v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-06-13 20:34:04    
অন্ধদের সিনেমাহলের কাহিনী

cri

    চীনে প্রায় ৬ কোটি প্রতিবন্ধী রয়েছে । সমাজের একটি বিশেষ গোষ্ঠী হিসেবে তাদের অধিকার যেমন চীনের আইনের দ্বারা সংরক্ষিত , তেমনি সরকার ও সমাজের বিভিন্ন মহলের লোকেরা নানা দিক থেকে প্রতিবন্ধীদের যত্ন নিচ্ছেন এবং সাহায্য করছেন ।

    চীনের রাজধানী পেইচিংয়ের কু লৌর পশ্চিম রাজপথের একটি চারকোনার আংগিনায় রয়েছে একটি বিশেষ সিনেমাহল । এ সিনেমাহলের আয়তন ৩০ বর্গমিটারেরও কম । এখানে পর্দা নেই , কেবল আছে একটি টেলিভিশন সেট , একটি ডি ভি ডি যন্ত্র ও একটি অ্যামপ্লিফিয়ার। আরো আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এই যে , এখানকার দর্শকরা সবাই অন্ধ । সিনেমাহলের ব্যাখ্যাকারীরা চলচ্চিত্র বলার মাধ্যমে চলচ্চিত্রের কাহিনী ও দৃশ্যাবলী অন্ধদের বর্ণনা করে শোনান ।

    এমন একটি ছোট সিনেমাহল অন্ধ বন্ধুদের জন্যে অনেক আনন্দ এনে দিয়েছে । ২০০১ সালে ৪৮ বছর বয়সের লি কুই চির একটি চোখ অন্ধ হয়ে যায় এবং অন্য একটি চোখ দিয়েও প্রায় কিছুই দেখতে পারছেন না । এখন তিনি মাঝেমধ্যে এ বিশেষ সিনেমাহলে চলচ্চিত্র দেখতে আসেন । তিনি বলেছেন ,

    বাড়িতে বসে আমি চশমা পড়লেও টেলিভিশনের দৃশ্য স্পস্ট দেখতে পারি না । বাড়িতে আমার জন্য ব্যাখ্যা করার লোকও নেই । কেন না , আমার স্বামী কাজ করতে যান এবং আমার সন্তান তো স্কুলে যায় । সুতরাং এ সেনিমাহল আমাকে আকৃষ্ট করেছে ।

    হৌ চিয়ান কোওয়ের বয়স ৬৮ বছর । এ সেনিমাহলে আসার জন্যে তাকে বাড়ি থেকে এখানে আসতে বাসে করে দু ঘন্টারও বেশি সময় লাগে । তাসত্ত্বেও তিনি সবসময় উত্সাহের সংগে এখানে চলচ্চিত্র শুনতে আসেন । তিনি বলেছেন ,

    চলচ্চিত্রটির কাহিনীর সমস্ত দৃশ্যাবলী ব্যাখ্যাকারীরা আমাদের জন্যে বর্ণনা করেছেন । সত্যিই কাহিনী শোনার মত । শুনতে বেশ মজা লাগে ।

    অন্ধ বন্ধুরা বিনা খরচে এ সেনিমাহলে চলচ্চিত্র উপভোগ করতে পারেন । ২০০৫ সালের জুলাই মাসে খোলার পর এখন পর্যন্ত সেনিমাহলটি দু শ'রও বেশি অন্ধ বন্ধুর জন্যে প্রায় ৪০টি চলচ্চিত্র দেখিয়েছে । চলচ্চিত্রের মধ্যে " রাজকুমারী সিসি" সহ দেশ বিদেশের বেশ কিছু শ্রেষ্ঠ ছায়াছবি রয়েছে ।

    এ সেনিমাহলের প্রতিষ্ঠাতার নাম তা ওই । তার বয়স ৪৮ বছর । তিনি নিজেই এ সেনিমাহলের অন্যতম প্রধান ব্যাখ্যাকারী । তিনি বলেছেন ,

    চলচ্চিত্র ব্যাখ্যা করা তো খুবই মজার । চলচ্চিত্র বলার মাধ্যমে আমি নিজের দৃষ্টি দিয়ে শ্রোতাদের জন্যে তাদের বেঁচে থাকার অবকাশ ভালোভাবে জানাতে পারছি । শ্রোতারা মনে করবেন , তারাও সকলের মত একটি অত্যন্ত সত্যিকার অবকাশের মধ্যে বসবাস করছেন ।

    একবার একটি সেনিমাহলে তা ওই একজন অন্ধ লোকের জন্যে একটি চলচ্চিত্রের কাহিনী ব্যাখ্যা করেছিলেন । এটি তাকে গভীরভাবে বিমোহিত করেছে । তাই তিনি এ বিশেষ সেনিমাহল খুলেন এবং অন্ধদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান- হুং তান তান শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিনিময় কেন্দ্র স্থাপন করেন । এটি সম্পূর্ণই একটি কল্যাণমূলক সংগঠন । সংগঠনটির কাজ হচ্ছে অন্ধ বন্ধুদের সহায়তা করা ।

    আরো ভালোভাবে অন্ধ বন্ধুদের সংগে আদান-প্রদানের জন্যে তা ওই সবসময় তার স্ত্রীর সাহচর্যে নিজের দুটো চোখ ঢেকে রেখে বাইরে চলাফেরা করেন , যাতে অন্ধদের অন্তর জগত অনুভব করা যায় । এসব প্রচেষ্টার সুবাদে তিনি এখন চমত্কারভাবে একের এক চলচ্চিত্র ব্যাখ্যা করে চলেছেন । তিনি বলেছেন ,

    যখন আমি আমার দুটো চোখ ঢেকে রেখে রাস্তায় চলাফেরা করি , তখন আমি অনুভব করি যে , আমার মনের মধ্যে অনেক শূণ্য গর্ত ও সংশয় রয়েছে । আমার অন্ধ বন্ধুদেরও একই অবস্থা । আমার সেনিমাহলে চলচ্চিত্র উপভোগের সময় তারা অনেক তথ্য লাভ করতে পারেন । তখন তারা নিজেদেরকে পরিপূর্ণ বলে মনে করেন ।

    তা ওইয়ের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে এখন অধিক থেকে অধিকতর সংখ্যক লোক অন্ধদের এ সেনিমাহলের পরিসেবার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন । আইনজীবি মাদাম ওয়েন ছিউ ফাং তাদের অন্যতম । যখন ওয়েন ছিউ ফাং দ্বিতীয় সপ্তাহের মত এ সেনিমাহলে আসেন , তখন ২০০৬ সালের শীতকালে সবচেয়ে প্রবল তুষার পড়ে । তিনি বলেছেন ,

    সেদিন প্রচন্ড তুষার পড়েছিল । তবুও দশ বারোজন অন্ধ বন্ধু আমাদের সেনিমাহলে আসলেন । তাদের অনেকে দুই থেকে তিনটি বাস বদল করে এখানে আসলেন । পথে অনেকের দু থেকে তিন ঘন্টা সময় লেগেছিল । তাদের এ উত্সাহ দেখে আমার মনে এক রকম দায়িত্ববোধ জাগল । তাদের এ প্রত্যাশার মুখে তাদের জন্যে ভালোভাবে চলচ্চিত্র ব্যাখ্যা না করার কোনো যুক্তি আমাদের নেই ।

    যারা এ সিনেমাহলে কাজ করেন , তাদের অধিকাংশই স্বেচ্ছাসেবক । বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছাত্র শেন ছুয়ান এখানে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছেন । এখান থেকে তিনি এক পয়সাও নেন নি । তার বক্তব্য থেকে অধিকাংশ স্বেচ্ছাসেবকের মনের কথা প্রকাশ পেয়েছে । তিনি বলেছেন ,

    অন্ধদের সংগে বেশি সময় করে মেলামেশা করলে আপনি অনুভব করবেন , আমাদের মত লোকেরা তাদের জন্যে কিছু করলে , সত্যিকারভাবে তাদের উপকার করা যাবে । তাই আমরা মনে করি যে , আমাদের এসব কাজের বেশ তাত্পর্য ও মূল্য আছে ।

    এ সেনিমাহলের স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের সদিচ্ছা ও উত্সাহ দিয়ে অন্ধদের সামনে রংবেরংয়ের জগত তুলে ধরেছেন এবং তাদের আন্তরিক আওয়াজ দিয়ে অন্ধদের জন্যে একের পর এক চিত্তাকর্ষক চলচ্চিত্র ব্যাখ্যা করেছেন ।

    যেহেতু এ সেনিমাহল সম্পুর্ণই কল্যাণমূলক সংগঠন , সেহেতু তা ওই ও সেনিমাহলের মাধ্যমে কোনো মুনাফা লাভ করেন নি । তবে তিনি এর পরোয়া করেন না । তিনি বলেন , তিনি কেবল আশা করেন যে , নিষ্ঠার সংগে কিছু বাস্তবভিত্তিক কাজ করবেন এবং যাদের দরকার পড়ে , তাদের সাধ্যমত সাহায্য করবেন । এখন তিনি চিন্তাভাবনা করছেন যে , চলচ্চিত্রগুলো ব্যাখ্যা করার রেকর্ডিংকে লাইট ডিস্করূপে তৈরি করা হবে , যাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর অন্ধ বন্ধুরাও চলচ্চিত্রের শিল্পকলা উপভোগ করতে পারেন ।