সম্প্রতি প্রকাশিত চীনের ইন্টারনেট তথ্য কেন্দ্রের একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত জুন মাস পর্যন্ত চীনের নেট নাগরিকদের সংখ্যা আট কোটি সত্তর লক্ষে পৌঁছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে । নেটওয়ার্ক চীনের অর্থনীতি , বিজ্ঞান ,প্রযুক্তি , সংস্কৃতি প্রভৃতি ক্ষেত্রেগুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করছে ।
মি: লি সিয়াও জুন দক্ষিণ পুর্ব চীনের ফু চিয়ান প্রদেশের ফুচৌ শহরে বাস করেন । কিছু দিন আগে একটি কাজের জন্য বন্ধুদের সংগে তাকে পেইচিংয়ে আসতে হয়েছে । পেইচিংয়ে এটা তাঁর প্রথম আগমন । অজানা পেইচিংয়ে তার কোনো পরিচিত লোক নেই ।তাই তিনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে হোটেলের রুম বুকিং করেছেন । ফলে পেইচিংয়ে তাঁর থাকার সমস্যা রাতারাতি সুরাহা করা হয়েছে । মিং লি সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , তিনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে পেইচিংয়ের আবহাওয়ার তথ্যও পেয়েছেন ।
তিনি বলেছেন :জাতীয় দিবস উপলক্ষে পেইচিংয়ে ভ্রমনকারীদেরসংখ্যা বহু গুণ বৃদ্ধি পায় , তাই হোটেলের রুম পাওয়া কঠিন । তবে ইন্টারনেটের কল্যানে আমার অনেক সময় বেঁচে গেল । পেইচিংয়ে তাপমাত্রার ব্যবধান বেশী । আমার আশংকা ছিল , দক্ষিণ চীনের মানুষ হিসেবে পেইচিংয়ের আবহাওয়ার সংগে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারব না । তাই ইন্টারনেটে পেইচিংয়ের আবহাওয়ার কিছু তথ্য পেয়ে গরম কাপড় নিয়ে যাত্রা করলাম । বলা বাহুল্য ইন্টারনেটের সুবাদে আমাদের জীবনের অনেক সুবিধা হয়েছে ।
তথ্য সংগ্রহ ছাড়া ইন্টারনেট চীনাদের ডাক যোগাযোগেরপদ্ধতির পরিবর্তন এনেছে। অতীতে টেলিফোন ও চিঠিই চীনাদের যোগাযোগের প্রধান উপায়। ইন্টারনেটের অভ্যুদয়ের পর অধিক থেকে অধিকতর সংখ্যক চীনারা ই- মেল পাঠাতে আরম্ভ করেছেন এবং কিউ কিউ বা এম এস এন প্রভৃতি মাধ্যমে অন-লাইন সংলাপ করছেন । পেইচিং বিদেশী ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী লি এর তং প্রত্যক সপ্তাহে ওয়েব সাইট পরিদর্শন করেন । তিনি ওয়েব সাইট থেকে তাঁর পড়াশোনার বিষয়ের সংগে সম্পর্কিত প্রচুর প্রামান্য তথ্য সংগ্রহ করেছেন । তা ছাড়া তিনি ই-মেলের মাধ্যমে অন্যত্র অবস্থানরত তার সহপাঠীদের সংগে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন । তিনি বলেছেন : আমার উচচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহপাঠীদের মধ্যে কেউ কেউ ক্যানাডায় কেউ কেউ অষ্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করছেন , তাদের সংগে যোগাযোগ বজায় রাখার জন্য আমি এক সপ্তাহে তাঁদের কয়েকটি ই- মেল পাঠাই ।
ই-শপিং অর্থাত ইন্টারনেটের মাধ্যমে কেনাকাটা জিনিষপত্র কেনা চীনাদের জীবনের আরেকটি লক্ষনীয় পরিবর্তন । যারা রোজ কর্মব্যস্ত থাকেন , বাজারে গিয়ে কেনাকাটার সময় নেই , তাদের পক্ষে ইন্টারনেটের মাধ্যমে জিনিষপত্র কেনা একটি আনন্দদায়ক ব্যাপার । তারা প্রায় তাংতাং , তাওবাও, ইছু ও আলিবাবা নামক জনপ্রিয় ওয়েব সাইট পরিদর্শন করেন । এইসব ওয়েব সাইটের মাধ্যমে তাঁরা বাড়ির বাইরে না গিয়েও সহজে তাদের পছন্দসই পন্যদ্রব্য কিনতে পারেন । ইন্টারনেট বিপনী কেন্দ্রে নানা রকম জিনিষ পাওয়া যায় , যেমন , তাজা ফুল , বইপুস্তক , ওডিও আর ভিডিও ডিস্ক , কম্পিউটার , খেলাধূলার সরঞ্জাম , বাচ্চাদের ব্যবহার্য দ্রব্য , ক্ষুদে প্রাণীর খাবার , প্রসাধনীদ্রব্য ইত্যাদি ইত্যাদি ।
ওয়েব সাইট চালু হওয়ায় চীনের জনসাধারনের দৈনন্দিন জীবন আরো বৈচিত্র্যময় হয়েছে । ওয়েব সাইটের অভ্যুদয়ের আগে ছায়া ছবি দেখার জন্য সিনেমা হলে যেতে হত এবং গীতিনাট্য দেখার জন্য থিয়েটারহলে যেতে হত । এখন ওয়েব সাইট পরিদর্শন করলে ছায়া ছবি ও গীতিনাট্য সবই উপভোগ করা যায় । এ ছাড়া চীনের তরুণ তরুণীরা ওয়েব সাইট থেকে নানা ধরনের খেলার সফ্টওয়্যর ডাউনলোড করে চিত্তবিনোদনে তা ব্যবহার করতে পছন্দ করেন । কেউ কেউ নেটে দুর দুরান্তের বন্ধুর সংগে দাবাও খেলেন । উত্তর পুর্ব চীনের সেন ইয়াং শহরের মি: সু চি আমোদপ্রমোদের আধুনিক হাতিয়ার হিসেবে নেট ওয়ার্ক ব্যবহারে বিভোর হয়েছেন ।তিনি বলেছেন: প্রকার আর সংখ্যার দিক থেকে আমোদপ্রমোদেঐতিহ্যিক উপায় সময় আর দুরত্বের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ।কিন্তু ইন্টারনেটে একসংগে একাধিক খেলা করা যায় , সময় আর দুরত্বের কথা বিবেচনা করতে হয় না । এটাই ইন্টারনেটের শ্রেষ্ঠত্ব ।
ইন্টারনেট চীনের বৈদ্যুতিক বানিজ্য উন্নয়নে প্রাণ সঞ্চার করেছে । চীনের কম্পিউটার ব্যবসায়ীরা খদ্দেরদের চাহিদা অনুযায়ী একের পর এক নতুন সার্ভিস চালু করেছেন । ছয় মাস আগে যে নতুন ইয়ান সা ওয়েব সাইট খোলা হয়েছে , তাতে চীনা নাগরিকদের পর্যটনের নানা রকম চাহিদা মেটানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে । চীনের পর্যটকরা এই ওয়েব সাইটে নিজেদের পছন্দসই ভ্রমনের লাইন ও হোটেলের কক্ষের দাম বাছাই করতে পারেন এবং ভ্রমনের সময়সুচী ,যাত্রা আরম্ভের সময় ও পর্যটকদের সংখ্যা স্থির করতে পারেন । আগেভাগে বুকিং দিলে ভ্রমনের সময়ে আর কোনো ঝামেলা নেই । এই ওয়েব সাইটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মি: চাও মিন জে বলেছেন ,তাদের সার্ভিস সবেমাত্র শুরু হয়েছে , তবে এর ভবিষ্যত সম্পর্কে তিনি আশাবাদী । বর্তমানে নেটওয়ার্কে আমাদের সার্ভিসের অনুপাত মাত্র শতকরা দশ থেকে তিরিশ ভাগ । আশা করি , অদুর ভবিষ্যতে তা শতকরা ৫০ ভাগে পৌঁছতে পারবে । আমাদের লক্ষ্য: আমাদের সার্ভিস ধাপে ধাপে টেলিফোনের বদলে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে ।
ইয়ান সা ওয়েব সাইট যে গোষ্ঠির অধীনে তার আছে হোটেল , বিপনী কেন্দ্র , গাড়িবহর প্রভৃতি পর্যটন শিল্পের প্রয়োজনীয় সম্পদ । এই সব সম্পদ সদ্ব্যবহার করে পর্যটকদের জন্য সর্বমুখী সার্ভিসযুগানো যাবে ।
মাত্র দশ বছর কেটে গেল ইন্টারনেট চীনে প্রবেশ করেছে । কিন্তু চীনে ইন্টারনেটের বিস্তার অতিদ্রুত । বিশেষজ্ঞরা মনে করেন , চীনের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও চীনের জনসাধারনের জীবযাত্রার মানের উন্নতিই ইন্টারনেটের দ্রুত প্রচলনের প্রধান কারণ ।
|