মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ গত মংগলবার হোয়াইট হাউসে সফররত ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্টের সংগে সাক্ষাত করেছেন । ২০০৬ সালের মে মাসে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর এটি ওলমার্টের তৃতীয় যুক্তরাষ্ট্র সফর । সম্প্রতি ফিলিস্তিনের পরিস্থিতির যে সর্বশেষ পরিবর্তন ঘটেছে , সে অবস্থার প্রেক্ষাপটে উভয় পক্ষের এবারের বৈঠকে ফিলিস্তিন-ইসরাইল সমস্যা প্রাধান্য পেয়েছে । বৈঠকে দু পক্ষ বলেছে , তারা ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও নতুন গঠিত জরুরী সরকারকে সমর্থন করে এবং ফিলিস্তিন-ইসরাইল শান্তি প্রক্রিয়া আবার শুরু করার জন্যে প্রচেষ্টা চালাবে ।
সম্প্রতি গাজা অঞ্চলে হামাস ও আল ফাতাহের জংগীদের মধ্যে বর্বরোচিত সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করেছে । ফলে ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় । শেষ পর্যন্ত ১৪ জুন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট আব্বাস হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার ঐক্য সরকারের প্রধানমনন্ত্রীর পদ অপসারণের কথা ঘোষণা করেন এবং সাবেক ঐক্য সরকারের অর্থমন্ত্রী সালাম ফায়াদকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেন এবং তাকে জরুরী সরকার গঠনের দায়িত্ব দেন । ১৭ জুন ফিলিস্তিনের জরুরী সরকার শপথ গ্রহণ করে । এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের নেতাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে ।
এবারের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের নেতারা স্পষ্ট ভাষায় আব্বাস ও নতুন গঠিত জরুরী সরকারকে তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছেন ।
প্রথমে দু দেশের নেতারা আবারো আব্বাসের প্রতি তাদের সমর্থনের কথা ঘোষণা করেন । বৈঠকের আগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বুশ ও ওলমার্ট মিলিত কন্ঠে বলেছেন , ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট আব্বাস হচ্ছেন ফিলিস্তিনের একমাত্র বৈধ নেতা । তারা আশা করেন যে , আব্বাস ও জরুরী সরকারের প্রধানমন্ত্রী ফায়াদ হাতে হাত মিলিয়ে ফিলিস্তিনী জনগণকে অসুবিধাজনক অবস্থা থেকে মুক্ত করতে পারবেন । ওলমার্ট বলেন , তিনি আব্বাসের সংগে সহযোগিতা চালাতে এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি সত্যিকার সুযোগ দিতে প্রস্তুত রয়েছেন ।
তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের নেতারা নতুন গঠিত জরুরী সরকারের প্রতিও তাদের সমর্থনের কথা ব্যক্ত করেন । বৈঠকে বুশ বলেন , যুক্তরাষ্ট্র আশা করে যে , নতুন সরকারের অবস্থান মজবুত হবে, যাতে সে ফিলিস্তিনী জনগণকে অসুবিধাজনক অবস্থা থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয় । এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিত্সা রাইস বলেছেন , যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বাতিল করবে এবং ফিলিস্তিনের জরুরী সরকারকে প্রত্যক্ষ সাহায্য আবার শুরু করবে । বৈঠকে ওলমার্টও বলেছেন , তিনি ফিলিস্তিনের জরুরী সরকারকে সমর্থন করেন ।
আব্বাস ও তার সরকারকে সমর্থন দেয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল আবারো হামাসের প্রতি তাদের অনমনীয় মনোভাব প্রকাশ করে । বুশ নিন্দা করে বলেন , হামাসই গাজার সহিংস তত্পরতা উস্কে দিয়েছে । ফিলিস্তিনের বর্তমান পরিস্থিতির জন্যে হামাসকেই দায়ী হতে হবে ।
এবারের বৈঠকে বুশ ও ওলমার্ট ফিলিস্তিন-ইসরাইল শান্তি আলোচনা আবার শুরু করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন । তারা মনে করেন যে , ফিলিস্তিনের নতুন সরকারের গঠন দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থা থাকা ফিলিস্তিন-ইসরাইল শান্তি আলোচনা আবার শুরু করার জন্যে সুযোগ দিয়েছে । অথচ আপাতত এ শান্তি আলোচনা আবার শুরু করা বেশ কিছু অসুবিধার সম্মুখীণ হচ্ছে ।
প্রথমত যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের উপর যথেষ্ট চাপ প্রয়োগ করতে পারবে কি না । যুক্তরাষ্ট্র আশা করে যে , যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম তীরকে প্রাধান্য দেয়ার নতুন নীতির সংগে সমন্বয় করার জন্যে ইসরাইল ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে ।
দ্বিতীয়ত ওলমার্ট আব্বাসের সংগে মেলামেশা করার ইচ্ছা প্রকাশের পাশাপাশি শান্তি আলোচনা আবার শুরু করার পূর্বশর্তও উত্থাপন করেছেন । এতে দু পক্ষের শান্তি আলোচনা কঠিন হয়ে পড়বে ।
|