উত্তর পশ্চিম চীনের ছিংহাই প্রদেশে হান , তিব্বতী , হুই , থু , সারা ও মঙ্গোলীয়সহ বেশ কয়েকটি সংখ্যালঘু জাতি বসবাস করে । এই অঞ্চলের বিকাশের কাজে নিয়োজিত হওয়ার পাশাপাশি তারা স্থানীয় ও সংখ্যালঘু জাতির স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সংস্কৃতিও সৃষ্টি করেছে । এর মধ্যে সংখ্যালঘু জাতির কিছু সংখ্যক অসাধারণ হস্তশিল্প পণ্য ও এই সব পণ্য তৈরীর কৌশল এখনো প্রচলিত রয়েছে । আজ এই অনুষ্ঠানে এই প্রদেশের কয়েকটি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হস্তশিল্প দ্রব্য সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলছি আমি…
মাখন দিয়ে তৈরী হস্তশিল্প পণ্য , সূচীকর্ম ও তিব্বতী চিত্রাঙ্কন ছিংহাই প্রদেশের তিনটি প্রসিদ্ধ স্থানীয় হস্তশিল্প পণ্য হিসেবে অভিহিত ।
মাখন দিয়ে তৈরী বৌদ্ধ মূর্তি , ব্যক্তি , পাহাড় ও নদ-নদী , দর্শনীয় স্থান , পশু - পাখি এবং ফুল ও গাছপালাকে ছিংহাই'র বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হস্তশিল্প পণ্য বলে গণ্য করা হয় । জানা গেছে , স্থানীয় ধর্মীয় রীতি-নীতি অনুযায়ী , ছিংহাইয়ে বসবাসকারী তিব্বতী জাতির ধর্মাবলম্বীরা মন্দিরে মাখন তাদের নিবেদনের অংশ হিসেবে দিয়ে থাকেন । এই সব মাখন মন্দিরের প্রদীপ জ্বালান আর সন্ন্যাসীদের খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় । এ ছাড়াও যে সব মাখন বাকী থাকে , সেগুলি নানা রঙের খনিজ পদার্থের সঙ্গে মিশিয়ে বৈচিত্র্যময় হস্তশিল্প পণ্য তৈরী করার কাজে ব্যবহার করা হয় । এই সব জিনিস যাতে না গলে , সেজন্য সেগুলি শীতকালে বানানো হয় । সুতরাং মাখন দিয়ে তৈরী হস্তশিল্প প্রস্তুত করতে হলে মৌসুম ও কৌশলের দিক থেকে একটি কড়াকড়ি ব্যবস্থা নিতে হয় ।
ছিংহাই প্রদেশের সূচীকর্মও এক ধরনের স্থানীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হস্তশিল্প পণ্য । বৌদ্ধ মূর্তি , ব্যক্তি , ফুল , পাখি ও পশুসহ বিবিধ জিনিস বানানোর জন্য রঙ-বেরঙের রেশমী কাপড় লাগে । এই ধরনের হস্তশিল্প পণ্যের ভিতরে সাধারণতঃ ভেড়ার লোম বা তুলো ঢুকিয়ে দেয়া হয় । সূচীকর্মের মাধ্যমে যে হস্তশিল্প পণ্য তৈরী করা হয় , তা স্ফুর্তিপূর্ণ ও জীবন্ত হয়ে উঠে । ছিংহাইয়ের সূচীকর্মের ডিজাইন মনোরম ও প্রাণবন্ত । এ সব পণ্য থেকে বৌদ্ধ ধর্ম বিষয়ক গল্প ও ধর্মীয় ক্রিয়াকর্ম সম্পর্কে জানা যায় । শত শত বছর ধরে এই কৌশল উত্তরাধিকার সূত্রে গ্রহণ করার ফলে সূচীকর্ম ও চিত্রাঙ্কন কৌশল জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত রয়েছে । শীতকালে যখন কৃষিকর্ম কম , তখন স্থানীয় নারীরা এই ধরনের হস্তশিল্প পণ্য সৃষ্টিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ।
ছিংহাই প্রদেশের হোয়াং চুং জেলার লুশার থানার জিয়াও ইং চ্যু একজন গ্রাম্য নারী । তিনি মায়ের কাছ থেকে সূচীকর্ম শিখে নিয়েছেন । স্থানীয় হস্তশিল্প পণ্যের বাজারে সূচীকর্ম খুব জনপ্রিয় । তা দেখে তিনি কৃষিকর্ম ছেড়ে দেন এবং স্বামীর সঙ্গে থানায় একটি দোকান খুলেন । তিনি ব্যবসা শুরু করেছেন । যখন সংবাদদাতা তার সাক্ষাত্কার নিলেন , ঠিক তখনই তিনি একটি সূচীকর্ম বানালেন । তিনি সংবাদদাতাকে বলেন , সূচীকর্মের নিজিসের ব্যবসা করার ফলে তিনি বছরে ১০ হাজার ইউয়ান আয় করেন ।
তিনি নিজের ব্যবসার ওপর আশাবাদী । পরে তার ব্যবসা আরো ভাল হবে । তিনি বলেন , আয় বেশি হলে তিনি তার ব্যবসা আরো সম্প্রসারিত করবেন এবং আরো বেশি শ্রমিক নিয়োগ করবেন ।
হোয়াং চুয়াং জেলায় জিয়াও ইং চ্যু'র মতো আরো বেশি লোক সংখ্যালঘু জাতির হস্তশিল্প পণ্য তৈরীর কাজে নিয়োজিত রয়েছেন । এ পর্যন্ত হোয়াং চুয়াং জেলায় মোট ছ' শো জন এই ধরনের হস্তশিল্প পণ্য তৈরী ও ব্যবসায় তত্পর । সপ্তম শতকে থাংখা নামক তিব্বতী জাতির এক ধরনের চিত্রাঙ্কন শিল্প ছিল । এতে সংখ্যালঘু জাতি ও ধর্মের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও আচার ব্যবহার তুলে ধরা হয়েছে । থাং খা নামে চিত্রাঙ্কন তৈরী করার জন্য যে রঙ ব্যবহার করা হয় , তা কোন দিন নষ্ট হবে না । তিব্বতীরা তাকে ঐশ্বর্য বলে মনে করেন । থাং খা এখন সাধারণ মানুষের বাসায়ও সাজানো হয় । এটা এক ধরনের জনপ্রিয় উপহারও বলে অভিহিত করা হয় ।
ছিংহাই প্রদেশের রাজধানী সিনিন শহরের তিব্বতী অধিবাসী দাওয়া ও তার স্ত্রী 6থাং খার বাণিজ্যিক ভবিষ্যত্- সম্ভাবনা লক্ষ্য করেছেন । থাং খা তৈরী করার জন্য তারা ছিং হাই হুজু থু জাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল থেকে শিল্পীদের আমন্ত্রণ জানান । ফলে তাদের ব্যবসা এখন খুব ভাল হয়েছে । দাওয়া ও তার স্ত্রী এই হস্তশিল্প পণ্য তৈরীর ওপর পুরো আশাবাদী । তিনি বলেছেন ,
এই সব হস্তশিল্প পণ্য সংখ্যালঘু জাতির মধ্যে খুব জনপ্রিয় । বাইরের অন্যান্য জাতির মধ্যে এই সব জিনিস জনপ্রিয় করে তোলার জন্য তাদের অনেক বেশি কাজ করতে হবে । সুতরাং সংখ্যালঘু জাতির হস্তশিল্প পণ্য বিকশিত করার ব্যাপক ভবিষ্যত -সম্ভাবনা রয়েছে ।
দাওয়া ও তার স্ত্রী থাং খা তৈরীর ঐতিহ্য বজায় রাখার ভিত্তিতে বর্তমান যুগের বৈশিষ্ট্যকেও তুলে ধরার কথা বিবেচনা করছেন । ছিংহাই প্রদেশের সংখ্যালঘু জাতির হস্তশিল্প পণ্য সম্প্রসারিত এবং তা উত্তরাধিকার সূত্রে গ্রহণ করার জন্য তারা কাঠের ওপর খোদাই করা খোদানো থাং খা ও আধুনিক তিব্বতী আসবাব পত্র তৈরী শুরু করলেন ।
বড় বোন আন ছুন সিউ ও ছোট বোন আন ছুন লান ছিংহাই প্রদেশের দাথুং হুই জাতি স্বায়ত্তশাসিত জেলার থু জাতির । কারখানার উত্পাদন ও ফলপ্রসূতার অবনতি হওয়ার কারণে দুই বোন বেকার হয়ে যান । অর্ধ বছর আগে দু'জনের উদ্যোগে আবারও জেলা শহরে সংখ্যালঘু জাতির হস্তশিল্প পণ্য তৈরীর একটি ছোট কারখানা গড়ে তুলেছেন । কারখানায় যে রকম থাং খা তৈরী করা হয় , তা বাজারে খুব জনপ্রিয় । এই ধরনের থাং খার ডিজাইন দেখতে প্রাচীন এবং চকচকে । এই ধরনের থাং খা ক্রেতাদের খুব আকর্ষণ করেছে । এ প্রসঙ্গে ছোট বোন আন ছুন লান বলেন ,
তা বিপুল পরিমাণে কেনার জন্য তারা ব্যবসায়ীদের বহু অর্ডার পেয়েছেন । তারা যেগুলি চেয়েছেন , তার মধ্যে বৌদ্ধ মূর্তি ও শাক্যমুনিসহ বিভিন্ন জনপ্রিয় হস্তশিল্প পণ্য রয়েছে ।
ছিংহাই প্রদেশে অধিক থেকে অধিকতর লোক সংখ্যালঘু জাতির হস্তশিল্প পণ্যের ব্যবসায় নিয়োজিত হচ্ছেন । স্থানীয় সরকার সক্রিয়ভাবে হস্তশিল্প পণ্য প্রস্তুত শিল্পীদের প্রশিক্ষণের কাজ শুরু করেছে । হোয়াং চুং জেলায় থাং খা ও সূচীকর্ম সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ কোর্স ইতোমধ্যেই চালু হয়েছে । প্রতি কোর্সে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা সত্তর আশি জনে দাঁড়িয়েছে ।
|