এ বছরের মার্চ মাসে পেইচিংয়ে চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের বার্ষিক নিয়মিত অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় । এই অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিদের মধ্যে বেশ কিছু লোক সংখ্যালঘু জাতির । তাদের রঙ-বেরঙের ও অনন্য রীতি-নীতি সমৃদ্ধ জাতীয় পোশাক এ সব জাতির আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যের পরিচায়ক । আজ এই অনুষ্ঠানে জাতীয় গণ কংগ্রেসের এই দু'জন সংখ্যালঘু জাতির প্রতিনিধি সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলছি আমি…
দক্ষিণ পশ্চিম চীনের কুইচৌ প্রদেশের প্রতিনিধি দলের এমন একজন নারী প্রতিনিধি জাতীয় গণ কংগ্রেসের নিয়মিত অধিবেশনে অংশ নিচ্ছিলেন , যিনি গলায় রূপোর গয়না , কানে রূপোর দুল এবং কোমরে রূপোর কোমর বন্ধ পরে এসেছেন । তার উপস্থিতি বেশ কিছু সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো । তিনি হচ্ছেন কুইচৌ প্রদেশের লি পিং জেলার তুং জাতির জাতীয় গণ কংগ্রেসের একজন প্রতিনিধি। তার নাম শি ওয়েন ছ্যুন । তিনি ছিলেন কুইচৌ প্রদেশের শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পকলা বিভাগের একজন শিক্ষিকা । তিনি এখন লি পিং জেলার উপ-প্রধান । ২০০৩ সালে তিনি দশম জাতীয় গণ কংগ্রেসের প্রতিনিধি নির্বাচিত হন । এই জেলায় তিনি হচ্ছেন প্রথম জাতীয় গণ কংগ্রেসের প্রতিনিধি ।
জাতীয় গণ কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবে অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন ,
তিনি জাতীয় গণ কংগ্রেসের একজন প্রতিনিধি হয়েছেন ৫ বছর হল । এর আগে তিনি রাজনৈতিক ব্যাপারে তেমন বেশি জানতেন না । প্রতিনিধি হওয়ার পর আইন , আইনবিধি ও নীতির দিক থেকে তার জ্ঞান অনেক উন্নত হয়েছে । তিনি তুং জাতির ২৬ লাখ লোকসংখ্যার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য গৌরব বোধ করেন ।
শি ওয়েন ছ্যুন বরাবরই জন্মস্থানের জন্য বেশি কাজ করতে পছন্দ করেন । জাতীয় গণ কংগ্রেসের প্রতিনিধি নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি সংখ্যালঘু জাতি এলাকার নির্মাণকাজ ও সংখ্যালঘু জাতির সংস্কৃতি সংরক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে জাতীয় গণ কংগ্রেসের কাছে দশ বারোটি প্রস্তাব দাখিল করেছেন । এগুলোর মধ্যে বহু প্রস্তাবের ওপর সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিশেষ মনোযোগ আকৃষ্ট করেছে । তিনি বলেছেন , যখন তিনি জাতীয় গণ কংগ্রেসের অধিবেশনে অংশ নিতে যান , তখন মতামত ও প্রস্তাব পৌঁছে দেয়ার জন্য বহু গ্রামবাসী তার সঙ্গে আলোচনা করতে আসেন । আলোচনার জন্য কংগ্রেসের অধিবেশনে এই সব মতামত ও প্রস্তাব উথ্থাপিত হবে বলে তারা আশা করেন ।
গণ কংগ্রেসের প্রতিনিধি হওয়ার পর তিনি গ্রামবাসীদের মতামত ও প্রস্তাব কংগ্রেসের অধিবেশনে উথ্থাপন করেন । এর শধ্যে অধিকাংশ প্রস্তাবই বাস্তবায়িত হয়েছে । প্রতিনিধি হিসেবে তাই তিনি খুব সন্তুষ্ট ।
জনসাধারণের প্রতিনিধিত্ব করে তাদের মতামত পৌঁছে দেয়া গণ কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের অন্যতম দায়িত্ব । মঙ্গোলীয় জাতির প্রতিনিধি মাদাম সুপুদাও একই ধরনের দায়িত্ব পালন করছেন ।
তিনি উত্তর চীনের অন্তঃমঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের একটি থানায় বসবাস করেন । এই থানায় যেমন চাষাবাদ তেমনি পশু পালনও করা হয় । স্থানীয় অধিবাসীরা তাকে খুব মর্যাদার চোখে দেখেন । ২০০২ সালে সুপুদা জাতীয় গণ কংগ্রেসের প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। তিনি বলেন , জাতীয় গণ কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে অংশ নেয়ার জন্য গ্রামবাসীরা তাকে যে বিদায় জানালেন , তিনি তা কোন দিনই ভুলে যাবেন না ।
বহু গ্রামবাসী এলেন । তাকে বিদায় জানানোর জন্য তারা দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে বিদায় অভ্যর্থনা জানালেন । তাদের অন্তরঙ্গতায় তিনি আরো ভালভাবে নিজের দায়িত্বের কথা বুঝতে পেরেছেন । তিনি অধিবেশনে ব্যাপকভাবে জনসাধারণের মতামত ও প্রস্তাব উথ্থাপন করতে পৌঁছে দিতে এবং তা গ্রামবাসীদের সেবা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ।
গত ৪ বছরে সুপুদা উপস্থাপিত বহু প্রস্তাব ু কার্যকর হয়েছে । গ্রামবাসীদের প্রস্তাবের কার্যকর করতে না পারার জন্য তিনি খুব চিন্তিত হতেন । ২০০৪ সালে জন্মস্থলের স্কুলে শিক্ষার ব্যবস্থা সংস্কার সংক্রান্ত সুপুদার প্রস্তাব কার্যকর করা হয় । ফলে ২০০৬ সালে লেখাপড়ার জন্য ব্যবহার্য একটি নতুন দালান নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে । ২০০৫ সালে তিনি থুং লিয়াও শহরের লুপেই থানায় একটি ছোট জলাধার গড়ে তোলা সংক্রান্ত প্রস্তাব উপস্থাপন করেন । তখন সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ তার এই প্রস্তাবের উত্তর দেয় নি । কারণ এই ধরনের ছোট প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষমতা স্থানীয় সরকারের । ফলে তিনি অন্তর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের গণ কংগ্রেসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে তার মতামত পৌঁছে দেন । স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের জলসেচ বিভাগ তার প্রস্তাবের ওপর অত্যন্ত মনোযোগ দেয় । ফলে এই ছোট জলাধারের নির্মাণকাজ খুব শীঘ্রই শুরু হবে । সুপুদা বলেন ,
ব্যাপক কৃষক ও পশুপালকদের একটির পর একটি কামনা ও প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয়েছে । এতে সুপুদা খুব খুশি । জন্মস্থানের ছেলেমেয়েরা আধুনিক স্কুলে পড়তে পারার জন্য তিনি খুব গৌরব বোধ করেছেন ।
শ্রোতাবন্ধুরাঃ শি ওয়েন চ্যুন ও সুপুদার মতো সংখ্যালঘু জাতির এলাকার প্রতিনিধিরা আলোচ্য বিষয় ও প্রস্তাব দাখিল করার পদ্ধতিতে সংখ্যালঘু জাতির এলাকার বিকাশের জন্য পরামর্শ উপস্থাপন করেছেন । এই সব আলোচ্য বিষয় ও প্রস্তাবের মাধ্যমে সংখ্যালঘু জাতির এলাকার জনগণের উত্পাদন ও জীবনযাত্রার মান উন্নত করার ব্যাপারে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করা হয়েছে । যেমন অন্তর্মঙ্গোলিয়া উত্তরাংশের উচুমুছিং তৃণভূমিতে মানতুফুপাওলিকে নামে মঙ্গোলীয় জাতির একটি গ্রাম আছে । গত কয়েক বছরে তৃণভূমিতে ক্রমানুসারে বিভিন্ন পর্যায়ে পশুপালনের জন্য কয়েকটি অংশ ভাগ করা এবং স্থায়ী গবাদি পশুশালা গড়ে তোলার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে । ফলে পশুপালকদের বার্ষিক আয় ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে । এই গ্রামের প্রধান বলেন ,
তৃণভূমিতে ক্রমানুসারে পশুপালনের ব্যবস্থা নেয়ার ফলে তৃণভূমির পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে । পশুপালকদের আয় বেড়েছে । বাড়িতে বাড়িতে বায়ু শক্তি চালিত বিদ্যুত্ যন্ত্র ও টেলিফোন ব্যবহার করা হচ্ছে । এতে চীনের ব্যাপক সংখ্যালঘু জাতির এলাকার লক্ষণীয় পরিবর্তন প্রতিফলিত হয়েছে ।
|