যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ইরাকে আরো ৩০ হাজার মার্কিন সৈন্য পাঠানোর পরিকল্পনা এখন সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয় নি, কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ এবং তাঁর উচ্চপর্যায়ের সহকারীরা ইজ্গিত দিয়ে বলেছেন যে, তাঁরা আরো সৈন্য পাঠানোর পর ইরাকে তাদের নতুন কৌশল প্রয়োগের কথা বিবেচনা করছেন । এ নতুন কৌশলের প্রধান দিক হচ্ছে মার্কিন সৈন্য পাঠানোর পর ইরাকের ধর্মীয় সংকট নিয়ন্ত্রণ করা , যুক্তরাষ্ট্রের ইরাকে মোতায়েন মার্কিন সৈন্যের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমানো এবং মার্কিন বাহিনীর প্রধান কাজ হবে আল কায়েদা সংস্থার ওপর চরম আঘাত হানাসহ ইরাকী বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয়া ।
২৪ মে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বুশ উল্লেখ করেছেন যে, তিনি আশা করেন , ভবিষ্যতে মার্কিন বাহিনী নতুন কৌশল নিয়ে ইরাকে অবস্থান করবে । মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট গেটস এবং স্টাফ প্রধান সম্মেলনের চেয়ারম্যান পিটার পেস বলেছেন, ইরাকে মার্কিন বাহিনীর সর্বোচ্চ পরিচালক ডেভিড পেট্রাউস সেপ্টেম্বর মাসে সৈন্য বাড়ানোর কার্যকর রিপোর্ট দাখিল করার পর মার্কিন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাগণ ইরাকের নতুন নীতি নিয়ে আলোচনা করবেন । গেটস বলেছেন, ইরাকে মার্কিন বাহিনীর দায়িত্ব হবে ইরাকী বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয়া , আল কায়েদা সংস্থার ওপর আঘাত হানা এবং ইরাকী বাহিনীকে সাহায্য করা । কিন্তু নতুন নীতি অনুযায়ী মার্কিন সৈন্য সংখ্যা বর্তমানে ইরাকে মোতায়েন মার্কিন সৈন্যের চেয়ে অনেক কম হবে ।
তা ছাড়া, ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার এক খবরে জানা গেছে, ইরাকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত রায়ান ক্রোকার এবং ইরাকে মার্কিন বাহিনীর সর্বোচ্চ পরিচালক ডেভিড পেট্রাউস একটি নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন করছেন ,যাতে ইরাকের ধর্মীয় সংঘর্ষ নিরসণ করা যায় । হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, হোয়াইট হাউস ভবিষ্যতে ইরাকে মার্কিন সৈন্যের সংখ্যা নিয়ে আলোচনা করছে । আলোচনায় দু'টি মতামত দেখা দিয়েছে । এক. ২০০৮ সালের শেষ হওয়ার আগে ইরাকে মোতায়েন মার্কিন সৈন্য সংখ্য কমানো উচিত নয় । দুই. ২০০৮ সালের শুরুতেই মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করা উচিত । চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসলে ইরাকের পরিস্থিতর সঙ্গে সম্পর্কিত ।
সংবাদমাধ্যমগুলো মনে করে , হোয়াইট হাউসের ইরাকে তার নীতি পরিবর্তন করার মূল কারণ হচ্ছে জাতীয় কংগ্রেসের দেয়া বড় চাপ ।
বর্তমানে ডেম্যোক্রেটিক পার্টি জাতীয় কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন ব্যবহার করে বরাদ্দ বিল সমস্যার মাধ্যমে হোয়াইট হাউসের ওপর চাপ দেবে । প্রতিনিধি পরিষদের বরাদ্দ বিল কমিটি জুলাই মাসে ২০০৮ সালের প্রতিরক্ষা বিষয়ক ব্যয় নিয়ে আলোচনার সময় ইরাক যুদ্ধের ব্যয় এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষা বিষয়ক ব্যয়ের সঙ্গে বিভক্তি রাখতে ইচ্ছুক এবং ইরাক যুদ্ধের জন্য আর একটি বিশেষ বরাদ্দ বিল প্রণয়ন করবে । তারা মনে করে এ পদ্ধতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য সামরিক ব্যয়ের ওপর প্রভাব না ফেলে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে ইরাক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে সক্ষম হবে ।
প্রতিনিধি পরিষদের সামরিক কমিটি একটি মার্কিন প্রতিরক্ষা নীতি বিষয়ক বিলের খসড়া প্রকাশ করেছে । কমিটির চেয়ারম্যান ডেম্যোক্রেটিক পার্টির সদস্য কার্ল লেভিন বলেছেন, ডেম্যোক্রেটিকপার্টি মার্কিন বাহিনীকে বিল গৃহীত হওয়ার ১২০ দিনের মধ্যে ইরাক থেকে সৈন্য সরিয়ে নেয়ার দাবি জানাবে । তা ছাড়া, আগামী মাসে প্রতিনিধি পরিষদ ইরাক যুদ্ধ সম্পর্কিত একটি বিল প্রণয়ন করবে । তা ইরাক গবেষণা দলের প্রস্তাব অনুযায়ী ইরাকে মার্কিন বাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারে সুযোগ সৃষ্টি করবে ।
জাতীয় কংগ্রেসের গণতান্ত্রিক পার্টির নেতৃবৃন্দও আশা করেন সেপ্টেম্বর মাসে হোয়াইট হাউস ইরাক সংক্রান্ত একটি নতুন কৌশল দাখিল করতে পারবে । প্রতিনিধি পরিষদের গণতান্ত্রিক পার্টির নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেছেন, সেপ্টেম্বর মাসে আমরা একটি নতুন পথ শুরু করবো, তা এখন খুবই স্পষ্ট । আমি আশা করি, প্রেসিডেন্ট আমাদের নির্দেশনা দেবেন।
ইরাকে মার্কিন বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বলেছেন, ইরাকে আরো বেশি মার্কিন সৈন্য পাঠানোর উদ্দেশ্য হল ইরাক সরকারকে সময় দেয়া, যাতে ইরাকের রাজনৈতিক সমঝোতা বাস্তাবায়ন এবং ধর্মীয় সংঘর্ষ নিরসণ করা যায় । এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হলে মার্কিন বাহিনী খুব সম্ভবত ২০০৮ সালের মার্চ মাসে প্রত্যাহার করতে সক্ষম হবে । যদি সৈন্য পাঠানোর পরিকল্পনা ইরাকের পরিস্থিতি উন্নত করতে না পারে, তাহলে ইরাকে বেশি মার্কিন সৈন্য রাখা ঠিক হবে না । সুতরাং , ইরাকের পরিস্থিতির উন্নয়নের পর মার্কিন বাহিনী খুব সম্ভবত আগামী বছর থেকেই তার সৈন্য প্রত্যাহার করবে ।
|