v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-06-07 17:10:17    
 আনহুই প্রদেশের ফাংইয়াং ও শুয়েনচেন

cri
    আনহুই প্রদেশের ফাংইয়াং জেলার কথা বলতে গেলে প্রথমেই ৬০০ বছর আগেকার মিং রাজবংশের প্রথম সম্রাট চু ইউয়ান চাংয়ের কথা মনে পড়ে। মিং রাজবংশ প্রতিষ্ঠার সময় চু ইউয়ান চাং ফাংইয়াং নগরে কয়েক লাখ মিস্ত্রীকে কাজে লাগিয়ে ৬ বছর সময় নিয়ে "মধ্য রাজধানী" নির্মাণ করেন।

    কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এই মধ্য রাজধানী নির্মাণের কাজ মোটামুটি শেষ হওয়ার দিকে চু ইউয়ান চাং হঠাত্ এই মধ্য রাজধানী পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। সে জন্য এই অসম্পুর্ণ মধ্য রাজধানীর ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষিত রয়েছে। কোন কোন বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ফাংইয়াং হচ্ছে চীনের রাজপ্রাসাদ নির্মাণের প্রাথমিক নঁকশা । স্থানীয় ব্যক্তিরা এ ইতিহাসের জন্য গর্ব বোধ করেন। বহু বছর ধরে ফাংইয়াং শহরে বসবাসকারী বৃদ্ধা লি ইউ রুই বলেছে: "এখানে মাটির নিচে রয়েছে জেড পাথর দিয়ে তৈরী রাস্তা। শহরের উত্তর,দক্ষিণ , পূর্ব ও পশ্চিম দিকে চারটি বড় দরজাও সংরক্ষিত রয়ে মধ্য রাজধানীর প্রধান স্থাপত্য হচ্ছে বহির ভাগের মধ্য ভাগের ও ভিতরের নগর। বহির নগরকে মধ্য রাজধানী বলা হয়।

    মধ্য নগর হচ্ছে রাজপ্রাসাদ । ভিতর নগরকে ফরবিডন সিটি বলা হয়। মধ্য রাজধানীর আকার ও বিলাসের বিষয়টি পেইচিংয়ের রাজপ্রাসাদকেও ছাড়িয়েছে।এখানকার স্থাপত্য চীনের প্রাচীন রাজধানীর স্থাপত্য ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা অধিকার করে আছে । চীনের সমাজ বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির মিং রাজবংশ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সিয়া ইয়ু রুই জানিয়েছেন,"সম্রাট চু ইউয়ান চাং রাজধানীর জনসংখ্যা বাড়ানোর জন্য সারা দেশ থেকে পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ করে ছিলেন । দক্ষিণ চীন ও উত্তর চীনের লোক, হান জাতি, হুই জাতি, ইয়াও জাতির লোকসহ মোট ৬ লাখ লোককে ফাংইয়াং শহরে পাঠানো হয়েছে। এবারের পুনর্বাসন প্রকল্প হচ্ছে চীনের পুনর্বাসন ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধরনের পুনর্বাসন প্রকল্প । কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্থানটিকে মিং রাজবংশের রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলা হয় নি। এ পরিপ্রেক্ষিতে সম্রাট চু ইউয়ান চাংএর মৃত্যুর পর ফাং ইয়াং নগরের দরিদ্র রূপ ক্রমে ক্রমে দেখা দিতে শুরু করে । এরপর ফাংইয়াং এর বহু লোক বাইরে গিয়ে ভিক্ষাও করেছে । ভিক্ষা করার জন্য ফাং ইয়াং হুয়াকু নামে এক ধরনের লোকসংগীত ও নৃত্য সে সময় খুব প্রচলিত ছিল ।

    ফাংইয়াং-এ আসা পর্যটকরা সবই ফাংইয়াং হুয়াকু অর্থাত্ ফুল-ঢাক কিনতে পছন্দ করেন। এখন ফাংইয়াং জেলা সরকার ফাংইয়াং ফুল-ঢাককে ফাংইয়াং জেলার নাম স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে গড়ে তুলেছে। ২০০৬ সালের জুন মাসে ফাংইয়াং ফুল-ঢাক চীনের প্রথম জাতীয় অবস্তুগত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ফাংইয়াং জেলার প্রধান ফাং ডি জুন বলেছেন, "ফাংইয়াং জেলার পর্যটন সম্পদ খুব ভালো। এখানকার লুংশিং মন্দির, মধ্য রাজধানীর প্রাচীন নগর ও মিং রাজবংশের সমাধিসহ মিং রাজবংশের সংস্কৃতি প্রতিফলিত হয়েছে । ঐতিহাসিক সংস্কৃতি ছাড়াও এখানে আরো সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যও রয়েছে। যেমন ফাংইয়াংয়ের দক্ষিণাংশের চিউ শান গুহা , ওয়োচিউ হ্রদ জলাধার ও সিয়াওকাং গ্রাম । "

    আমি আরেকটু ব্যবহারিক তথ্য আপনাদের জানিয়ে দিই। আনহুই প্রদেশের রাজধানী হোফাই থেকে ট্রেন বা পাবলিক বাসে করে ফাংইয়াং জেলায় যাওয়া যায়। ফাংইয়াংয়ে পর্যটনের জন্য কমপক্ষে দু'দিন থাকলে ভালো হয়। প্রথম দিন আপনি ড্রাম ভবন, লুংশিং মন্দির ও মিং রাজবংশের রাজপরিবারের সমাধি পরিদর্শন করুন। রাতে রাস্তায় ফাংইয়াং ফুল ঢাক পরিবেশন দেখবেন। সম্ভব হলে ফুল ঢাক খেলাও শিখবেন। দ্বিতীয় দিন চিউ শান গুহা ও শেনইওয়া মন্দিরে বেড়াতে যান। এ দু'দিনের খরচ হবে তিন থেকে পাঁচ শ ইউয়ান রেনমিনপি এর মতো।

    কলম, কালি, কাগজ ও কালি পাথর হচ্ছে চীনের ঐতিহ্যিক চিত্রাঙ্কনের জিনিস। এই চারটি জিনিস হচ্ছে লেখাপড়ার চারটি প্রয়োজনীয় দ্রব্য। মধ্যে চীনের আনহুই প্রদেশের শুয়েনচেন নগর কলম, কালি, কাগজ ও কালি পাথর তৈরীর ইতিহাস হাজার বছরের বেশি। এখানকার উত্পাদিত কলম, কালি, কাগজ ও কালি পাথরের গুণগত মান ও শ্রেষ্ঠ উত্পাদনের পদ্ধতির জন্য মূল্যবান সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

    শুয়েনচেনে উত্পাদিত কাগজকে শুয়েন কাগজ বলা হয়। এটা হচ্ছে এক ধরনের উচ্চ মানের চিত্রাঙ্কনের কাগজ। এ কাগজ খুব নরম , রংও পরিবর্তন হয় না। এখন শুয়েন কাগজ চীনের চিত্রাঙ্কন কাগজের বৈশিষ্টে পরিণত হয়েছে। শুয়েন চেনের অধিনে চিং নামে একটি জেলা আছে। সেখানে চীনের বৃহত্তম শুয়েন কাগজ উত্পাদন শিল্প প্রতিষ্ঠান --- চীনের শুয়েন কাগজ গোষ্ঠি আছে। এই কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার শা কুয়াং বিন জানিয়েছেন, "স্থানটি হচ্ছে শুয়েন কাগজের আদিম উত্পাদনের স্থান ও সংরক্ষণ এলাকা। এখানে বৈশিষ্ট্যময় ভৌগলিক পরিবেশ ও বিশেষ পানি সম্পদ আছে। আরো গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো আমাদের ঐতিহ্যিক প্রযুক্তি আছে।"

     শা কুয়াং বিন বলেছেন, চন্দনকাঠের ছাল ও ধানের খড়সহ নানা কাঁচা মাল দিয়ে ঐতিহ্যিক প্রযুক্তির মাধ্যমে শুয়েন কাগজ তৈরি হয়। শুয়েন কাগজ তৈরির ১৮০টি প্রক্রিয়া আছে। প্রত্যেক প্রক্রিয়া হাত দিয়ে করতে হয় । উল্লখ করা যেতে পারে যে, শুয়েন কাগজ নকল করা খুব কঠিন। চিং জেলার প্রাকৃতিক পরিবেশ ছাড়া একটি শ্রেষ্ঠ শুয়েন কাগজ তৈরি করা যায় না। চিং জেলার কাগজ উত্পাদনকারীরা প্রায়শই জাদুঘরে যান। তাঁরা যত্ন সহকারে হাজার হাজার বছর আগের চিত্র দেখেন এবং শুয়েন কাগজের গুণগত মান উন্নয়নের চেষ্টা করেন।

    শুয়েন কাগজ ছাড়া চিং জেলার আরেকটি বিখ্যাত পণ্য হচ্ছে শুয়েন কলম। চীনের ব্রাশ কলম হচ্ছে চীনের চিত্র আঁকার ঐতিহ্যিক বস্তু । শুয়েন কলম হচ্ছে চীনের ব্রাশ কলমের মধ্যে ইতিহাস সবচেয়ে দীর্ঘ এক রকম কলম। চিং জেলার শুয়েন কলম ইনস্টিটিউটের প্রধান শা চাং জুন বলেছেন, বিভিন্ন কাজের জন্য তৈরি শুয়েন কলম তৈরী করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর লোম বাছাই করতে হয়।

    কালি হচ্ছে চীনের ঐতিহ্যিক ছবি আঁকা ও লেখার প্রধান রং। চীনা কালির ইতিহাস ৫ হাজার বছরেরও বেশি। চীনা কালির শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি হচ্ছে হুই কালি। অর্থাত্ চীনের আনহুই প্রদেশের উত্পাদিত কালি। এখন শুয়েন চেন হুই কালি নির্মানের ঘাটিতে পরিণত হয়েছে। চিসি জেলায় হুকাইওয়েন নামে একটি কালি কোম্পানি আছে। এই কোম্পানির ইতিহাস ২০০ বছরের বেশি। এটা হচ্ছে চীনের সবচেয়ে বড় ও প্রযুক্তিগত মান সম্পন্ন সবচেয়ে ভালো একটি হুই কালি কারখানা। এই কারখানা একজন বৃদ্ধের মতো কালি তৈরির প্রযুক্তি সংরক্ষিত রয়েছে। কালি উত্পাদনের কাঁচা মাল হচ্ছে পাইন গাছের শাখা আগুন জ্বালানোর পর বের হওয়া ধোঁয়া, উপযুক্ত পরিমাণের হাঁড়ের সিরিশ ও কিছু বিশেষ ঔষধ । জানা গেছে, কালির মধ্যে যদি দারুচিনি ও চিনসেনসহ নানা মূল্যবান চীনা ঔষধ দিলে কালির বিশেষ সুগন্ধ বের হয় এবং তা দিয়ে আঁকা ছবি দীর্ঘকালীন সংরক্ষণ করা যায়। 

    উত্পাদিত কালি দিয়ে ছবি আকঁতে চাইলে প্রথমে কালিকে পানিতে গুলিয়ে নেয়া দরকার। চীনের কালি পাথর অর্থাত্ চীনা ভাষায় "ইয়া তাই হচ্ছে কালি প্রস্তুত করা । শুয়েন চেনের নিকটে অবস্থিত ইন জেলা হচ্ছে বিখ্যাত কালি পাথর উত্পাদনের ঘাটি। শুয়েন চেন ও ইন জেলার দূরত্ব কম বলে এই দুটি জায়গার বিনিময় আরো বিস্তারিত হলে ভালো হতো ।

    শুয়েন চেনের কলম, কালি, কাগজ ও কালি পাথর সমিতির চেয়ারম্যান চিয়াং সিয়েন চিন বলেছেন, "কলম, কালি, কাগজ ও কালি পাথর হচ্ছে চীনা জনগণের জ্ঞানের ফসল । কয়েক হাজার বছরের সাংস্কৃতিক দ্রব্য এবং চীনের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি ও চীনা সভ্যতার প্রতীক হয়েছে। তিনি বলেছেন, "আমাদের কলম, কালি, কাগজ ও কালি পাথর শিল্প উন্নয়নের বিরাট সুযোগ আছে। চীনারা এর ওপর গভীরভাবে আলোচনা করে থাকে । "

    আনহুই প্রদেশের শুয়েন চেন নগরের সংক্ষিপ্ত পরিচয় শুনলেন। আমি উল্লেখ্য করতে চাই যে, চীনের কলম, কালি, কাগজ ও কালি পাথর ছাড়া আনহুই প্রদেশের শুয়েনচেনে আরো রয়েছে সুন্দর পাহাড় ও পরিষ্কার নদ-নদী, টাটকা বায়ু, প্রচুর প্রাচীন স্থাপত্য। শুয়েনচেন সত্যিই পর্যটনের এক ভালো জায়গা।

    আনহুইয়ের হুয়াশান থেকে শুয়েন চেনে যেতে মাত্র ৩ ঘন্টা সময় লাগে। পরিবহনের ব্যবস্থা সুসম্পন্ন ও সুবিধাজনক। পর্যটকরা হুয়াশান পাহাড়ে ভ্রমণের পর গাড়ি বা ট্রেনে শুয়েচেনে আসতে পারেন।