v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-06-15 21:05:16    
যে আমাকে ভালবাসতো এবং আমি যাকে ভালবাসতাম সে লোক মরে গেছে

cri
    যে কেউই তার মূল্যবান জিনিস হারালে তার দুঃখ লাগবে । কেউ তার আদরের লোক হারালে তার শুধু দুঃখ লাগবে না সে দুঃখে কাতর হয়ে যাবে যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না । সাংহাই ও সিআন শহরে দুটি পরিবার আছে । এ দু্পরিবারে শুধু মা ও মেয়ে আছে । শ্রেষ্ঠ মেয়ে দুটি নিজের মাকে খুব ভালবাসে ও শ্রদ্ধা করে । কিন্তু একদিন মেয়ে দুটি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় । নিজের মেয়ে মারা যাওয়ার পর মা তাদের সেই সেই উষ্ণ ও দুঃখের স্মৃতি কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন কি ?

    মেয়ে মারা যাওয়ার পর সাংহাই শহরের মাদাম হু মেয়ের সব কিছু কার্ড, ডাইরী, চিঠি ও ছবি সযত্নেরেখেছেন । এতে মেয়ের প্রাথমিক স্কুল, মাধ্যমিক স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন , চাকরী ও রোগ সহ নানা ক্ষেত্র লিপিবদ্ধ রয়েছে । রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগের দিনগুলো মেয়ের সবচেয়ে আনন্দের সময় । দক্ষিণ কোরিয়ায় লেখাপড়া শেষ করে ছেলে বন্ধু এক দক্ষিণ কোরিয় ছেলের সঙ্গে মেয়ে স্বদেশে ফিরে এসেছে এবং একটি বড় বিদেশী কোম্পানিতে কাজ করছে । সঙ্গে সঙ্গে মেয়ে অনুবাদও করে । তার বেশ কয়েকটি অনুদিত বইও প্রকাশিত হয়েছে । কাজের সাফল্যের জন্য মেয়ে প্রায়ইপ্রশংসা পায় । ২০০১ সালের ১২ জুলাই ডাক্তার চিহ্নিত করেছেন যে , মেয়ে অস্থি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। এই খবর জেনে ২৩ বছর বয়সী মেয়ের প্রথম প্রতিক্রিয়া হল , মায়ের সঙ্গে তার আর বেশি সময় নেই ।সে মাকে বলল, মাফ করুন মা , সম্ভবত আমি আপনার জন্য আর বাড়ি কিনতে সক্ষম হব না । শল্য চিকিত্সার আগের রাতে মেয়ের অনুরোধে মা বিশ্রাম নিতে বাড়ি ফিরে গেলেন । মা যাওয়ার পর মেয়ে লেপ দিয়ে মুখ ঢেকে কাঁদতে শুরু করল । কিন্তু দ্বিতীয় দিন সে হাসিমুখে মার কাছে কথা দেয় । মাকে  সে বলল, আমি জিতবই । কোনো চিন্তা করবেন না । ডাক্তার বলেন , মেয়ের মাত্র আর কয়েক মাস সময় আছে । কিন্তু একাকী মা'র জন্য সে আড়াই বছর টিকে থাকার চেষ্টা করল । অবশেষে সে মাকে ছেড়ে চিরকালের জন্য মৃত্যুবরণ করে ।

    মাদাম হু-এর একটি সুখি পরিবার ছিল । কিন্তু হঠাত একদিন স্বামী রোগে মারা যান । তখন ১৪ বছর বয়সী মেয়ে মাধ্যমিক স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ছিল । মাদাম হু দুঃখ-দুর্দশায় নিমজ্জিত । অকালে পরিপক্ক মেয়ে তাকে সেই দুঃখের ছায়া থেকে বাহির করল । মেয়ে সবসময় তাকে বলত, চিন্তা করবেন না । আমি আছি । এর পর মেয়ে সব কিছু শিখেছে । বাড়ির কোনো কিছু নষ্ট হলে সে মেরামত করত । বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে দক্ষিণ কোরিয়ায় লেখাপড়ার সুযোগ পায় । লেখাপড়া শেষে সে বিদেশে চাকরী করার সুযোগ ছেড়ে সাংহাই ফিরে এসেছে, মায়ের কাছে ফিরে এসেছে ।

    ১৯৯৭ সালের মে মাসে মাদাম হু অবসর নেন । মাসে মাত্র হাজার ইউয়ান বেতন পান বলে তাদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভাল ছিল না । এখন মেয়ে ভাল চাকরী করে । তাদের আর্থিক অবস্থা আগের চাইতে অনেক ভাল হয়েছে । কিন্তু মেয়ের শারীরিক অবস্থা খারপ হয়েছে এবং তাকে চিরকালের জন্যত্যাগ করেছে । " আমি মারা যাওয়ার পর মা নিঃসঙ্গ হবেন ।একা হয়ে তিনি কিভাবে দিনগুলো কাটাবেন ? তাঁকে আরেকবার বিয়ে করতে হবে" মেয়ে ভাবল । শেষ দিনগুলোতে মেয়ে মার জন্য জীবনসঙ্গী সংগ্রহ করেছে এবং সহকর্মীদের সঙ্গে মায়ের পরিচয় করিয়ে দিয়েছে ।সে চায়, তার মৃত্যুর পর তারা তার পক্ষ থেকে তার মায়ের যত্ন নেবে । মেয়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর মাদাম হু নিজের জন্য শেষ ছবি তুলেছেন । তিনি চেয়েছিলেন মেয়ের সঙ্গে যান । কিন্তু তিনি ভাবলেন,"মেয়ে আমাকে ভালবাসে , মেয়ে চায় আমি সুখেশান্তিতে জীবনযাপন করব। আমি মেয়েকেও ভালবাসি। তাই আমি মেয়ের আশা বিফল করব না । আমি মেয়ের আশার মতো জীবনযাপন করব।

----------- ---------- ---------

    সিআন শহরের মাদাম ছেন রোং একজন শ্রেষ্ঠ ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন । স্বামীর আশা অনুযায়ী বিয়ে হওয়ার পর তিনি সি আন হাল্কা শিল্প গবেষণালয় থেকে অবসর নিয়ে এক গৃহিনী হয়েছেন । ১৯৯০ সালের ৩০ জানুয়ারী তার মেয়ে চেনির জন্ম হয় । চেনির দু বছরের জন্মদিনে ছেনরোং মেয়ের জন্য একটি কেক কেনার মত যথেষ্ট টাকাপয়সাও ছিল না । তিনি নিজের ব্যর্থতা মেনে চলতে চাইলেন না । মেয়েকে গুড়া দুধ ও ডিম খাওয়ানোর জন্য ১৯৯৩ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক উন্নয়ন করতে তিনি ফুচিয়েন প্রদেশে যান । তার গবেষণার ফলাফলে দশ বারোটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান উপকৃত হয় । কাজে তিনি সাফল্য অর্জন করেন কিন্তু পরিবার হারান । তাঁর বিবাহ বিচ্ছেদ হয় ।

    বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার পর ছেন রোং সিআন শহরে ফিরে যান । তাঁর আগের কর্ম-ইউনিট সি আন হাল্কা শিল্প গবেষণালয় তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে । তিনি চমত্কারভাবে কাজ করেন এবং তাড়াতাড়ি গবেষণালয়টির পরিচালক হন । ব্যস্ততার কারণে তিনি সপ্তাহে মাত্র একবার মেয়েকে দেখতে যান । তিনি উপলব্ধি করেছেন , মেয়ে খুশী নয় । সাত-আট বছর বয়সে মেয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয় । তার মাথা ব্যথা এবং খাওয়ার রুচি নাই। মেয়ে স্কুলচ্যুত হয় । ছেন রোং ওষুধ বিশেষজ্ঞ হলেও নিজের মেয়েকে চিকিত্সা করতে সক্ষম নন । ধীরেধীরে তিনি বুঝেছেন, ওষুধ ছাড়া মেয়ে বেশি চায় মায়ের ভালবাসা । তাই ছেন রোং বেশি সময় নিয়ে মেয়ের যত্ন নেন, তার কাছে থাকেন । মার যত্নে মেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠে । এক বছর পর মেয়ে স্কুলে ফিরে লেখাপড়া শুরু করে । কিন্তু "আবার মাকে হারাবে" এই কালো ছায়া মেয়ের মনে রয়ে গেল । এক দিন মেয়ে তাকে জিজ্ঞেস করেছিল, " মা আপনি আমার আগে মরে যেতে পারবেন ?"

    ২০০৩ সালের ৩০ জুলাই ছিল সিআন শহরের সবচেয়ে উষ্ণ একটি দিন । চেনির অসুখ হল, সে মাকে বলল, " আমি আপনার সঙ্গে অফিসে যেতে চাই । সেখানে এ-সি ব্যবস্থা আছে" । সে দিন সকালে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হবে ।"বাচ্চা সঙ্গে নিয়ে অফিস করব না" নিজের এই নিয়ম পালনের জন্য ছেন রোং মেয়ে চেনির এই অনুরোধ রাখেননি। সকাল ন'টায় যখন বৈঠক চলছিল তখন মেয়ে চেনির টেলিফোন এলো। চেনির বমি হল । কাজ শেষে ছেন রোং বাড়ি ফিরে মেয়ে চেনিকে হাসপাতালে পাঠান । ২০০৩ সালের ৩০ জুলাই বিকেল ৩টা ৮মিনিটের সময় চিরকালের জন্য তার মনে জেগে থাকবে । এ মুহুর্তে তার মাত্র ১৩ বছর ৬ মাস বয়সের মেয়ে চেনি চিরকালের জন্যতাকে ছেড়ে চলে গেছে।

    মেয়ে চেনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য অর্থজমা দিয়ে ছেন রোং এক ওয়েবসাইট খুললেন । দিনে তিনি কাজের মধ্য দিয়ে নিজের দুঃখকে প্রশমিত করেন । রাতে তিনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে মেয়ের সঙ্গে দেখা করেন, তার সঙ্গে কথাবার্তা বলেন । সেখানে তরণ তরণী যুবক যুবতীরা তাকে মা ডাকে ।