আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার নির্বাহী পরিষদ ১১ জুন ভিয়েনায় পাঁচ দিনব্যাপী সম্মেলনের আয়োজন করে এ সংস্থার মহাপরিচালক মোহাম্মেদ এল বারাদেইর দাখিল করা ইরানের পরামাণু সমস্যা সংক্রান্ত সর্বশেষ রিপোর্ট ও ২০০৬ সালের বার্ষিক রিপোর্টটি যাচাই করছে । জানা গেছে , নির্বাহী পরিষদ ১৩ জুন থেকে ইরানের পরমাণু সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবে । এ সমস্যা সংক্রান্ত আলোচনা এখন অচলাবস্থায় পড়েছে বলে বিভিন্ন পক্ষ এ আলোচনার ওপর নিবিড় দৃষ্টি রাখছে ।
সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনেই ইরানের পরমাণু সমস্যা সংক্রান্ত আলোচনায় সমস্যা দেয়া দিয়েছে । এ পি'র খবরে প্রকাশ , এ দিন বারাদেই ও ইরানের পরমাণু আলোচনার উপ প্রতিনিধি জাবিদ ভাইদির সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল , কিন্তু পরে তা বাতিল হয়েছে । এ বৈঠককে ৩১ মে অনুষ্ঠিত ইইউ'র কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা নীতি বিষয়ক উচ্চ পদস্থ প্রতিনিধি জাভিয়ের সোলানা ও ইরানের পরমাণু আলোচনার শীর্ষ প্রতিনিধি আলি লারিজানীর বৈঠকের পরবর্তী ধাপ হিসেবে মনে হয় । বারাদেই সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইরানের পরমাণু সমস্যার অচলাবস্থার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন , ইরান ও পশ্চিমা দেশগুলোর বৈরিতার আরো অবনতি হবে ।
নিরাপত্তা পরিষদের ১৭৪৭ নং প্রস্তাব অনুযায়ী , ২৩ মে হল ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পরিকল্পনা সম্পর্কিত সব তত্পরতা বন্ধ করার চূড়ান্ত সময়সীমা । সেদিন প্রকাশিত আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে যে , গত কয়েক সপ্তাহে ইরান শুধু নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করে নি তা ছাড়া , তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পরিকল্পনা আরো বাড়িয়েছে । এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে নিরাপত্তা পরিষদের উচিত ইরানের ওপর আরো বেশি শাস্তি আরোপ করা । তবে ইইউ যদিও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে সমর্থন করে , তবুও আশা করে যে কূটনৈতিক পদ্ধতিতে এ সমস্যার সমাধান হবে । এ প্রেক্ষাপটে ইইউ ও ইরানের বেশ কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে , তবে কোনো বাস্তব অগ্রগতি অর্জিত হয় নি । বর্তমানে জার্মানীর পোজদামে অনুষ্ঠিত জি-আট গ্রুপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলন ও হেলিগেন্ডামে অনুষ্ঠিত জি-আট গ্রুপের শীর্ষ সম্মেলনে ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পরিকল্পনা বন্ধ করার তাগিদ দেয়া হয়েছে । না হলে ইরান নিরাপত্তা পরিষদের আরো কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হবে । তবে ইরান বার বার স্পষ্টভাবে বলেছে যে সে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পরিকল্পনা বন্ধ করবে না । তাই ইরানের পরমাণু সমম্যা সংক্রান্ত আলোচনা অচলাবস্থায় পড়েছে ।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়ে এ সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছে , তবে তা সফল হয় নি । আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক বারাদেই এ প্রস্তাব দিয়েছেন যে , কঠোর পরীক্ষার শর্তে ইরানকে সীমিত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ তত্পরতা করার অনুমোদন দেয়া যায় । তবে যুক্তরাষ্ট্র ও কিছু ইউরোপীয় দেশগুলো এ প্রস্তাবের বিরোধীতা করে ।
বিশ্লেষকদের ধারণায় , ইরানের পরমাণু আলোচনা অচলাবস্থায় পড়ার মৌলিক কারণ হল উভয়ই পক্ষের পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থা নেই । ইরান বার বার বলেছে যে , পরমাণু অস্ত্র অবিস্তার চুক্তির স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে ইরানের শান্তিপূর্ণভাবে পরমাণু শক্তি ব্যবহার করার অধিকার আছে । তবে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে ইরানের পরমাণু পরিকল্পনার চূড়ান্ত লক্ষ্য হল পরমাণু অস্ত্র অর্জন করা । তা আঞ্চলিক ও বিশ্বের শান্তির জন্য হুমকি হবে । জার্মানীর তথ্য মাধ্যম মনে করে , যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কারণে ইরানের পরমাণু নীতি আরো কঠোর হয়েছে ।
বারাদেই এবার আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার নির্বাহী পরিষদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছেন , ইরানের পরমাণু সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টায় অগ্রগতি অর্জিত হয় নি । ভবিষ্যতে ইরানের পরমাণু বোমা উদপাদনের স্বামর্থও অর্জন করার সম্ভাবনা রয়েছে । পরমাণু সমস্যায় ইরান ও পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেষ হয় নি । তবে ইরানের পরমাণু সমস্যা সংক্রান্ত আলোচনার দরজা এখনো বন্ধ হয় নি । পারস্পরিক আস্থা বাড়ানো হল সমস্যা সমাধানের একমাত্র ভিত্তি ।
|