২০০৪ সালের বসন্ত উত্সবের একদিন , চিয়াংসু প্রদেশের থোংচৌ শহরের মিছিয়াও গ্রামের ইউয়ান মেইরোং রাতের রান্না করছিলেন, হঠাত টেলিফোনের রিং হল । ফোন এসেছে নিজের সন্তান সুন হাওয়ের পুলিশবাহিনী থেকে । তার একমাত্র ছেলে সুনহাও সিছুয়ান প্রদেশে পুলিশবাহিনীতে কাজ করে। ফোনে বলা হয়েছে, বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু হয়নি । তবে তাদের ছেলে সুনহাও এক আছাড় খেয়ে সামান্য আহত হয়েছে । সম্ভব হলে তাঁরা তাকে একবার দেখতে আসতে পারেন । সুনহাও-এর কি হল?
টেলিফোন রেখে ইউয়ান মেইরোং ভাবলেন , নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ কিছু হয়েছে । যদি ছেলে শুধু একবার আছাড় খায় তাহলে সেনাবাহিনী বিশেষভাবে তাকে টেলিফোন করত না এবং তাকে সিছুয়ান প্রদেশে একবার যেতে বলত না ।
দ্বিতীয় দিন সকাল ইউয়ান মেইরোং ও তার স্বামী সুন চিনচিয়ে তাড়াহুড়া করে ছেলের কাছে রওয়ানা হন । এসে তাঁরা ছেলেকে দেখেননি । পুলিশবাহিনীর নেতৃবৃন্দগণ তাদেরকে দেখতে এসেছেন এবং তাদের বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ কিছু হয়নি। কাল আমরা সুনহাওকে দেখতে যাব । সুন হাও এখন হাসপাতালে । সুনহাওয়ের বাবা মা যেন কিছু অনুভব করেছেনঃ ব্যাপারটা তেমন সহজ নয় ।
দ্বিতীয় দিন সকালে তাঁরা অস্থির মন নিয়ে পুলিশবাহিনীর নেতৃবৃন্দগণের সঙ্গে হাসপাতালে যান । এ সময় পুলিশবাহিনীর নেতৃবৃন্দগণ তাদেরকে জানান, এক মেয়েকে রক্ষার জন্য সুনহাও মারা যান । ছেলের হঠাত মারা যাওয়ায় সুনহাও-র বাবা মার অত্যন্ত দুঃখ ও বেদনা লাগে । অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দিন যখন দুই বুড়ো মানুষ কান্নাকাটি করছিলেন, হঠাত এক অপরিচিত মেয়ে তাদের সামনে উবু হয়ে মাটিতে মাথা রেখে তিনবার সালাম দেয় এবং তাদেরকে বলল, এখন আপনারাই আমার বাবা মা । সামনের এই অপরিচিত মেয়ে দেখে সুন হাওয়ের বাবা মা বিস্মিত হন । মেয়েটি কে ?কেন সে উবু হয়ে আমাদের সালাম দেয় ?
তাদের প্রশ্নের জবাবে মেয়েটি কয়েক দিন আগের দুর্ঘটনার কথা স্মরণ করতে শুরু করল । মেয়েটির নাম থাং না । বসন্ত উত্সবের এক দিন বাবা গাড়ি চালিয়ে পরিবারপরিজনদের নিয়ে বাইরে যান । হঠাত এক দুর্ঘটনা হল । মোড় নেয়ার সময় এক বাসের সঙ্গে ধাক্কা লাগায় পরিবারের সবাই গাড়ির সঙ্গে ১০ মিটার গভীর খাদে পড়ে যায় । তখন বাঁধের পানির তাপমাত্রা ছিল শুন্যের নিচে দশ-বারো ডিগ্রিসেন্টিগ্রেড । ঠিক এ সময় সুন হাও পুলিশবাহিনীর রান্না ঘরে বাসন-কোসনপরিস্কার করছিলেন । গাড়ির ধাক্কা লাগার ভীষণ আওয়াজ শুনে সুন হাও বুঝতে পারেন , গাড়ি দুর্ঘটনা হয়েছে । তিনি ডাকাডাকি করে ঘটনাস্থলে দৌড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন এবং দ্বিধাগ্রস্ত না হয়ে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন । সুন হাও একজন পুরুষকে উদ্ধার করেন । তিনি দ্বিতীয় লোককে উদ্ধার করতে আবার পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন । কিন্তু পানির তাপমাত্রা অতি নিচু হওয়ার কারণে সুন হাও ধীরেধীরে পানিতে ডুবে যান । পুলিশবাহিনীর নেতৃবৃন্দের পরিচালনায় গাড়ি ও নিহতদের লাশ উদ্ধারকরা হল । গাড়ির দুর্ঘটনায় থাং না ও তার বোন থাং ইয়ালান ছাড়া পানিতে ডুবে যাওয়া সব লোক মারা যায় ।সুন হাও থাং না'র বাবাকে উদ্ধার করেছেন , কিন্তু এম্বুল্যান্সদেরিতে পৌঁছুলে তিনি মারা যান । ১৯ বছর বয়সী থাংনা ৪জন পরিবারপরিজনকে হারিয়েছেন । তার বাবা মাকে উদ্ধার করার জন্য পুলিশবাহিনীর একজন সৈনিক প্রাণ হারান কথাটা শুনে থাং না বিস্মিত হয় ।
নিজের পরিবারপরিজনকে উদ্ধারের জন্য সুন হাও নিজের জীবন দান করলেন এবং তার বাবা মাকে দেখাশোনা করে এমন লোক আর নেই কথাটা ভেবে থাং না ও তার বোন থাং ইয়ালান সুন হাওয়ের বাবা মাকে নিজের বাবা মা হিসেবে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয় । সুন হাওয়ের বাবা মা ভাবেন, আমাদের সন্তান আর নেই । এ বোন দুজন আমাদের সন্তান হতে ইচ্ছুক , আমরা তাদেরকে নিজের আপন মেয়ে হিসেবে গ্রহণ করতে পারি ।
দুর্ঘটার সব কাজ সম্পন্ন করার পর থাং না ও থাং ইয়ালান সিছুয়ান প্রদেশ থেকে হাজার মাইল দূরের চিয়াং সু প্রদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন । মেয়ে দুটোর আগমনে সুন হাওয়ের বাবা মা খুব খুশি হলেন । তারা সুন হাওকে যে ভালবাসা দিতেন সেই ভালবাসা থাং না ও থাং ইয়ালানকে দেন ।
বোন দুজনের এক পরিবার প্রয়োজন এবং বুড়োবুড়ির সন্তানের দেখাশোনা দরকার বলে এই বিশেষ পরিবার প্রতি দিন আনন্দের পরিবেশে ভরপুর । কিছু দিন পর থাংনার ছেলে বন্ধু মা ইউয়েনলিন সিছুয়ান থেকে চিয়াংসুতে আসে । সুন হাওয়ের বাবা মা তার সঙ্গেওনিজের ছেলের মতো ব্যবহার করেন । কিন্তু হঠাত এক দিন এই নতুন পরিবারে কিছু সমস্যা দেখা দেয় ।
থোংচো শহরের ডাক বিভাগ থাং নার গল্প শুনে তাকে এক কাজ দিতে চায় । কিন্তু প্রশিক্ষণ নিতে ৩০০০ ইউয়ান লাগবে । কোথা থেকে এত বেশী টাকা পয়সা ধার নিতে পারবে ? নতুন বাবা মার কাছে বেশি টাকা নেই কথাটা ভেবে থাং না ছেলে বন্ধু মা ইউয়ানলিকে টাকা ধার নেয়ার কথা বলল এবং শিগ্গিরই ছেলেবন্ধুর বাবা মার কাছ থেকে এই টাকা পেল । ব্যাপারটা জেনে সুন হাওয়ের মা থাংনাকে টাকা দিতে চান । কিন্তু থাং না নিতে চায় না । কারণ সে জানে, বুড়িমার টাকা সহজে সংগ্রহ করা হয়নি । সে এবং মা ইউয়ানলিন দুজনের আগমন তাদের নতুন পরিবারের ওপর ভারী বোঝা বয়ে এনেছে । আশেপাশে নানা কথাও হচ্ছে ।এজন্য মা ইউয়ানলিনের সঙ্গে তার প্রায় ঝগড়া হয় ।এমন কি প্রেমিক প্রেমিকা দুজন ছাড়াছড়ির কথাও বলেছে । থাংনা ছেলে বন্ধুকে হারাতে চায়না এবং নতুন বাবা মাকেও হারাতে চায় না । মা ইউয়ানলিন ছাড়াছাড়ি বেছে নিয়েছে এবং সিছুয়ান ফেরার টিকিট কিনেছে ।
মা মেয়ের মনের দুঃখ ও অসুবিধা জেনেছেন । কিন্তু থাং না মাকে বলল, আমি তার সঙ্গে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি । আমি কখনো আপনাকে ত্যাগ করব না ।
আনন্দের ব্যাপার হল যে, যখন থাং না ছেলে বন্ধুকে ছেড়ে নতুন পরিবারে নতুন বাবা মার কাছে লেগে থাকার সিদ্ধান্ত নেয় তখন রেলস্টেশনে অনেক সময় ধরে ইতস্ততঃ করা ছেলে বন্ধু মা ইউয়ানলিন জিনিসপত্র নিয়ে ফিরে এসেছে । সে বলে, নিজের মেয়ে বন্ধু এবং উপকারী লোকের বাবা মার সম্মুখীন হয়ে সে কোনো মতেই চলে যেতে চায় না । এই পরিবারে আসার সময় যে কথা দিয়েছিল সে সেই কথা পরিত্যাগ করবে না । এই গল্পের এক ভাল পরিনাম হল । নতুন পরিবারের আনন্দের জীবনযাপন শুরু হয় ।
|