v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-05-30 20:01:46    
ওয়াং রুই কুয়াং ও তার জীবনের অভিজ্ঞত

cri
    ওয়াং রুই কুয়াংয়ের বয়স ৩৫ বছর । তিনি পেইচিংয়ে জন্মগ্রহণ করেন । তিনি শান্তশিষ্ট। দেখতে দক্ষিণ চীনের লোকের মত হলেও তার কথাবার্তার মধ্যে উত্তর চীনের লোকের উদারতা প্রকাশ পায় ।

    ১৯৯৫ সালে ওয়াং রুই কুয়াং পেইচিং বিদেশী ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতালীয় ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ থেকে স্নাতক হন । তিনি সরাসরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইউরোপীয় বিভাগের কাজে যোগ দেন । এখানে এক বছর কাজ করার পর তিনি ইতালিতে চীনা দূতাবাসে কাজ করতে শুরু করেন ।

    চীনা দূতাবাসে দু বছর কাজ করার মাধ্যমে ওয়াং রুই কুয়াং দুর্লভ অভিজ্ঞতা লাভ করেন । অথচ তিনি জীবনের সম্পূর্ণ এক অভিনব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান । বহু ভেবেচিন্তে তিনি কূটনীতিকের পদ ছেড়ে ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেন । অন্যদের চোখে কূটনীতিকের পদ ছেড়ে দেয়া একেবারে কল্পনাতীত । তবে ওয়াং রুই কুয়াং মনে করেন যে , তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । তিনি বলেছেন ,

    পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ করে আমি অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি । এ অভিজ্ঞতা পরবর্তী সময় আমার কাজে সহায়ক হয়েছে । আমার বাছাই অমূলক হয় নি । এখনো আমি অনুশোচনা বোধ করি না ।

    কূটনীতিকের পদ ছেড়ে দেয়ার পর ওয়াং রুই কুয়াং বাড়িতে কিছু সময় বিশ্রাম নিতে চেয়েছিলেন । তবে তখন ইতালির ফিওরেনটিনোর একটি থিয়াটোরের উদ্যোগে পেইচিংয়ের পুরনো রাজপ্রাসাদে টুরানডোট নামক অপেরা মঞ্চস্থ হয় । বন্ধুদের পরামর্শক্রমে ওয়াং রুই কুয়াং এ কাজের জন্যে অনুবাদের কাজ করেন । যখন টুরানডোট পেইচিংয়ে মঞ্চস্থ হচ্ছিল , তখন তার অনুবাদের কাজ ইতালির থিয়াটোরের কর্মচারীদের প্রশংসা পেয়েছে । তার চমত্কার অনুবাদ চীনের একটি সাংস্কৃতিক কোম্পানির দৃষ্টিও আকর্ষণ করেছে । এভাবে ওয়াং রুই কুয়াং এ সাংস্কৃতিক কোম্পানিতে যোগ দেন । তিনি বলেছেন ,

    শুরুতে আমি কেবল চলচ্চিত্র ও টিভি নাটকের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের কাজ করি । যেহেতু আগে আমি ইতালিতে কাজ করেছি , সেহেতু তখন আমার প্রধান কাজ ছিল ইতালির জাতীয় বেতার ও টেলিভিশন কেন্দ্রের সংগে যোগাংযোগ স্থাপন করা এবং ইতালির অনুষ্ঠানমালা চীনে আমদানী করা । আজও চীনের কেন্দ্রীয় টেলিভিশন কেন্দ্রে ইতালির কার্টুন চিত্র দেখানো হচ্ছে ।

    ওয়াং রুই কুয়াং এ সাস্কৃতিক কোম্পানিতে তিন বছর ধরে কাজ করেন । তিনি কঠোর পরিশ্রম করে কোম্পানিটির জন্যে চমত্কারভাবে কাজ করেন এবং কোম্পানিটির মেরুদন্ডে পরিণত হন । তার সহপাঠী থিয়ান সিং তার মূল্যায়ণ করে বলেছেন ,

    লোকটি খুব মজার । গোড়ার দিকে আমার ধারণা ছিল তিনি সাহিত্যকে পছন্দ করতেন । তিনি খুই মেধাবী । সব ব্যাপারে তার নিজস্ব চিন্তা আছে । তিনি বেশ দু:সাহসি । তিনি সবসময় নিষ্ঠার সংগে প্রতিটি কাজ করেন ।

    তিন বছর পর ওয়াং রুই কুয়াং নিজের কোম্পানি গঠন করেন । তার কোম্পানির কাজও হচ্ছে চীন ও ইতালির মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় চালানো । ২০০৬ সালের জানুয়ারী মাসে চীন-ইতালি সাংস্কৃতিক বর্ষ চীনের রাজধানী পেইচিংয়ে শুরু হয় । এ বর্ষ চলাকালে ইতালি সরকারের উদ্যোগে চীনে বিশ বাইশটি সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী ও এক শ'টি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । ওয়াং রুই কুয়াংয়ের কোম্পানিটি কোনো কোনো অনুষ্ঠানের কাজে সহায়তা করেছে । এ ক্ষেত্রে ইতালি ও চীনের মধ্যে ফলপ্রসূ সহযোগিতা হয়েছে । এর মধ্যে ওয়াং রুই কুয়াংও বিশেষ ভূমিকা নিয়েছেন ।

    চীনের ইতালি বর্ষের নানা কর্মসূচীর বিস্তারের সংগে সংগে ইতালি সম্পর্কে চীনাদের আগ্রহ অনেক বেড়েছে । অধিক থেকে অধিকতর সংখ্যক চীনা ছাত্র ইতালির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন । পাশাপাশি ইতালি সরকার চীনা ছাত্রদের ভিসা দেয়ার নীতিও শিথিল করেছে । ফলে ইতালিতে চীনা ছাত্রদের পড়াশোনা আরো সুবিধাজনক হয় । এ অবস্থা দেখে ওয়াং রুই কুয়াংয়ের মনে তার বহুদিনের একটি স্বপ্নের জন্ম হলো। তিনি বলেছেন ,

    শিক্ষক হওয়া বরাবরই আমার একটি স্বপ্ন । শেষ পরিণতি হিসেবে আমি চাই আমার বয়স চল্লিশের কাছাকাছি হলে আমি একজন শিক্ষক হবো । কেন না , আমার পরিবারের প্রভাবে আমি প্রভাবিত হয়েছি ।

    ওয়াং রুই কুয়াংয়ের বড় পরিবারের মধ্যে মোট বিশ বাইশজন শিক্ষাকর্মী রয়েছেন । তার নিজের কোম্পানির কাজ সুষ্ঠুভাবে চললেও তিনি কোনোদিনও ব্যবসা করাকে তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য বলে মনে করেন নি । একবার তিনি খবর পান যে , চীন ও ইতালির শিক্ষা মন্ত্রণালয় দু দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং প্রথম কিস্তিতে শাংহাইয়ের থুং চি বিশ্ববিদ্যালয় এ সহযোগিতায় শামিল হবে । সুতরাং তিনি শাংহাইয়ের থুং চি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবেমাত্র প্রতিষ্ঠিত চীন-ইতালি ইন্সটিটিউটে যান । সেখানে তিনি জানতে পান যে , এ ইন্সটিটিউটে ইতালি ভাষার শিক্ষকের জরুরী প্রয়োজন । ইন্সটিটিউটের নেতাদের সংগে গভীরভাবে মত বিনিময়ের পর তিনি সেখানে ইতালি ভাষা শিখানোর সিদ্ধান্ত নেন । তিনি বলেছেন , ব্যবসা করা এবং শিক্ষকতা করার মধ্যে বিরাট ব্যবধান রয়েছে । অথচ এ দুটোর মধ্যে সম্পর্কও রয়েছে । সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও অন্যান্য ব্যবসায়িক কাজ করার সময় আমি যা শিখেছি এবং যেসব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি , থুং চি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পরও সেগুলো আমি কাজে লাগিয়েছি । এর আগেও আমি শিক্ষকতার কাজ করেছি । তাছাড়া আমি খুব ধৈর্য্যশীল । শিক্ষকতার কাজেও আমার নিজের মতামত রয়েছে । পাশাপাশি অন্যদের অভিজ্ঞতা আহরণ করে ছাত্রদের ভিন্ন অবস্থা অনুসারে আমি শিক্ষকতা করি ।

    ছাত্রদের চোখে এ তরুণ শিক্ষক সবসময় তার শিক্ষার মধ্যে আনন্দ এনে দেন । থুং চি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী লি সিয়াং লিন এক বছর ধরে ওয়াং রুই কুয়াংয়ের কাছে ইতালি ভাষা শিখেছেন । তিনি বলেছেন ,

    শিক্ষক ওয়াংয়ের ক্লাস শোনা আমার কাছে মজা লাগে । এটি হয়তো তার সমৃদ্ধ সামাজিক অভিজ্ঞতার সংগে ঘনিষ্ঠিভাবে জড়িত । তিনি সর্বদাই একঘেয়ে বিষয়কে চিত্তাকর্ষক ও শ্রুতিমধুর করে তুলতে পারেন ।