v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-05-25 21:09:21    
মা'র পিঠ উপরের ভালবাসা

cri
    হোপেই প্রদেশের হুইলাই জেলার সিন পাও আন থানার চুসান একটি প্রত্যন্ত পাহাড়ী গ্রাম । ১৯৮৯ সালে গ্রামীণ নারী তু পাওসিয়া ঘটকের মাধ্যমে একই গ্রামের যুবক ইয়াও চিনকাংকে বিয়ে করেন । এক বছর পর তাদের মেয়ে ইয়াও সিনচুনের জন্ম হয় । আদরের মেয়ে ইয়াও সিনচুন দিনদিন বড় হয়ে ওঠে । পরিবারের সবাই আনন্দে নিমজ্জিত হন । কিন্তু যখন মেয়ে ইয়াও সিনচুনের বয়স তিন বছর হয় তখন দুর্দশা চুপেচুপে তাদের উপর ভর করে। বয়স তিন বছর হলেও তাদের মেয়ে দাঁড়াতে সক্ষম নয়। বিভ্রান্ত বাবা মা ধার করে দশ হাজার ইউয়ান নিয়ে মেয়েকে চিকিত্সা করা শুরু করেন । কিন্তু মেয়েটি কি রোগে আক্রান্ত ? কেন তিন বছর বয়সেও দাঁড়াতে সক্ষম নয় ? তা চিহ্নিত করতে পারেন না ডাক্তাররা ।কিন্তু ডাক্তাররা বলেন , মেয়ে কোনদিনই দাঁড়াতে সক্ষম হবে না ।

    প্রাণবন্ত মেয়েটি হঠাত্ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয় । এই আকস্মিক আঘাতে তু পাওসিয়া জীবিত থাকার সাহসও প্রায় হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু সিনচুনের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তিনি সাহসের সঙ্গে এই সব সমস্যা মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত নেন । সিনচুন দিন দিন বড় হয়ে ওঠে । এর পর মেজ মেয়ে ইয়াও আইচুনের জন্ম হয় । সময়ের সঙ্গে সঙ্গেসিনচুন স্কুলবয়সী হল । যাতে সিনচুন আরও বেশী অধিকার না হারায় তার জন্য বাবা ইয়াও চিনকাং বাইরে মজুরী খাটতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মা তু পাওসিয়া মেয়েকে পিঠে বহন করে স্কুলে আসা-যাওয়ার দায়িত্ব পালন করেন ।

    আত্মীয়রা সহানুভূতি জানিয়ে একটি হুইলচেয়ার কিনে তাদেরকে উপহার দেন । যাতে তু পাওসিয়ার চাপ কিছু কমে যায় । কিন্তু মাত্র একবার পাহাড়ী পথ অতিক্রম করার পর হুয়েলচেয়ারটি নষ্ট হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে তু পাওসিয়া প্রতিদিন মেয়েকে পিঠে করে স্কুলে যাওয়া আসা করেন । বসন্ত হোক গ্রীষ্ম হোক,শরত্ হোক শীত হোক অথবা বৃষ্টি-বাতাস হোক, ১১ বছর ধরে তু পাওসিয়া মেয়ে সিনচুনকে পিঠে নিয়ে স্কুলে যাওয়া আসা করছেন ।

    এখন ইয়াও সিনচুন সাছেন শহরের এক নম্বর মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রী হয়েছে । স্কুল থেকে বাড়ি অনেক দূরে । একবার যাওয়া আসা করতে অনেক সময় লাগে । তাই যখন সিনচুন উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হয় তখন তার সুবিধার জন্য মা পরিবার নিয়ে নিজের গ্রাম থেকে সাছেন শহরে আসেন । তাঁরা স্কুলের কাছে একটি ছোটো বাড়ি ভাড়া নেন । প্রত্যেক দিন সকালে মা তু পাওসিয়া মেয়ে সিনচুনকে পিঠে বহন করে স্কুলে যান । এ বছর মা তু পাওসিয়ার বয়স ৪২ বছর । সিনচুনের বয়স ১৮ বছর , তার ওজন প্রায় ৫০ কেজি । তু পাওসিয়া বলেন , মেয়ে বড় হওয়ায় এবং ওজন বেড়ে যাওয়ায় এখন তাকে পিঠে বহন করে স্কুল যেতে অনেক কষ্টহয় । বিশেষ করে সিড়িতে ওঠানামা করা তার পক্ষে অত্যন্ত কঠিন হয় ।

    স্কুল কর্তৃপক্ষ ইয়াও সিনচুনের আসল অবস্থা জেনে উপর থেকে তার ক্লাসরুম এক তলায় বদল করেন, তার জন্যবিশেষ সোফা কিনেন । তাছাড়া স্কুল কর্তৃপক্ষমা তু পাওসিয়াকে দুটো কাজ দেন । একটা হল স্কুল পরিস্কার করা , আরেকটি হল শিক্ষকদের জন্য গরম পানি এনে দেয়া । তু পাওসিয়া বলেন , তিনি স্কুল কর্তৃপক্ষের প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ । কারণ এক দিকে তিনি মেয়ে সিনচুনকে দেখাশোনা করতে পারেন আরেক দিকে তিনি কিছু উপার্জন করতে পারেন । এতে তিনি খুবই সন্তুষ্ট।

    ইয়াও সিনচুন খুব ভাল মেয়ে । সে লেখাপড়া করতে পছন্দ করে । গোটা ক্লাসে তার লেখাপড়া পুরোভাগে স্থান অধিকার করেছে । আগামী বছর সিনচুনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরীক্ষা হবে । সিনচুনের মতো ছাত্রীপরীক্ষায় কোনোসমস্যায় পড়বে কি না তা ভেবে তু পাওসিয়া অস্থির । সিনচুনের শিক্ষক তু পাওসিয়াকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, এখন আশি বছর বয়সী বৃদ্ধবৃদ্ধাগণও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারেন, সিনচুন শুধু পরীক্ষা দিতে পারবে তা নয় , বরং সে বিশেষ মনোযোগও পাবে । শিক্ষকের কথা শুনে তু পাওসিয়ার চিন্তা কিছুটা শিথিল হয়

    স্বামী বাইরে ড্রাইভার হিসেবে উপার্জন করেন । তাই তু পাওসিয়া ছোটো মেয়েকে নিজের বাবামার কাছে রেখে দেন । বাড়ি ভাড়া এবং দুটি মেয়ের স্কুলফি সহ বছরে মোট ৬০০০ ইউয়ান লাগে ।এদুটো খরচ ছাড়া অন্য ক্ষেত্রের খরচ তু পাওসিয়া খুব মিত্যব্যয়িতার সঙ্গে করেন । প্রতিদিন সিনচুনকে পিঠে করে তাঁকে ৫বার ভাড়া বাড়ি থেকে ৮০০ মিটার দূরে ক্লাসরুমে যাওয়া আসা করতে হয় । সকালে মেয়েকে স্কুলে পাঠান,তারপর তিনি স্কুলের কাজ করেন এবং বাড়িতে ফিরে রান্না করেন । দুপুরবেলায় তিনি স্কুলে গিয়ে মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে আসেন । বয়স ১৮ বছর হলেও সিনচুনের সব কিছু মা'র সাহায্যের উপর নির্ভরশীল । যেমন প্রস্রাব ও পায়খানা করা সব কিছুতেই মার সাহায্য দরকার । এই দুটো গুরুত্বপূর্ন কাজ শেষে মা ও মেয়ে দুপুরের খাবার খান । মাকে আরও বেশি চাপ না দেয়ার জন্য ১৮ বছর বয়সী সিনচুন সীমিত পরিমানের খাবার খায় । ৬ বছরের ছোটো ছেলেমেয়েরা যত বেশি খায় সিনচুনও তত পরিমানে খায় । দুঘন্টার পর মা আবার সিনচুনকে পিঠে করে স্কুলে যান । তার পর মা স্কুলের কাজ করেন এবং কাজ সেরে বাড়ি ফিরে সিনচুনের কাপড়চোপড় ধুঁইতে শুরু করেন । সাধারণত সিনচুনের ক্লাস দেরীতে শেষ হয় । তাই মা কিছু বিশ্রাম নিতে পারেন । কিন্তু তিনি তা করেন না , বরং ঘর সাজাতে শুরু করেন । রাত সাতটায় তিনি স্কুল থেকে মেয়েকে পিঠে করে বাড়ি নিয়ে আসেন । খাওয়ার পর তিনি আবার মেয়েকে স্কুলে পাঠান । রাত দশটায় তিনি আবার মেয়েকে স্কুল থেকে নিয়ে আসেন । মেয়ের সব কিছু ঠিকঠাক করতে রাত প্রায়১২টা হয় । ক্লান্ত হলেও তু পাওসিয়া আনন্দ লাগে । তিনি মনে করেন , মেয়ের লেখাপড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িতহওয়ার জন্য তিনি যত কষ্টই হোক তা করতে প্রস্তুত ।

    সিনচুনের আশা , দক্ষিণ চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া । সে বলে , আমি বিশেষভাবে সাংহাইর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাই । শুনেছি সাংহাইর ওয়েইথান জায়গাটি খুব সুন্দর । তাই আমি বিশেষভাবে সেখানে যেতে চাই । মা তু পাওসিয়া বলেন , মেয়ে সিনচুন যেখানে থাকে সে জায়গাটি তাদের বাড়ি হবে । সিনচুন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে তিনি অব্যাহতভাবে তাকে পিঠে বহন করে বাড়ি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করতে থাকবেন ।