v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-05-31 17:21:40    
সমুদ্রের দেবতা পাহাড় -- ছাং তাও(ছবি)

cri

    বন্ধুরা এসব আওয়াজ শোনার পর আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমরা কোথায় যাবো। হ্যাঁ, আজ আমরা আপনাদের একটি সুন্দর দ্বীপে নিয়ে যাবো । তা হচ্ছে চীনের শানতুং প্রদেশের একমাত্র দ্বীপ জেলা, সমুদ্রের দেবতা পাহাড় নামে পরিচিত ছাং তাও ।

     ছাংতাও চীনের পূর্বাঞ্চলের শানতুং প্রদেশে অবস্থিত। তা মূলভুভাগের সঙ্গে বিভক্ত থাকা একটি সামুদ্রিক দ্বীপ । এ দ্বীপ চীনের বোহাই সমুদ্র এবং হুয়াংহাই সমুদ্রের মাঝখানে অবস্থিত। এর আয়তন মাত্র ৫৬ বর্গকিলোমিটার। কাছাকাছি মোট ৩২টি ছোট ছোট দ্বীপ রয়েছে ।

    ছাংতাও'র আবহাওয়া খুবই ভালো ।সারা বছর গড়পড়তা তাপমাত্রা থাকে ১১.৯ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। গ্রীষ্মকালে তা লোকজনের ছুটি কাটানো ও বিশ্রাম নেয়ার চমত্কার স্থানে পরিণত হয়েছে । ছাংতাও'র বৃহত্তম ছাংতাও সেচুরি হোলিডেই হোটেলের পরিচালক সুন ফেং ফেই আপনাদের জন্য ছাংতাও দ্বীপের আবহাওয়ার পরিচয় দিয়েছেন । তিনি বলেছেন, এখানকার দৃশ্যাবলী খুব সুন্দর এবং আবহাওয়াও আরামদায়ক । যেমন পেইচিংয়ের চেয়ে এখানকার আবহাওয়া ৭ বা ৮ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড কম । প্রতি বছরের চারটি ঋতুর পার্থক্যও স্পষ্ট । এখানে বসন্তকাল অন্যান্য স্থানের চেয়ে ১ মাস দেরীতে আসে । অন্যান্য স্থানে বসন্তকালে ফুল ফোটার সময় এখানে শীতকালের শেষ দিক । গ্রীষ্মকালে পর্যটকরা এখানে সাঁতার কাটতে পারেন । শীতকালে এখানে এলে তুষারের দৃশ্য উপভোগ করা যায়। ছাংতাওয়ে শিল্পের কারণে কোন দুষণ নেই ,এখানকার তুষার খুবই পরিষ্কার ।

    ছাংতাও পৌঁছার পর আমার চোখে অনেক সাদা রঙয়ের বাতচক্র । উত্তর ইউরোপের হোল্যান্ড প্রচুর বায়ু সম্প্রদ এবং বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বাতচক্র থাকার জন্য 'বাতচক্র দেশ' বলে ডাকা হয় । ছাংতাওতেও অনেক বাতচক্র রয়েছে । এর বিশেষ ভৌগোলিক অবস্থার জন্য এখানে প্রচুর বায়ু সম্পদও রয়েছে । দ্বীপের সাদা বাতচক্র সমুদ্রের হাওয়ায় নেচে বেড়ায় প্রতিটি বাতচক্র এক গোলাকার হয়ে ঘুরে এক ডিগ্রী বিদ্যুত্ উত্পাদন করতে পারে । এটা হচ্ছে পরিবেশ সংরক্ষণের ভিত্তিতে বিদ্যুত্ উত্পাদনের একটি পদ্ধতি ।

       ছাংতাও দ্বীপ হচ্ছে একটি সরু ও লম্বা আকারের দ্বীপ,তা উত্তর দ্বীপ ও দক্ষিণ দ্বীপ দু'টি ভাগে বিভক্ত । দক্ষিণাঞ্চল হচ্ছে দ্বীপের অধিবাসীদের বসবাসের এলাকা , প্রায় ৪৫ হাজার লোক এখানে রয়েছে । উত্তরাঞ্চল হচ্ছে পর্যটন স্থান এবং হোটেল সমৃদ্ধ স্থান । দ্বীপের সবচেয়ে বিখ্যাত পর্যটনস্থান হচ্ছে ইউয়ে লিয়াং ওয়ান নামক অর্ধচন্দ্রাকার উপকূল এবং চিউচাংইয়া নামক উঁচু খাড়া পাহাড় ।

    তাহলে আমি এখন আপনাদের ইউয়ে লিয়াং ওয়ানে নিয়ে যাবো । তা ছাংতাও'র উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত । উপর থেকে দেখলে মনে হবে যেন অর্ধচন্দ্রাকারে সমুদ্রের পাশে শুয়ে আছে । আসলে এ অর্ধচন্দ্রাকার সৃষ্টি হয়েছে রঙ বেরঙের নূড়ি দিয়ে ।এখানকার এক ধরনের চুচি নামক নূড়ি হচ্ছে চীনের সবচেয়ে বিখ্যাত চার ধরনের পাথরের মধ্যে অন্যতম । প্রথমবার ছাংতাও এসে পর্যটক মিস সিয়া আমাদের বলেছেন, আমার মনে হয় এখানকার সত্যিকারের দৃশ্য আগে আমার কল্পনারও বাইরে ছিল । এর আগে আমি অনেকবার সমুদ্রতীরে গিয়েছি । কিন্তু তা সবই মানুষের তৈরী এবং সেখানকার পানি পরিস্কার নয় । এবার আমি ইউয়ে ইয়া ওয়ানে এসে দেখলাম এখানকার পানি খুবই পরিস্কার এবং পানির রঙ গাড় সবুজ । তা ছাড়া অসংখ্য নূড়ির সমাহারে সাজানো রয়েছে বেলাভূমি । স্থানীয় অধিবাসীদের জীবনযাত্রার ধারা ও আচরণ আমার ভালো লাগে ।এখানে আপনি অবসর সময়ে সমুদ্র গিয়ে মাছ ধরতে পারেন এবং সুন্দর সুন্দর সব দৃশ্যাবলি দেখতে পারেন । সত্যিই নিজেকে সুখী মনে হবে ।

     চিউচাংইয়ায় এ খাড়া পাহাড়ের উচ্চতা৬৯.৭ মিটার । হাজার হাজার বছরের ঢাল ও বাতাসের প্রভাবে খাড়া পাহাড়ের আকার খুবই বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হয়ে উঠেছে । খাড়া পাহাড়ের শিরঃকোণ ৯০ ডিগ্রীরও বেশি, এ জন্য গ্রীষ্মকালে খাড়া পাহাড়ের নিচে দাঁড়ালে সুর্যের তাপ লাগে না ,খুবই চমত্কার । আমার সঙ্গে চিউচাংইয়ায় গিয়ে গাইড মিস লি বলেছেন, গ্রীষ্মকালে এখানে এলে খালি দু'পা সমুদ্রে মাড়ালে এবং সমুদ্রের বাতাস লাগালে ,খুবই আরাম লাগে । জুলাই মাসে পানির তাপমাত্রা সবচেয়ে ভালো, অনেক পর্যটক এখানে আসেন । তখন দূর থেকে দেখে পর্যটকদের ছায়া ছোট পিঁপড়ার মতো ।

    চিউচাংইয়ায় ভ্রমণকালে আমি কয়েক জন পর্যটকের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি । শানতুং প্রদেশের ইয়ানথাই শহর থেকে আসা মিস লুয়ান খুন আমাকে বলেছেন,এবার হচ্ছে আমার দ্বিতীয় বার আসা । গত বছরের নভেম্বর মাসে আমি প্রথমবারের মতো এখানে এসেছিলাম । কিন্তু তখন আবহাওয়া ছিল খুব ঠাণ্ডা। অনেক দৃশ্য আমি দেখতে পারি নি । এবার আমি এসব স্থান ভ্রমণ করতে চাই । আমার মনে হয় চিউচাংইয়া'র সুর্যের অস্তযাওয়া খুবই সুন্দর। সুর্যের আলো সোণালী রঙয়ের । শহরে এত কাছাকাছি সুর্যকে দেখতে পারি না । এখানকার বায়ু পরিস্কার এবং সমুদ্রও পরিচ্ছন্ন । অবসর সময় এখানে এলে ছুটি কাটালে ,খুবই ভালো লাগে ।

    শানতুং উপ-দ্বীপের চার দিকে হল হুয়াংহাই এবং বোহাই সমুদ্রের চলাচল অঞ্চল । এ জন্য ছাংতাও দ্বীপের সমুদ্র এলাকার একটি সুন্দর দৃশ্য রয়েছে । তা হল হুয়াংহাই এবং বোহাই সমুদ্রের সীমান্ত লাইন । উচুঁ পাহাড়ে আহরণ করার পর দেখতে পাওয়া যায় দু'টি পথ সমুদ্র দ্বীপের কাছাকাছি এলাকায় এসে মিশে গেছে, অনন্ত সমুদ্রের ঢেউয়ে ঢেউয়ে খুবই চমত্কার ।

         ওয়াংফুচিয়াও দ্বীপের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত । এখানে অনেক ধরনের ও আকারের পাথর দেখা যায় । এ স্থানের নাম কেন ওয়াংফুচিয়াও বলে ডাকে ? এ সম্পর্কে মিস লি বলেছেন, এর পুরনো নাম ওয়াংফুচিয়াও । কারণ , এখানে একটি পাথরের ভাষ্কর্য একজন নারী সন্তান কোলে নিয়ে দূরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে সমুদ্র মাছ ধরা স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছে । লোকজন মনে করেন এ জায়গাটি একটি সুখী জায়গা । 

     আসলে ছাংতাও'র সবচেয়ে মজার পর্যটন স্থান সবই তার পাশের ছোট ছোট দ্বীপে অবস্থিত । আপনারা জাহাজ যোগে ৩,৪ ঘন্টার মধ্যেই ৬টি দ্বীপে বেড়াতে যেতে পারেন । কাওশান দ্বীপে গাংচিলসহ অনেক ধরনের পাখিও দেখতে পারেন । এ দ্বীপে কোনো অধিবাসী নেই, আপনারা খাবার নিয়ে পাখিদের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে মিশতে পারেন ।

     মত্স্যশিকারপছন্দকারী বন্ধুরা ছোট ছোট দ্বীপে গিয়ে মাছ ধরতে পারেন । সমুদ্রে মত্স্যশিকার করা এবং হ্রদের মাছ ধরার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে । তা খুবই মজার ও উত্তেজনাময় । এখানকার মাছ সবই প্রাকৃতিক পরিবেশে বড় হয়েছে, খেতে খুবই সুস্বাদু । আপনারা নিজেদের শিকার করা মাছগুলো হোটেলে নিয়ে যান ,তা রান্না করার পর খেলে আরো অনেক ভালো লাগবে ।

    আরেকটি মজার জায়গা হচ্ছে মোহর দ্বীপ। পরিচালক সুন এর ওপর একটি সুন্দর গল্প বর্ণনা করেছেন । প্রতি বছরের মার্চ মাসে, হাজার হাজার মোহর এখানে আসে । মে মাসে পর্যন্ত থেকে অধিকাংশ মোহর চলে যায় ,কিন্তু প্রতি বছর দু'টি মোহর এখানে কমে যায়। লোকজন মনে করে একটি ছেলে মোহর এবং একটি মেয়ে মোহর প্রেমের জন্য এখানে থেকে যায় ।

     দীর্ঘকাল পেইচিংয়ে থাকার জন্য আমি সবসময় এসব সুস্বাদু খাবার খেতে পেরেছি । সত্যিই এবারও যথেষ্ট পরিমাণের সামুদ্রিক খাবার খেয়েছি । এখানকার সামুদ্রিক খাবার টাটকা ছাড়া দামেও অনেক সস্তা । যদি আপনারা আসেন অবশ্যই একটি খাবার অন্তত খাবেন । তা হচ্ছে সেঞ্জুরি হোলিডে হোটেলের বিশেষ তৈরী ডিশ , এর নাম হচ্ছে ঝাল সামুদ্রিক খাবার ।

এখন আমরা রেঁস্তোরা বিভাগের পরিচারিকা হুয়াং ওয়েই লিনের কথা শুনবো । আমাদের হোটেলের বিশেষ খাবার হচ্ছে ঝাল সামুদ্রিক খাবারের সংমিশ্রন । তা সামুদ্রিক খাবার এবং সিছুয়ান ও ছোংছিংয়ের ফ্লেভারের সঙ্গে মিশিয়ে তৈরী করা হয় । খাবারের মধ্যে নানা ধরনের সামুদ্রিক খাবার এবং সবজি ও কাঁচামরিচ দেয়া হয় ।পর্যটকরা তা অনেক পছন্দ করেন ।

    যদি রাতে হাঁটার সময় খিদে লাগে , তাহলে আপনারা সামুদ্রিক খাবার রোস্ট রাস্তায় গিয়ে খেতে পারেন। তাও খুবই মজার ও বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ।

     এরপরে সমুদ্রতীরে গিয়ে আতশবাজি জ্বালানোও খুবই মজার ।  আকাশের তারা এবং সুন্দর আতশবাজি দেখে অনেক রোমানটিক লাগবে ।