v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-06-14 18:11:41    
থাংচে মন্দির

cri
   পেইচিংয়ের পশ্চিম উপকন্ঠ এলাকায় একটি ১৭০০ বছরেরও বেশি পুরানো থাংচে মন্দির রয়েছে । তা পাহাড়ের পাশে নির্মিত একটি মন্দির, এর কাছে ৯টি উঁচু পাহাড় রয়েছে । ৩০৭ সালে তা নির্মিত হয়েছে । এ মন্দিরের ইতিহাস পেইচিংকে রাজধানী করার ইতিহাসের চেয়েও পুরনো । থানচে মন্দিরের প্রশাসনিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাও সিন চিয়ান বলেছেন, উত্তর চীনের রাজার নাম ছিল ওয়াং চুন । ৩০৭ সালে তাঁর স্ত্রী মৃত্যুবরণ করেন । তিনি তাঁর স্ত্রীকে পেইচিংয়ের পশ্চিমাঞ্চলের পাপাওশান অঞ্চলে সমাহিত করেন । একই বছর তিনি তাঁর স্ত্রীর ও দেশের শুভকামনা প্রার্থনার জন্য চীনের পশ্চিম উপকন্ঠে চিয়াফু মন্দির নির্মাণ করেন । তা হচ্ছে থানচে মন্দিরের পুরনো নাম ।

     থানচে মন্দির পৌঁছার পর অবশ্যই মন্দিরের একটি বৈশিষ্ট্যময় দৃশ্য দেখতে পাবেন । তা হচ্ছে মন্দিরের সন্ন্যাসীদের খাবার রান্না করার একটি বড় ধাতব পাত্র । এ পাত্রের ব্যাস ৪ মিটার, উচ্চতা ২ মিটার । এক পাত্রে সিদ্ধ ভাত তৈরী করলে ১০ ঘন্টারও বেশি সময় লাগত । পাত্র পরিস্কার করার সময় সন্ন্যাসীরামইয়ে উঠে পাত্রের ভিতরে দাঁড়িয়ে তা পরিস্কার করতেন । পাত্রের নীচে রান্নার বেঞ্চিতে থাংচে মন্দিরের চীনা ভাষা অক্ষর খোদাই রয়েছে । তাহলে কেন এ তিনটি অক্ষর খোদাই করা হয়েছে ? এ সম্পর্কে সহকারী পরিচালক হাও সিন চিয়ান বলেছেন,  রূপকথায় বলা হয়েছে , থানচে মন্দিরের সব স্থাপত্য ভবন কাঠ দিয়ে তৈরী ,সহজভাবেই অগ্নিকাণ্ড হতে পারে । সন্ন্যাসীদের প্রধান মন্দিরে অগ্নিকণ্ড এড়ানোর জন্য অনেক উপায় বের করেন । এক রাতে তিনি তাঁর স্বপ্নে দেখতে পান যে , থানচে মন্দিরকে আগুণে রাখলে মন্দিরে আর কোনোদিন অগ্নিকণ্ড ঘটবে না । এ জন্য তিনি রান্নার বেঞ্চিতে থানচে মন্দির এ তিনটি অক্ষর খোদাই করেন ।

    থানচে মন্দিরে দু'টি শ্রেষ্ঠ জিনিস আছে । এ বড় পাত্র ছাড়া আরেকটি হচ্ছে সুপরিচিত পাথর মাছ । এ পাথর মাছের দৈর্ঘ্য ১.৭ মিটার, ওজন ১৫০ কিলো গ্রাম, এর রঙ কালচে সবুজ । গাইড মিস লি লু বলেছেন, স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এ পাথর মাছ নানা ধরনের রোগের চিকিত্সা করতে সক্ষম । তিনি বলেছেন, রূপকথায় এ পাথর মাছ হচ্ছে দক্ষিণ সমুদ্রের ড্রাগন রাজপ্রাসাদের একটি শ্রেষ্ঠ জিনিস । ড্রাগন রাজা তা উপহার হিসেবে আকাশের দেবতা রাজাকে দেন। লোকজনের রোগ চিকিত্সা করার জন্য দেবতা রাজা পাথর মাছ থানচে মন্দিরকে দেন । তার সামর্থ্য রোগের চিকিত্সা করা এবং দুর্ঘটনা নির্মূল করা । তখনকার লোকেরা তার সামর্থ্যের ওপর বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপন করতেন । মাথা ব্যথার সময় পাথর মাছের মাথা স্পর্শ করতেন পেট ব্যথার সময় তার পেট স্পর্শ করতেন । এভাবে নিজেদের রোগ চিকিত্সা করা যেতো ।

     আসলে এ পাথর মাছ শিল্পীরা থানচে মন্দিরের পড়ে যাওয়া একটি অগ্ন্যুত্পাতের পাথর খোদাই করে তৈরী করা হয়েছে । পাথরের ভিতরে ধাতবসহ বিভিন্ন ধরনের লৌহ-জাত জিনিস রয়েছে । পাথর মাছের বিভিন্ন অংশে টোকা দিলে আপনারা নানা ধরনের শব্দ শুনতে পাবেন । তা বাদ্যযন্ত্রের মতোই খুবই সুন্দর । দীর্ঘকাল ধরে লোকজনের বিশ্বাস পাথর মাছের অনেক আশচর্য শক্তি রয়েছে ।

     থাংচে মন্দিরের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল মন্দিরের পুরনো গাছগুলো । চে হচ্ছে মন্দিরের শ্রেষ্ঠ গাছ । এর পাতা খেয়ে রেশমগুটি বাঁচতে পারে এবং কাঠ দিয়ে বিলাসবহুল আসবাবপত্র তৈরী করা যায় ।মন্দিরের পিছনে ড্রাগন হ্রদ অথবা লোংথান এবং পাহাড়ে চে গাছ থাকার জন্য মন্দিরের নাম হয়েছে থাংচে মন্দির । চে গাছ ছাড়া মন্দিরে আরেকটি দামী ও উপকারী গাছ ফার্ন গাছ রয়েছে । এ গাছের উচ্চতা ৪০মিটারেরও বেশি, ৭ বা ৮ জন লোক হাতে হাত মিলিয়ে গাছটি কোল করতে সক্ষম । গ্রীষ্মকালে এ গাছের পাতার ছায়ার আয়তন ৬০০ বর্গমিটার । শরত্কাল আসার সময় গাছের পাতাগুলো সোনালী রঙে পরিণত হয় , তা বাতাসের সঙ্গে মাটিতে পড়ে যায় ,দেখতে সোণালী প্রজাপতির পাখার মতোই ,খুবই সুন্দর ।

   চমত্কার এই রাজা গাছ ছাড়াও , মন্দিরে আরো দু'টি বেগুনী ম্যাগ্নোলিয়া গাছ রয়েছে । যদিও পেইচিংয়ে বেগুনী ম্যাগ্নোলিয়া গাছ কম দেখা যায় না , তবুও মন্দিরের দু'টি বেগুনী ম্যাগ্নোলিয়া গাছ খুব উঁচু ও তার আয়ুষ্কাল অনেক দীর্ঘ । জানা গেছে, দু'টি গাছের আয়ুষ্কাল ৪০০ বছরেরও বেশি । ফুল ফোটার সময় অনেক দূর থেকে দেখলে খুব সুন্দর লাগে । প্রতি বছর ফুল ফাটার সময় হাজার হাজার পর্যটক এখানে এসে তা পরিদর্শন করেন । পেইচিংয়ের পর্যটক ম্যাডাম ওয়াং লিন বলেছেন, আমি ছাওইয়াং এলাকা থেকে এসেছি । শুনেছি ম্যাগ্নোলিয়া ফুল ফুটেছে, আমি তা দেখার জন্য এখানে এসেছি । তা খুবই সুন্দর, দেখার পর আমি অনেক খুশি হয়েছি ।