মানুষের আধুনিক জীবনযাপনের দরুণ নানা ধরণের বিশেষ ব্যাধি হতে পারে । এটা গুরুতর ভাবে মানুষের প্রাণ ও সুস্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত করে । যুগ এগিয়ে যাচ্ছে , বিজ্ঞান বিকশিত হচ্ছে আর মানব জাতির জীবনযাপনও দিন দিন পরিবর্তিত হচ্ছে । সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি তদন্ত অনুযায়ী , বর্তমানেযে সব ব্যাধি মানবজাতির সুস্বাস্থ্য আর প্রানের হুমকী দিচ্ছে , সে সব ব্যাধি সব কিছু জীবানু আর ভাইরাসের দরুণ সৃষ্টি হয়েছে তা নয় , বরং বহু ধরনের অসুস্থ ও অবৈজ্ঞানিক জীবনযাপন আর জটিল পরিবেশ ও মানসিক উপাদানের কারণে সৃষ্টি হয়েছে । যেমন উচ্চ রক্তচাপ রোগ , হৃত্ রোগ , মস্তিষ্ক রোগ, ডায়াবেটিক , গ্যাস্টিক আল্সার , ক্যান্সার আর বাড়িতে ব্যবহার্য বৈদ্যুতিক দ্রব্য ব্যবহারের দরুণ সৃষ্ট নানা রকমের ব্যাধি । এই সব ব্যাধিকে আধুনিক জীবনযাপনের ব্যাধি বলে অভিহিত করা হচ্ছে । এই সব রোগে আক্রান্ত হওযার জন্য মৃত্যুহার শিল্পোন্নত দেশগুলোতে শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ আর উন্নয়নমুখী দেশগুলোতে শতকরা ৪০ থেকে ৫০ ভাগে দাঁড়িয়েছে । এই সব রোগের বেশীর ভাগই সংক্রমিত নয় , বরং প্রতিরোধ করা যায় ।গত কয়েক বছরে চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগে সামাজিক উপাদানের সংগে মানুষের মৃত্যুর কারণের সম্পর্ক নিয়ে তদন্ত চালানো হয়েছে । তদন্তের ফলাফল অনুযায়ী , এর মধ্যে জীবনযাপনের উপাদান শতকরা ৩৭.৩ ভাগ , পরিবেশের উপাদান শতকরা ৩২ ভাগ আর মানুষের বংশ ও বয়সের উপাদান মাত্র শতকরা ১৯.৭ ভাগে দাঁড়িয়েছে ।
বর্তমানে চীনের জনগনের স্বাস্থ্য রক্ষার মান এখনো নীচু । জীবনযাপনের অসুস্থ রীতিনীতি এখনো ব্যাপকভাবে বিরাজমান । ধূমপানের উদাহরণ ধরা যাক , শিল্পোন্নত দেশগুলোতে প্রতি বছর প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার লোক ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ক্যান্সার রোগ , হৃত্পিন্ড ও রক্তনালীর রোগ আর ফুসফুসের অন্যান্য ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান । কিন্তু গত কয়েক বছরে এই সব দেশে ধূমপানকারীদের সংখ্যা ক্রমাগত কমে যাচ্ছে । ফুসফুসের ক্যান্সার প্রভৃতি রোগের হারও সংগে সংগে হ্রাস পাচ্ছে । তবুও চীনে ধূমপানকারীদের সংখ্যা বিপুলমাত্রায় বেড়ে যাচ্ছে । অনুমান করা হচ্ছে , চীনে ২০ কোটিরও বেশী পুরুষ আর ২ কোটি ৪০ লক্ষ নারী ধূমপান করছে । ক্যান্সার রোগে আক্রান্তকারী মৃত্যুদের সংখ্যা অন্যান্য টিওমার রোগে আক্রান্তকারী মৃত্যুদের সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছে । অনুমান অনুযায়ী, ২০০৫ সালের মধ্যে চীনে ধূমপানের দরুণ নানা রকমের রোগে আক্রান্তকারীদের সংখ্যা ২০ লক্ষেরও বেশী হবে । গত কয়েক বছরে চীনের বহু অন্চলে মাদক বিস্তৃত হয়েছে । মাদক সেবনকারীদের সংখ্যা কয়েক লক্ষে দাঁড়িয়েছে । গত কয়েক বছরে চীনে অধিক থেকে অধিকতর লোক কুকুর পালন করছে । অনুমান অনুযায়ী, চীনে ১২ কোটি কুকুর আছে । এর সংগে সংগে জলাতংক রোগীদের সংখ্যাও দ্রুত বেড়ে গেছে । জলাতংক রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে বছরে কয়েক ডজন হাজার লোক মারা যায় । তা ছাড়া বেশী মদ খাওয়ার দরুণ সৃষ্ট লিভার রোগ , যৌন রোগ ও এইড্জ রোগের বিস্তৃতী, খাওয়া দাওয়ার অসুস্থ রীতিনীতির কারণে সংঘটিত পুষ্টির অভাব ও অতিরিক্ত মোটা রোগ, মানসিক উত্তেজনা ও চাপের জন্য সৃষ্ট হৃত্পিন্ড ও রক্তনালী, হজম ও স্নায়ু রোগ সর্বত্র আর সর্বদাই দেখা যায় । এই সব রোগ আধুনিক জীবনযাপনের রোগের পরিচায়ক ।
যেহেতু আধুনিক জীবনযাপনের রোগ সংক্রমিত নয় , সেহেতু মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য তার ক্ষতি দ্রুত নয় । এর উপর মানুষ যথাযথ মনোযোগ দেয় না । এই ধরনের রোগ মানবজাতির সভ্যতার অগ্রগতি ও জীবনযাপনের রীতিনীতির সংগে জড়িত বলে সেগুলোকে সাধারণতঃ সভ্যতা রোগ বা রীতিনীতি রোগ বলে আখ্যায়িত করা হয় । এই ধরনের রোগের মূলে রয়েছে অবৈজ্ঞানিক ও অসুস্থ জীবনযাপনের রীতিনীতি , যেমন অসুষ্ঠু খাওয়া দাওয়ার রীতিনীতি বা পুষ্টি কাঠামো আর ঘুম ও ঘুম থেকে উঠার সময় ব্যবস্থাপনার অযৌক্তিকতা. অথবা ধূমপান , মদ খাওয়া, জুয়া খেলা ইত্যাদি অসুস্থ সখ এবং বাড়িতে ব্যবহার্য দ্রব্য বেশী ব্যবহার ।
|