v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-06-06 16:19:36    
উ শাও লি ও তার " লেই ফোং প্রতিদান কার্যালয়"

cri

    উত্তর-পূর্ব চীনের চিন লিন প্রদেশের রাজধানী ছিয়াং ছুন শহরে রয়েছে একটি বিশেষ বেসরকারী সংগঠন । তার নাম " লেই ফোং প্রতিদান কার্যালয়" । ছিয়াং ছুনের শহরবাসী উ শাও লি নিজের খরচে এ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছেন । এ সংগঠনের কাজ হচ্ছে সমাজে যেসব ভালো লোক অন্যদের সাহায্য করেছেন , সেসব লোককে খুঁজে বের করা এবং তাদের বৈষয়িক সহায়তা করা এবং মানসিক সান্ত্বনা দেয়া ।

    ১৯৫৬ সালে উ শাও লি জন্মগ্রহণ করেন । যখন তিনি বড় হতে থাকেন , তখন চীনে লেই ফোংয়ের কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণ অভিযান চালানো হয় । লেই ফোং ছিলেন চীনা গণ মুক্তি ফৌজের একজন সাধারণ সৈনিক । ১৯৬২ সালের একদিন ট্রাক চালিয়ে মাল বহনের সময় এক দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান । তখন তার বয়স হয়েছিল মাত্র ২২ বছর । তবে এ স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি সোত্সাহে অন্যদের সাহায্য করে অসংখ্য ভালো কাজ করেছিলেন । তিনি তার ডাইরীতে লিখেছিলেন , " আমি আমার সীমিত জীবনকে অপরিসীম জনসেবার কাজে উত্সর্গ করবো ।" লেই ফোংয়ের নি:সার্থ আত্মত্যাগ ও মনেপ্রানে জনগণের সেবা করার ভাবমানস চীনাদের শিক্ষাগ্রহণের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্তে পরিণত হয় । তখন থেকে লেই ফোংয়ের নাম সোত্সাহে অন্যদের সাহায্য করা এবং অন্যদের যত্ন দেয়া ও ভালোবাসার পরিচায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে । লেই ফোংয়ের মর্মবস্তু চীনে যুগ যুগ ধরে প্রচলিত হয়ে আসছে ।

    উ শাও লি তার ব্যক্তিগত জীবনে সবসময় দেখতে পান যে , অনেক ভালো লোক লেই ফোংয়ের মত নিজেদের নামের উল্লেখ না করে অন্যদের সাহায্য করে থাকেন । তিনি বলেছেন ,

    আমার মনে আছে , ৮ থেকে ৯ বছর আগে আমি ট্যাক্সি চালাতাম । একদিন প্রবল তুষার পড়ছিল । পথে হঠাত আমার গাড়ির টায়ার ফেটে যায় । একজন পথচারী আমার কাছে এসে স্বতস্ফুর্তভাবে বিকল্প টায়ার লাগানোর ব্যাপারে সাহায্য করলেন । তার কাছে আমি খুবই কৃতজ্ঞ ছিলাম । অথচ পরে আমি আর তার সংগে যোগাযোগ করতে পারি নি। সেসময় আমার মনে একটি ধারণা হলো। আমার অর্থনৈতিক অবস্থা স্বচ্ছল হলে আমি একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করবো । সংগঠনটির কাজ হবে যেসব লোক চুপিসারে ভালো কাজ করেছেন , সেসব লোককে সহায়তা করা ।

    ২০০৬ সালের এপ্রিল মাসে উ শাও লি নিজের জমানো ৫০ হাজার ইউয়ান দিয়ে দেশের প্রথম বেসরকারী সংগঠন- লেই ফোং প্রতিদান কার্যালয়" প্রতিষ্ঠা করেন ।

    কার্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর অল্প দিনের মধ্যে কিছু সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবককে আকৃষ্ট করেছে । তারা মিলিত হয়ে প্রতিদানের লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণের চেষ্টা করেন । যারা অন্যদের সাহায্য করে ভালো কাজ করেছেন , কার্যালয়টির স্বেচ্ছাসেবকরা সারা দেশের বড় বড় গণ মাধ্যমের মাধ্যমে এবং নিজেদের আশেপাশের লোকদের মধ্যে তাদেরকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন । তদন্ত ও সফরের মাধ্যমে যখন স্বেচ্ছাসেবকরা নিশ্চিত হন যে , অন্যদের সাহায্যকারী ভালো লোকেরা অর্থনৈতিক অসুবিধায় পড়েন , তখন লেই ফোং প্রতিদান কার্যালয়" তাদের আর্থিক সহায়তা করে থাকে এবং নিয়মিত তাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে খোঁজ খবর নেন ।

    বুড়ো ইয়াং ছিং হুয়ান চি লিন প্রদেশের ছিয়াং ছুন শহরে বসবাস করেন । তিনি দশ বারো বছর ধরে স্বেচ্ছায় নিজের পাড়ায় রাস্তা নির্মাণ করেন এবং ফুল , ঘাস ও গাছ লাগান । তার নিজের অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন ভালো নয় । অথচ তিনি খুবই সাদাসিধে জীবন যাপন করেন । তার প্রতিবেশীরা অসুবিধায় পড়লে তিনি সবসময় সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন । ইয়াং ছিং হোয়ানের তত্পরতা " লেই ফোং প্রতিদান কার্যালয়"কে বিমুগ্ধ করেছে । কার্যালয়টি বুড়ো ইয়াংকে সান্ত্বনা হিসেবে ৩০০ ইউয়ান পাঠাল এবং তাকে কিছু পুষ্টিকর খাদ্যবস্তুও পাঠাল । স্বেচ্ছাসেবকরা কার্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে একটি প্রমাণপত্রও প্রদান করলেন ।

    কার্যালয়টির তত্পরতা আবার ইয়াং ছিং হোয়ানকে মুগ্ধ করে তুলেছে । তিনিও এ সংগঠনে শামীল হন । তিনি বলেছেন ,

    কার্যালয়টির তত্পরতা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে । কেন না , আগে কোনোদিন এ রকম ঘটনা ঘটে নি । অতীতে আমি সবসময় নিরবে কিছু ভালো কাজ করতাম । তখনও আমি প্রতিদানের কথা ভাবি নি । পরে আমি অবশ্যই আরো ভালোভাবে কাজ করবে , যাতে আমার উপর সমাজের যত্ন ও ভালোবাসার প্রতিদান করা যায় ।

    গত এক বছরের মধ্যে " লেই ফোং প্রতিদান কার্যালয়ের" কর্মীরা চি লিন প্রদেশের অনেক জায়গায় ঘুরে ঘুরে কাজ করেছেন । তারা বিশ বাইশজন ভালো লোককে নানা দিক থেকে সহায়তা করেছেন ।

    কার্যালয়টির কর্মীরা সবাই স্বেচ্ছাসেবক । এখন তাদের সংখ্যা ষাট ছাড়িয়ে গেছে । তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়স্ক কর্মীর বয়স ৭১ বছর এবং সবচেয়ে কনিষ্ঠ কর্মীর বয়স ৮ বছর মাত্র । বিভিন্ন তত্পরতার মধ্যে তারা নিজেদের ভালোবাসা বিলি করছেন এবং নিজেরাও সুখ ও আনন্দ ভোগ করছেন ।

    স্বেচ্ছাসেবক কোও সু হুয়া একজন অনাথ । তিনি বলেছেন , তার জন্মদিন থেকেই তিনি সবসময় তার উপর সমাজের স্নেহ-মমতা অনুভব করে আসছেন । তাই তিনি লেই ফোং প্রতিদান কার্যালয়ে" শামিল হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন । তিনি চান , তাকে সাহায্যকারী লোকদের মত তিনিও অন্যদের কাছে নিজের ভালোবাসা পৌছে দেবেন । তিনি বলেছেন ,

    যখন আমি বড় হয়ে গেছি , তখন আমি দেখতে পাই , কিছু অনাথ আমার তখনকার মত দিন কাটান । সেসময় আমি ভাবছি আমাদের সমাজের জন্যে আমারও কিছু ভালোবাসা উত্সর্গ করা উচিত ।

    চীনাদের ঐতিহ্যিক ধারণায় লেই ফোংয়ের মত ভালো কাজ করলে প্রতিদানের জন্যে প্রত্যাশা করলে চলবে না । এ প্রসংগে উ শাও লি বলেছেন ,

    চীনে বাজার অর্থনীতি চালু হওয়ার পর ধনী ও দরিদ্রদের মধ্যে ব্যবধান বেড়েই চলেছে । যারা ভালো কাজ করেছেন , তাদের অসুবিধা থাকলে আমার সাধ্যের মধ্যে তাদের সাহায্য করা উচিত । আমার মনে হয় , ভাবমানস ও টাকার সমন্বয় করলে বাজার অর্থনীতি আরো সুসংহত হবে । তাই লেই ফোং থেকে শিক্ষাগ্রহণের ক্ষেত্রেও সৃজনশীলতা আনা উচিত ।

    আমাদের সাক্ষাত্কারের শেষ মুহুর্তে উ শাও লি বলেছেন , তার কার্যালয় হোপেই প্রদেশের থাং শান শহরেও একটি শাখা খুলবে ।