদের রাষ্ট্রদূত পর্যায়ের সম্মেলন ২৬ জুন মস্কোয় অনুষ্ঠিত হয়েছে। দু'পক্ষ ইউরোপে ক্ষেপণাস্ত্র বিরোধী ব্যবস্থা এবং ইউরোপে সাধারণ সামরিক চুক্তি (সিএফই ট্রিটি)সহ বিভিন্ন নিরাপত্তা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে। তবে কোনো সাফল্য অর্জিত হয় নি।
ইউরোপের সাধারণ সামরিক চুক্তি ১৯৯০ সালে স্বাক্ষরিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর ওয়ার্শ জোট এবং নেটো ইউরোপে নিরস্ত্রীকরণের প্রথম চুক্তি স্বাক্ষর করে। ওয়ার্শ জোট ও সোভিয়েট ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর ইউরোপের নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা ১৯৯৯ সালে সিএফই ট্রিটির সংশোধিত চুক্তি গ্রহণ করে। ২০০৪ সালে রাশিয়া এই চুক্তি অনুমোদন করে। এ পর্যন্ত নেটোর সকল সদস্য দেশ এই চুক্তি অনুমোদন করে নি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নেটো পূর্বমুখী সম্প্রসারণের প্রক্রিয়া দ্রুততর করছে। পূর্ব ইউরোপের কিছু দেশও নেটোয় প্রবেশ করেছে। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পোল্যান্ড ও চেক রিপাবলিকে ক্ষেপণাস্ত্র বিরোধী ব্যবস্থা মোতায়েন করতে চায়। এটি রাশিয়াকে গুরুতর চাপের সম্মুখীন করেছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ইউনিয়ন মেসেজে বলেছেন, ওয়ার্শ জোটের সাবেক সদস্য দেশগুলোর নেটোর সদস্য হওয়ার পরিস্থিতিতে এবং নতুন ভৌগোলিক রাজনীতির কারণে রাশিয়া সিএফই ট্রিটির কার্যকরীতা বন্ধ করতে চায়। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরোভ এবারে অনুষ্ঠিত রাশিয়া-নেটো পরিষদের রাষ্ট্রদূত পর্যায়ের সম্মেলনে বলেছেন, সিএফই ট্রিটি ইউরোপের নিরাপত্তার ভিত্তি এবং এটি বহুপক্ষীয় চুক্তি। তবে বর্তমানে শুধু রাশিয়া এই চুক্তি অনুসরণ করছে। তিনি বলেন, ১৯৯৯ সালে "সিএফই ট্রিটির সংশোধিত চুক্তি" গৃহিত হবার পর নেটোর সকল সদস্য দেশ এই চুক্তি অনুমোদন করে নি। এমনকি নেটোর কিছু সদস্য দেশ এই চুক্তি অনুমোদন না করে রাশিয়াকে চাপ দিতে নিজের সামরিক শক্তি সুরক্ষার রাজনৈতিক ঘুটি হিসেবে ব্যবহার করতে চায়।
এবারের রাশিয়া-নেটো পরিষদের রাষ্ট্রদূত পর্যায়ের সম্মেলনে নেটোর মহাসচিব জাপ ডে হুপ স্কেফেরও এই বিষয়ে কোনো ছাড় দেন নি। তিনি বলেছেন, বর্তমানে নেটো ও রাশিয়া এই বিষয়ে একমত হয় নি। তবে দু'পক্ষের সংলাপ অব্যাহতভাবে চলবে। নেটো মনে করে, সিএফই ট্রিটির সংশোধিত চুক্তি অনুযায়ী জর্জিয়া ও মালদোভা থেকে রাশিয়ার সৈন্য প্রত্যাহারের ইস্তান্বুল চুক্তির সঙ্গে বাস্তবায়িত হবে।
উল্লেখ্য, ইউরোপে ক্ষেপণাস্ত্র বিরোধী ব্যবস্থা মোতায়েন নিয়ে দু'পক্ষের অভিমত আলাদা আলাদা। জাপ ডে হুপ স্কেফের বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া আজারবাইজানের কাবালা রাডার স্টেশন অভিন্নভাবে ব্যবহার করেছে। তবে এই কার্যক্রম কিছু দেশের জন্য হুমকি দূর করতে পারে নি।
যদিও দু'পক্ষের অভিমত ভিন্ন, তবে বর্তমানে তারা আলোচনা করতে চায়। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ২৬ জুন বলেছেন, রাশিয়া ও নেটোর সংলাপ বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা ত্বরান্বিত করবে। তিনি মনে করেন, রাশিয়া ও নেটোর মধ্যে সমস্যা থাকা খুব স্বাভাবিক। তিনি বিশ্বাস করেন, দু'পক্ষ সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে পারে। জাপ ডে হুপ স্কেফেরও বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে স্বাভাবিক , বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা ছাড়া অন্য কোনো বাছাই নেই। দু'পক্ষ আশা করে, আলোচনার মাধ্যমে মতভেদের সমাধান হবে।
|