পেইচিংয়ের চোক-মেলানো বাড়ী পুরোনো পেইচিংবাসীদের থাকার প্রধান জায়গা হিসেবে বিশ্বখ্যাত । সবুজ টালি ও লাল দেয়ালের একটি চোক-মেলানো বাড়ীতে কয়েকটি পরিবার থাকতে পারে । গরমকালের সন্ধ্যায় বিভিন্ন পরিবারের সবাই উদ্যানে বসে সবুজ গাছের নিচে গল্প করতে পারে । শিশুরাও একসঙ্গে খেলতে পারে । আপনি কি ভাবতে পারেন যে বড় শহরে এমন জীবন অনুভব করা যায় ?
এখন প্রতিদিনই অনেক বিদেশি বন্ধু চীনে আসছেন এবং এর মধ্যে আবার অনেকেই পেইচিংয়ে আসছেন । চোক-মেলানো বাড়ীই যেন তাদের থাকার প্রথম বাছাই । আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদের একজন ব্রিটিশ বন্ধুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো । চীনে তিনি ১৩ বছর ধরে আছেন । তিনিও হু থুংয়ে থাকেন । তাঁর নাম ডমিনিক জনসন হিল । তাঁর একটি সুন্দর চীনা নামও আছে--চিয়াং সেন হাই ।
হু থুং অনেক বৈশিষ্টময় । যেন একটি যাদুঘরের মত । রাতের হু থুং খুব শান্ত , দিনের বেলায় পর্যটন দলও নেই , তখন হু থুয়ে বেড়াতে গেলে মনে হয় যেন একটি যাদুঘরে ঘুড়ছি । প্রত্যেকটি চোক-মেলানো বাড়ীর দরজার কয়েক শো বছরের ইতিহাস রয়েছে । আপনি এসব দরজা লেগে থাকতে পারেন । অন্য দেশে এমন কয়েক শো বছর ইতিহাসের জিনিস সব যাদুঘরে রেখে , তাদেরকে লেগে থাকার সুযোগও নেই ।
চিয়াং সেন হাইয়ের হু থুং জীবন খুব শান্তির এবং আরামদায়ক
হু থুং যেন আধুনিক শহরে অবস্থিত একটি ছোট্ট গ্রাম । রাতে এখানে গাড়ীর আওয়াজ শোনা যায় না । আমার উদ্যানে চারটি গাছ আছে । আমি ঝুলন্ত বারান্দায় ঘুমাতে পারি , এক সিগারেট খাই , একটু মদ খাই , শান্তময় পরিবেশে থাকা খুব ভালো লাগে ।
সকালে চিয়াং সেন হাইয়ের সাক্ষাত্কার নেয়া হয়েছে । সাক্ষাত্কারের সময় সবুজ গাছে বয়ে যাওয়া বাতাস ও পাখির আওয়াজ আমাদের মুগ্ধ করে রাখে । হু থুং জীবন চিয়াং সেন হাইকে শান্তি ও আরামদায়ক অনুভব দিয়েছে এ ছাড়া তাঁকে অনেক চিন্তার শক্তিও যুগিয়েছে । এখন হু থুংয়ে তাঁর একটি টি-সার্টের দোকান আছে । এ দোকানের টি-সার্টে নিজের পছন্দের ছবি ছাপান করা যায় ।
এ দোকানটি আরো বৈশিষ্টময় করার জন্য দোকানটি খোলার সময় ডমিনিক অনেক চিন্তাভাবনা করেছেন ।
আমি সবসময় এক টি-সার্ট দোকান খুলতে চাই । আমি ছয় মাস ধরে নতুন চিন্তাভাবনা করতে থাকি । আমি পেইচিংকে এবং চীনাদেরকে ও বিদেশিদের কাছে প্রকাশ করার ছবি খুঁজতে থাকি ।
ডমিনিক বলেছেন , তিনি ছবি আঁকতে পারেন না । তাই পেইচিংয়ে ১৩ বছর থাকার অভিজ্ঞতা নিয়ে তাঁর চোখের পেইচিং প্রকাশ করার ছবি খুঁজেন । যেমন সাবওয়েয়ের টিকিটের ছবি , চীনের প্রাথমিক স্কুলের বইয়ে মোজার ছবি ইত্যাদি ইত্যাদি আরো অনেক । তিনি এসব ছবিকে টি-সার্টে ছাপিয়েছেন । ডমিনিক মনে করেন , এসব জিনিস তাঁর চিন্তাধারাকে প্রকাশ করেছে , তাঁর চোখের দেখা পেইচিংকে প্রকাশ করেছে ।
সাক্ষাত্কারে ডমিনিক সবসময় একটি কথা বলেন , তা হল , হয়তো আমার পেইচিংয়ের সঙ্গে সদ ভাব রয়েছে ।
এ শহর কেন এত ভালো ? কারণ পেইচিং-এর নাগরিকরা অনেক ভালো । যখন আমি প্রথমে পেইচিংয়ে আসি । তখন চাকরি নেই । টাকাও নেই । তাই কিছু কিছু বিদেশি বাঁকা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাত। তবে পেইচিং-এর নাগরিকরা এমন করেন না । তারা আমাকে বলেন , টাকা নেই ? কোনো সমস্যা নেই । আমি তোমাকে খাওয়াবো । চলো , আমরা একটু গল্প করবো ।
পেইচিংয়ে থাকা অনেক বিদেশি বলেন পেইচিংয়ের পরিবর্তন অনেক বড় । তবে ডমিনিকের চোখে পেইচিং এখনোও তাঁর মনে চোখে দেয়া সেই পরিচিত পেইচিং ।
আমার অনুভব একই , মানুষও একই । যদিও খুব দ্রুত তা পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে , যদিও অনেক নতুন ভবন নির্মিত হচ্ছে , তবুও পেইচিং আমার মনের মনি কোঠার সেই পেইচিং । তা পরিবর্তিত হয় নি ।
ডমিনিক বলেন , তাঁর তিন মেয়েই হু থুংয়ে আনন্দ ও সুস্বাস্থ্যের সঙ্গে বড় হচ্ছে । উদ্যানের সব প্রতিবেশী তাদেরকে খুব আদর করেন । সবাই একটি বড় পরিবারের মত । তিনি বলেছেন , তিনি এমন হু থুং জীবনই পছন্দ করেন ।
|