চীনের বিখ্যাত জল রং শিল্পী লিউ ছিং হো সম্প্রতি চীনের চারুকলা একাডেমিতে তার একক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন। এই প্রদর্শনীর নাম হলো "পাশ থেকে দেখা"।
প্রদর্শনীর ছবি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। শিল্পী লিউ ছিং হো চীনের ঐতিহ্যিক জল রংএর পদ্ধতি ব্যবহার করে আধুনিককালের শহুরে মানুষের ধ্যানধারনাকে পরিবর্তিত আকারে প্রকাশ করার চেষ্টা করেন। হলের মাঝখানে একটি কাল বন্দর তৈরী করা হয়, সেখান থেকে দর্শকরা সামনের "লিন ছি" অর্থাত সুইমিং পুলের পাশে দাঁড়িয়ে দেখে। এই ছবিতে এক জন মহিল সুইমিং পুলের মধ্যে সাঁতার কাটছে। পাশে দাঁড়িয়ে অনেকেই তাকে দেখছে। মজার ব্যাপার হলো দর্শকদের বন্দর থেকে এই ছবি দেখার সময় মনে হবে যেন ওই মহিলাকে দেখা বহু লোকের মধ্যে তিনিও একজন।
চীনের চারুকলা একাডেমির পরিচালক ফান ডি আন বলেন, এই প্রদর্শনীতে মানুষের মধ্যকার পার্থক্য ও দূরত্বকে তুলে ধরা হয়েছে। আধুনিক জীবনযাত্রায় প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যেই, বাস্তবতা ও স্বপ্নের ভেতর সব সময় একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব থাকে। এক জন দর্শক বলেছেন:
"খুব ভাল লেগেছে। শিল্পকর্মগুলো আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। ছবিগুলো আঁকার পদ্ধতি এবং ছবির বিষয় সব আমার কাছে খুব বৈশিষ্টময় মনে হয়েছে।"
চীনের বিখ্যাত চারুকলা বিষয়ক সমালোকেক ইন শুয়াং সি বলেছেন:
"লিউ ছিং হো'র চিত্রকর্মের মধ্য দিয়ে আধুনিককালের মানুষের জটিল মানসিক অবস্থার কথা ভালভাবে প্রকাশ পেয়েছে। তিনি একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে প্রকাশ করেননি এবং কাউকে কিছু শেখানোর ইচ্ছাও তার নেই। এই দিকটাকে অনেকে চিন্তাও করতে পারেনি। আমি মনে করি লিউ ছিং হো'র ছবিতে তার নিজস্ব বৈশিষ্ট আছে।"
চীনের ঐতিহ্যিক জল রং এ ছবি আঁকার পদ্ধতির ইতিহাস ১০০০ বছরেরও বেশি। চীনের জল রংএর চীনের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু আধুনিক জীবনকে জল রংএর মাধ্যমে প্রকাশ করা সহজ নয়। চীনের কয়েক জন শিল্পী তাদের তৈল চিত্রে জল রংকে মিশ্রনের চেষ্টা করেছেন। লিউ ছিং হো এর মধ্যে একজন। তিনি বলেছেন:
"জল রংএর আধুনিকায়নে আমি ঐতিহ্যিক জল রংএর পদ্ধতির কথা চিন্তা করি এবং তাকে আধুনিককালের বস্তু ও মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করি। এর পাশাপাশি শিল্পীর নিজের বৈশিষ্টতাকেও বজায় রাখতে হবে।"
লিউ ছিন হোর মতে চীনের শিল্পীদের ছবি আঁকার সময় বাস্তব বিষয় নিয়ে ছবি আঁকা উচিত। তিনি ৩০ বছর ধরে জল রংএর মাধ্যমে ছবি আকছেন। তার ছবির চরিত্র দেখে বোঝা যায় যে তারা আধুনিকালের মানুষ। তাদের অভিন্ন কিছু প্রকাশ ভঙ্গি আছে। লিউ চিং হোর চিত্র কলা ছবি আধুনিক চারুকলার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
দর্শকরা তার ছবি থেকে এক রকম গভীর অনুভূতি বোধ করতে পারে। কেউ বলে, তার ছবিতে লিউ ছিং হো'র নিজের ব্যক্তিগত আনন্দময় মূহুর্তগুলো ফুটে উঠেছে। এই আনন্দের মুহুর্তগুলো তেমন উত্তেজনাপূর্ণ নয়। দর্শকরা তার শিল্পকর্ম দেখার পর তা বুঝতে পারে ও আনন্দ অনুভব করে।
এ ব্যাপারে লিউ ছিং হো বলেন, ঐতিহ্যিক জল রংএর ভেতর দিয়ে শহরের জীবনধারার বর্ণনা করা খুব কঠিন। শুধু চীনের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে চারুকলার মাধ্যমে তা প্রকাশ করা সম্ভব। তিনি বলেছেন:
"নিজের অনুভূতি পুরোপুরি প্রকাশ করতে চাইলে ইতিহাসের ভিত্তিতে আধুনিককালের বৈশিষ্টতা প্রকাশের চেষ্টা করতে হবে। এটা খুব কঠিন কাজ । কিন্তু একটি কঠিন ধারণা বাস্তবায়ন করা আমার জন্য সব সময়ই একটি বোমাঞ্চকর ব্যাপার।"
|