প্রথমেই শ্রোতাবন্ধুদেরআমি পেইচিংয়ের দক্ষিণাঞ্চলের সিউয়ান উ এলাকায় অবস্থিতি ফাইউয়ান মন্দিরে নিয়ে যাবো । মন্দিরের আয়তন ৬৭০০ বর্গমিটার, ১৩০০ বছরেরও আগে চীনের থাং রাজবংশের সময় তা নির্মিত হয় । ফাইউয়ান মন্দির হল তত্কালীন থাং রাজবংশের রাজার নির্দেশে নির্মিত একটি মন্দির। এ কারণে মন্দিরের স্থাপত্য কাঠামো প্রাচীনকালে চীনের রাজপ্রাসাদের মতো । বিভিন্ন রাজবংশের আমলে কয়েকবার মেরামত করার পর তা দেখতে চীনের মিং ও ছিং রাজবংশের স্থাপত্য ভবনের মতো হয়েছে । বর্তমানে চীনের বৌদ্ধ ধর্ম ইনস্টিডিউট এখানে অবস্থিত । ফাইউয়ান মন্দিরে কর্মরত ইয়াও ইউয়ান এ মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করছেন এবং সংশ্লিষ্ট বইও প্রকাশ করেছেন । তিনি বর্ণনা করেছেন যে, ফা ইউয়ান মন্দির চীনের থাং রাজবংশে নির্মিত হয় । এ পর্যন্ত তার ইতিহাস ১৩০০ বছরেরও বেশি। এটি হচ্ছে একটি সুদীর্ঘকালীন ঐতিহাসিক মন্দির। অনেক ঘটনা এখানেই ঘটেছে । এর কাঠামো সম্পূর্ণ এবং আয়তনও বড় । এ মন্দিরের বিশিষ্ট্য হল তার সুদীর্ঘকালের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ।
ফাইউয়ান মন্দির একটি বৌদ্ধ ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ স্থান হওয়ার পাশাপাশি এখন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের একটি পর্যটন স্থানেও পরিণত হয়েছে । প্রতি বছরের এপ্রিল মাসে এখানে আয়োজিত লাইলাগ ফুলের উপর কবিতা সেমিনার ব্যাপক পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে । এ পর্যন্ত এ সেমিনারের ইতিহাস ৮০ বছরেরও বেশি ।
১৯১৪ সালের এপ্রিল মাসে ফাইউয়ান মন্দিরে প্রথমবারের মতো ১০০জন কবি অংশ নিয়ে লাইলাক ফুলের ওপর কবিতা সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে । ১৯২৪ সালে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চীনে এসেছিলেন । তিনি ফাইউয়ান মন্দির পরিদর্শন করেন, লাইলাক ফুল দেখেন এবং লাইলাক গাছের নীচে বসে কবিতা লিখেন । এরপরে ফাইউয়ান মন্দিরে ফুল দেখা এবং কবিতা লেখার ঐতিহ্য সৃষ্টি হয়েছে এবং লাইলাক ফুলের উপর কবিতা সেমিনার অনুষ্ঠান মন্দিরের বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে । প্রতি বছরের এপ্রিল মাসে কবিতা সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় ।
লাইলাক ফুল গাছ ছাড়া, ফাইউয়ান মন্দিরে এক শো' বছর পুরানো ফার্ন গাছ, অশ্বথ গাছ এবং দু'টি সারা গাছ রয়েছে । সারা গাছ বিশেষভাবে ভারত থেকে হস্তান্তর করা হয় । রূকথায় বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা সাক্যমুনি এ গাছের নীচে মৃত্যুবরণ করে দেবতায় পরিণত হন ।
প্রতিদিন বিকাল সাড়ে তিনটায় ফাইউয়ান মন্দিরে সন্ন্যাসীদের বৌদ্ধ ধর্মীয় বই পড়ার কন্ঠ শুনতে পাওয়া যায় । তা হল সন্ন্যসীদের সান্ধকালীন ক্লাস । ফাইউয়ান মন্দিরে পেশাগত সন্ন্যাসী ছাড়া চীনের বৌদ্ধ ধর্ম ইনস্টিডিউটের ১০০জনেরও বেশি ছাত্র লেখাপড়া করেন । চীনের বৌদ্ধ ধর্ম ইনস্টিডিউট হচ্ছে চীনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৌদ্ধ ধর্ম স্কুল । প্রতি বছর অল্প সংখ্যক ছাত্র এই স্কুলে লেখাপড়া করে । ইনস্টিডিউটের ক্লাসরুম ফাইউয়ান মন্দিরের কাছে অবস্থিত হলেও ছাত্ররা তাদের লেখাপড়াসহ বিভিন্ন ধর্মীয় কার্যক্রম প্রধানত মন্দিরে চালায় ।
সন্ন্যসী ফান হুয়া চীনের বৌদ্ধ ধর্ম ইনস্টিডিউটের একজন ছাত্র ছিলেন । ফাইউয়ান মন্দিরে থাকা এবং চীনের বৌদ্ধ ধর্ম ইনস্টিডিউটে লেখাপড়া করার সুযোগ পেয়ে তিনি খুবই সৌভাগ্যবান বলে মনে করেন । তিনি বলেছেন, ফাইউয়ান মন্দির খুবই বৈশিষ্টময় । তা হচ্ছে একটি ঐতিহ্যিক সাংস্কৃতিক স্থান । একজন সন্ন্যাসী হিসেবে এখানে বসবাস করতে পেরে আমি গর্ববোধ করি । সন্ন্যসীরা এক হাজারেরও বেশি বছর আগে নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী এখানে লেখাপড়া এবং জীবন উপভোগ করা খুবই দুর্লভ । তা অনেক সন্ন্যাসীর জন্য একটি বহুল প্রত্যাশিত স্থান । তাই আমরা এখানে থেকে খুবই শান্তি ও আরাম বোধ করি ।
ইতালি থেকে আসা ম্যাডাম কার্লা প্রেভাটো এবং তাঁর পরিবার প্রথমবারের মতো ফাইউয়ান মন্দির পরিদর্শন করেন । তাঁরা এবারের লাইলাক ফুল কবিতা সেমিনারেও অংশ নিয়েছেন । তিনি বলেছেন , আগে আমরা এ মন্দির সম্পর্কে কিছু জানতাম না । আকস্মিক সুযোগ পেয়ে এখানে এসেছি । এ মন্দির অতি সুন্দর। মন্দিরটি আমাদের মনে খুবই শান্তি ও সুস্থিরতা এনে দেয় ।
|