৭ জুন জার্মানীর জি ৮ শীর্ষ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন , জ্বালানী নিরাপত্তা, আফ্রিকাকে সাহায্য দেওয়া, বিশ্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শীর্ষ সম্মেলনের আগে কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিরোধ ও মতভেদ দেখা দেয়ার কথা ছিল, কিন্তু অপ্রত্যাশিত ব্যাপার হল, জি ৮ শীর্ষ সম্মেলনে এ সব বিষয়ে মতৈক্য অর্জিত হয়েছে।
প্রথমত: এবার শীর্ষ সম্মেলনে জলবায়ু সংরক্ষণে লক্ষ্যনীয় অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। শিল্পোন্নত ৮টি দেশের গোষ্ঠির নেতারা মনে করেন. গ্রিণ হাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা প্রণয়ন করা প্রয়োজনীয়। এ লক্ষ্যমাত্রা হল, ২০৫০ সাল নাগাদ গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ ১৯৯০ সালের ভিত্তিতে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেয়া হবে। সম্মেলন শেষ হওয়ার পর , জার্মানীর চ্যান্সেলর বলেছেন, বিভিন্ন সদস্য দেশ এক মত হয়েছে যে, চলতি বছরের শেষ দিকে ইন্দোনেসিয়ার বালি দ্বীপে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘ পরিবেশ সম্মেলনে জাতিসংঘের কাঠামোতে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যা নিয়ে আলোচনা হবে। জলবায়ু সংরক্ষণের ব্যাপারে জি ৮ প্রথম বার ষ্পষ্টভাবে জাতিসংঘের ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। শীর্ষ সম্মেলনের আগে, গ্রিণ হাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসের ব্যাপারে বিরাট মতভেদ বিরাজ করছিল বলে মাত্র কয়েক ঘন্টার আলোচনায় দু'পক্ষের মধ্যে মতভেদ দূর করা হয়েছে তা সত্যিই প্রত্যাশারবাইরের। কেউ কেউ মনে করেন, এটা জার্মানীর চ্যান্সেলার মারকেলের অবদান। কারণ তিনি নমনীয় কূটনৈতিক পদ্ধতি ব্যবহার করে শেষ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব পরিবর্তন করেছেন। কিন্তু কোন কোন বিশ্ব সংস্থা মনে করে, জি ৮ শীর্ষ সম্মেলনে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে তা অষ্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্র মৌলিকভাবে তার মনোভাব পরিবর্তন করেনি। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আরও কঠোর পদক্ষেপ নেবে কি না তার জবাব চলতি বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘ জলবায়ুর সম্মেলনে পাওয়া যাবে।
দ্বিতীয়ত:মধ্য-ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রেরক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েনে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বিরোধেএবার শীর্ষ সম্মেলনে নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে। শীর্ষ সম্মেলনের আগে , এই ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে যথেষ্ট কথা কাটাকাটি হয়েছিল। এমন কি, রুশ প্রেসিডেন্টপুতিন হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেছেন যে, ইউরোপীয় লক্ষ্যবস্তু রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের শিকার হবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষীয় বৈঠক করার সময় পুতিন একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন যা বুশকে ও সারা বিশ্বকে আতঙ্কিতকরে।পুতিনের প্রস্তাব অনুযায়ী, ইরান থেকে আসা ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি দূর করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইরানের প্রতিবেশী দেশ আজার্বাইজানে স্থাপন করবে। সুতরাং মধ্য ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের ব্যবস্থা স্থাপনের প্রয়োজন নেই। অন্য দিকে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ইউরোপীয় লক্ষ্যবস্তুরকে লক্ষ্য করবে না। পুতিনের এই প্রস্তাবে বুশ হতভম্ব হয়ে যান। তিনি কেবল বলেন, পুতিনের প্রস্তাব খুবই মজা। তবে উত্তেজনা সৃষ্টি করার চাইতে সহযোগিতা চালানো ভাল। এক খবরে বলা হয়েছে, দু জন এক মত হয়েছে, চলতি বছরের ১ জুলাই যখন পুতিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসফর করবেন তখন দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
তৃতীয়ত: শিল্পোন্নত ৮টি দেশের গোষ্ঠি বিশ্ব অর্থনীতির পরিস্থিতি সম্পর্কে ইতিবাচক যাচাই করেছে। সম্মেলনের আগে, কোন কোন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিশ্ব অর্থনীতি ভারসাম্যহীনতার সম্মুখীন হয়েছে। ইউরোপীয় ও আমেরিকান দেশসমূহের বাণিজ্য ঘাটতি , উন্নয়নশীল দেশসমূহের বাণিজ্যিক উদ্বৃত্ত , এশিয়ার মূদ্রা হারের বৃদ্ধি , এ সব সমস্যার সমাধান করতে হবে। কিন্তু এবারের জি ৮ শীর্ষ সম্মেলনে মনে করা হয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের অর্থনীতি ভারসাম্যতার সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অবশ্যই , এবারের শীর্ষ সম্মেলনে সমস্ত সমস্যার সমাধান করা হয়েছে তা নয়। যেমন , কোসোভার চূড়ান্ত মযার্দা, দারফু সমস্যা ইত্যাদি।
|