চীন ও কোস্টারিকা সরকার ৭ জুন ঘোষণা করেছে, পয়লা জুন দু'দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রদূত পর্যায়ের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। চীনের সামাজিক বিজ্ঞান একাডেমির লাতিন আমেরিকা বিষয়ক গবেষক সুই শি ছেং মনে করেন, দু'দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন সম্পর্কে গভীর প্রভাব ফেলবে। সঙ্গে সঙ্গে তা তাইওয়ান কর্তৃপক্ষের "ডলার পররাষ্ট্র নীতি"র অবসানের প্রমান।
চীন ও কোস্টারিকা সরকারের যৌথ ইস্তাহারে বলা হয়েছে, কোস্টারিকা সরকার শুধু এক চীন স্বীকার করে। চীন গণতান্ত্রিক দেশের সরকার হলো চীনের একমাত্র বৈধ সরকার। তাইওয়ান হলো চীনের একটি অবিছিন্ন অংশ। সুই শি ছেং মনে করেন, মধ্য আমেরিয়ার কিছু দেশ আগে তাইওয়ানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। চীন কোস্টারিকার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু হওয়ায় এই অবস্থার সুষ্ঠু উন্নয়ন হচ্ছে। সুই শি ছেং বলেছেন:
"কোস্টারিকা চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয় অঞ্চলে তাইওয়ানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনকারী দেশ ১৩ থেকে ১২টিতে নেমে গেছে। কোস্টারিকা মধ্য-আমেরিকায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রেসিডেন্ট ওস্কার আরিয়াস ১৯৮৮ সালে নোবেল শান্তি পুরষ্কার পেয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি দু'দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করলে শুধু দু'দেশের সম্পর্ক ত্বরান্বিত করা ছাড়া, চীন ও অন্যান্য মধ্য-আমেরিকা ও ক্যারিবিয় অঞ্চলের দেশের সম্পর্কও ত্বরান্বিত করবে।"
সুই শি ছেং মনে করেন তাইওয়ান কর্তৃপক্ষ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে "ডলার পররাষ্ট্র নীতি"র মাধ্যমে কিছু দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার প্রয়াস চালিয়েছে। কিন্তু তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি। সঙ্গে সঙ্গে তাদের ডলার পররাষ্ট্র নীতি লাতিন আমেরিকার দুর্নীতি অবস্থা অবনতি করেছে। যেমন কোস্টারিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট তাইওয়ানের ঘুষ নিয়েছেন বলে সংবাদ মাধ্যম এই খবর প্রকাশের পর কোস্টারিকার জনগণের মনে খারাপ প্রভাব ফেলেছে।
সুই শি ছেং বিশ্লেষণ করে বলেছেন, তাইওয়ান কর্তৃপক্ষের "ডলার পররাষ্ট্র নীতি" মধ্য-আমেরিকায় অবনতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চীনের উন্নয়ন ও লাতিন আমেরিকা দেশের ওপর গুরুত্ব দেয়াও চীন-কোস্টারিকা কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের আরেকটি কারণ। সুই শি ছেং বলেছেন:
"প্রথমত আন্তর্জাতিক সমাজে চীনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভূমিকা দিন দিন বাড়ছে। চীনের অর্থনীতির উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক প্রভাব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো চীনের গুরুত্ব নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে। চীন জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্য দেশ। তারা চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে ইচ্ছুক। দ্বিতীয়ত, চীন ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর সম্পর্ক উন্নয়ন খুব দ্রুত হচ্ছে। চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাওসহ চীনের শীর্ষ নেতারা লাতিন আমেরিকা সফর করেন। চীন ও লাতিন আমেরিকার মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিনিময়ও দ্রুত বাড়ছে। যা লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের আরেকটি আকর্ষনীয় বিষয়।"
কোস্টারিকার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পর এশিয়া কোস্টারিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হয়েছে। চীন হলো কোস্টারিকার এশিয় অঞ্চলের প্রধান অংশীদার। ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত কোস্টারিকা থেকে চীনে রপ্তানি মূল্য হলো ৫০ কোটি মার্কিন ডলার। যা ২০০৫ সালের অনুরুপ সময়ের তুলনায় ১১৭শতাংশ বেশি। সুই শি ছেং মনে করেন,
"দু'দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর দু'দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতা নিশ্চয় আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠবে। আমার বিশ্বাস ভবিষ্যতে দু'দেশের পন্ডিত ও শিক্ষা ক্ষেত্রের মত বিনিময় ও সহযোগিতা আরো বাড়বে।"
|