কোরীয় উপদ্বীপের পরমাণু সমস্যা সংক্রান্ত ছ'পক্ষীয় বৈঠকের মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতা ও মার্কিন সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টোফার হিল ২১ জুন আকস্মিক উত্তর কোরিয়া সফর করেন। তিনি গত পাঁচ বছরে পিয়ংইয়ং সফরকারী প্রথম মার্কিন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা। এতে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সরাসরি বৈঠক না করার অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র কোরীয় উপদ্বীপের পরমাণু সমস্যা সমাধান দ্রুততর করবে।
হিল ১৮ জুন চীন সফর শেষ করার পর দক্ষিণ কোরিয়া সফর করেন। এরপর তিনি দু'দিনব্যাপী জাপান সফর করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী তাঁর ২০ জুন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি আকস্মিক পরিকল্পনা পরিবর্তন করে ২১ জুন সকালে পুনরায় দক্ষিণ কোরিয়ায় ফিরে যান। এদিন দুপুরেই তিনি উত্তর কোরিয়ায় যান।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাডেলেইন কে. আল্ব্রাইটকে উত্তর কোরিয়া সফরে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু জর্জ বুশ প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কঠোর নীতি গ্রহণ ধরেন। হিলের আগে বুশ সরকারের কোনো উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা উত্তর কোরিয়া সফর করেন নি। মার্কিন গণ-মাধ্যমের খবরে প্রকাশ, হিল কোরীয় উপদ্বীপের পরমাণু সমস্যা সংক্রান্ত ছ'পক্ষীয় বৈঠকের মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতার দায়িত্ব গ্রহণ পর উত্তর কোরিয়া সফরের চেষ্টা করতে থাকেন। তিনি মনে করেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে আরো গভীরভাবে উত্তর কোরিয় সরকারের ধারণা বুঝতে পারবেন। এটি ছ'পক্ষীয় বৈঠকের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে কল্যাণকর হবে। তিনি পিয়ংইয়ংয়ে বলেছেন, অব্যাহতভাবে ছ'পক্ষীয় বৈঠক চালানো এবং সময় সাশ্রয় করা উচিত।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারী কোরীয় উপদ্বীপের পরমাণু সমস্যা সংক্রান্ত ছ'পক্ষীয় বৈঠকে 'যৌথ বিবৃতির প্রথম তত্পরতা বাস্তবায়নের' যৌথ দলিলপত্র সম্পাদিত হয়। এটি হল '১৩ ফেব্রুয়ারীর যৌথ দলিলপত্র'। এতে উত্তর কোরিয়া ইয়ংবিয়ংয়ে পারমাণবিক স্থাপনা বন্ধ করা, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার প্রতিনিধিদেরকে উত্তর কোরিয়ায় পুনরায় ফিরে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো ও বিভিন্ন পক্ষের উত্তর কোরিয়াকে জরুরী জ্বলানী সাহায্য দেয়ার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। কিন্তু ম্যাকাও'র ব্যাংকো ডেল্টা এশিয়ার উত্তর কোরিয়ায় ২.৫ কোটি মার্কিন ডলারের পুঁজি হস্তান্তরে সমস্যা দেখা দেয়ায় এই যৌথ দলিলপত্রের বাস্তবায়ন পিছিয়ে যায়।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের যৌথ প্রচেষ্টায় ১৮ জুন রাশিয়ায় উত্তর কোরিয়ার দূতাবাস ঘোষণা করে যে, ম্যাকাও'র ব্যাংকো ডেল্টা এশিয়ায় উত্তর কোরিয়ার পুঁজি হস্তান্তর করা হয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এরআগে বলেছে, যখন পুঁজির সমস্যা সমাধান করা হবে, তখন উত্তর কোরিয়া ছ'পক্ষীয় বৈঠকে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী ইয়ংবিয়ংয়ে পারমাণবিক স্থাপনা বন্ধ করবে, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার প্রতিনিধি দলকে উত্তর কোরিয়া সফরের আমন্ত্রণ জানাবে ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গভীরভাবে পারমাণবিক স্থাপনা বন্ধের পরের ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করবে।
আন্তর্জাতিক আণবিক সংস্থা সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে, উত্তর কোরিয়া সরকারের আমন্ত্রণে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল ২৫ জুন উত্তর কোরিয়া সফর করবে। দু'পক্ষ ইয়ংবিয়ংয়ে পারমাণবিক স্থাপনা বন্ধ, পরীক্ষা ও তত্ত্বাবধানের বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে।
হিলের আকস্মিক উত্তর কোরিয়া সফর সম্বন্ধে মার্কিন গণ মাধ্যম বিশ্লেষন করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কোরীয় পরমাণু সমস্যা সমাধানে দ্রুতচেষ্টার কারণ হল যুক্তরাষ্ট্র এখন অনেক কূটনৈতিক সমস্যার সম্মূখীন এবং এর সমাধান করতে চায়। এসব সমস্যার মধ্যে ইরাক ও ইরানের সমস্যা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কিন্তু এ দু'টি সমস্যার অগ্রগতি লাভের সম্ভাবনা কম। এ পরিস্থিতিতে বুশ সরকার মার্কিন জনগণের কাছে প্রমাণ করতে চায় যে, তাদের কমপক্ষে একটি হুমকি দূর করা গেছে পারবেন। এটি হবে কোরীয় উপদ্বীপের পরমাণু সমস্যা। হিল এ পরিস্থিতিতে উত্তর কোরিয়া সফর করছেন।
খবরে প্রকাশ, হিল আগামী মাসের প্রথম দিকে ছ'পক্ষীয় বৈঠক পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, যদি উত্তর কোরিয়া পরমাণু পরিকল্পনার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে, তাহলে মার্কিন সরকার এ বছরের শেষ দিকের আগে পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে সম্পর্কের স্বাভাবিকায়ন বাস্তবায়ন করবে। তিনি আরো বলেছেন, দু'দেশের সম্পর্ক এ বছরের মধ্যে স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা আছে এবং উত্তর কোরিয়ার তত্পরতা বিস্তারিত সময় নির্ধারণ করবে। কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করেন, যদিও উত্তর কোরিয়ার পুঁজি সমস্যার সমাধান করা হয়েছে ও পরমাণু অস্ত্র ত্যাগের বাস্তব পর্যায়ে উঠে এসেছে। কিন্তু শুধু যে উত্তর কোরিয়া পরমাণু তত্পরতা বন্ধ করলে যুক্তরাষ্ট্র নমনীয় দৃশ্টিভংগী পোষণ করবে কিনা তা কোরীয় উপদ্বীপের পরমাণু সমস্যা সমাধানের বিষয়টি নির্ধারণ করবে।
|