এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অর্থ, বাণিজ্য ও জাহাজ পরিবহন কেন্দ্র হিসেবে হংকংয়ের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিশেষ করে গত দশ বছরে অর্থাত্ চীনের কোলে ফিরে আসার পর সবর্দাই বিশ্বের দৃষ্টির আকর্ষণ করে আসছে। গত দশ বছরে হংকং কিভাবে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছে? বর্তমানে হংকংয়ের অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন? তার ভবিষ্যত উন্নয়নের দিক কোথায়? এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আমাদের সংবাদদাতা হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের অর্থ বিভাগের পরিচালক থাং ইয়াং নিয়েনের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন।
থাং ইয়াং নিয়েন সংবাদদাতাকে বলেছেন, ১৯৯৭ সালে হংকং স্বদেশের কোলে ফিরে আসার পর কেন্দ্রীয় সরকারের যথাসাধ্য সমর্থন , হংকংবাসীদের অভিন্ন প্রয়াস এবং ১৩০ কোটি স্বদেশবাসীর সাহায্যের মাধ্যমে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হংকংয়ের অর্থনীতির সার্বিক পুনরুদ্ধার হয়েছে। তিনি বলেছেন, "গত তিন বছর হংকংয়ের অর্থনীতির গড়পরতা বৃদ্ধির হার ৭.৬ শতাংশ। একটি পরিপক্ক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার জন্য এই বৃদ্ধির হার পাওয়া সহজ নয়। ২০০৩ সালের আগস্ট মাসে আমি অর্থ বিভাগের পরিচালক হওয়ার সময় হংকংয়ের কর্মচ্যুতের হার ৮.৬ শতাংশ ছিল। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যা অনুযায়ী, বর্তমান হংকংয়ের কর্মচ্যুতের হার ৪.৩ শতাংশ। এটা হচ্ছে গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন রেকর্ড। বুঝা যায়, হংকংয়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে লক্ষণীয় অগ্রগতি হয়েছে।"
কিন্তু গত দশ বছরে হংকং অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। এর মধ্যে সর্বাধিক চ্যালেঞ্জ ছিল এশিয়ার আর্থিক সংকট। থাং ইয়াং নিয়েন মনে করেন, অবশেষে হংকং কঠিন অবস্থা অতিক্রম করার অভিজ্ঞতা লাভ করেছে, এক দিকে, বিশেষ প্রশাসনিক আঞ্চলিক সরকার হংকংবাসী ও সরকারের কাজকর্মের ওপর আস্থাবান, অন্য দিকে, ব্যাপকভাবে বিভিন্ন মহলের ব্যক্তিদের কাছ থেকে পরামর্শ সংগ্রহ করার ভিত্তিতে বিশেষ প্রশাসনিক আঞ্চলিক সরকার বাস্তব বাজেট প্রণয়ন করেছে এবং আর্থিক বাজার স্থিতিশীল করেছে।
মিঃ থাং বিশেষ করে হংকংকে কেন্দ্রীয় সরকারের সমর্থনের কথা উল্লেখ করেছেন। ২০০৩ সালের জুন মাসে সার্সের প্রকোপ মাত্র চলে যাওয়ার পর হংকংয়ের অর্থনীতি বড় সমস্যার সম্মুখীন হয়। কেন্দ্রীয় সরকার হংকং বিশেষ প্রশাসনিক আঞ্চলিক সরকারের সঙ্গে "মূলভূভাগ ও হংকংয়ের মধ্যে আরো ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত দলিল" স্বাক্ষর করেছে। এ থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, মূলভূভাগ এবং হংকং ও ম্যাকাওয়ের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিনিময় ও সহযোগিতা এক নতুন ঐতিহাসিক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। এ প্রসঙ্গে থাং ইয়াং নিয়েন বলেছেন, " কেন্দ্রীয় সরকার আর হংকংয়ের মধ্যে স্বাক্ষরিত "মূলভূভাগ ও হংকংয়ের মধ্যে আরো ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত দলিল" এর মাধ্যমে মূলভূভাগের পর্যটকদের হংকংয়ে আসা ও ভ্রমণ এবং পরস্পরের অবাধ বাণিজ্য ত্বরান্বিত হয়েছে।"
থাং ইয়াং নিয়েন মনে করেন, কেন্দ্রীয় সরকারের ভবিষ্যতে হংকং উন্নয়নের পাশাপাশি গোটা দেশের উন্নয়নের কথাও বিবেচনা করে নিজের অবদান রাখা উচিত। তিনি বলেছেন, "ভবিষ্যতে আমাদেরও স্বদেশের সংস্কার ও উন্মুক্ততার জন্য অবদান রাখা উচিত। ভবিষ্যতে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হচ্ছে পরিসেবা শিল্প, বিশেষ করে আর্থিক পরিসেবা ক্ষেত্র। এখন আমরা হংকংয়ের অর্থ বাজার ও মূলভূভাগের অর্থ বাজারের মধ্যে পারস্পরিক উপকারিতা ও সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রস্তাব করছি। এমন সম্পর্কের ভিত্তিতে আমরা পরস্পরকে সুযোগ-সুবিধা দেয়া ও সকলের কল্যাণ লাভ করার ভূমিকা পালন করবো।"
মিঃ থাং আরো বলেছেন, হংকংয়ের অর্থনীতির টেকসই উন্নয়ন বজায় রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য হংকংয়ের আরো কিছু সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করা দরকার। যেমন বয়োবৃদ্ধি সমস্যা, চিকিত্সার অর্থ সংগ্রহ, শিক্ষা ক্ষেত্রের সংস্কার ইত্যাদি। এক দিকে , হংকংয়ের আরো ভালোভাবে স্বদেশের সঙ্গে সহযোগিতার কথা বিবেচনা করতে হবে। অন্য দিকে, হংকংয়ের বিশ্ব-মুখী প্রাধান্য কাজে লাগিয়ে আরো ভালোভাবে মূলভূভাগের শ্রেষ্ঠ সামর্থ্যবান ব্যক্তি নিয়োগ করে উভয়ের জয়লাভ পরিস্থিতি বাস্তবায়ন করতে হবে।
|