v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-05-25 20:15:46    
শিল্প অর্থনীতির বিকাশ চীনের আন হুই প্রদেশের ফান ছাং জেলার কৃষকদের জীবনের পরিবর্তন করেছে

cri
    কৃষি উত্পাদন বরাবরই মধ্য চীনের আন হুই প্রদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । এ প্রদেশের ৭০ শতাংশ লোক গ্রামাঞ্চলে বসবাস করেন । এ প্রদেশের অর্থনীতিতে কৃষির অনুপাত প্রায় অর্ধেক । অথচ গত কয়েক বছর এ প্রদেশের কোনো কোনো এলাকায় পোষাক ও জুতো তৈরিসহ বিভিন্ন হাল্কা শিল্পের উন্নতি হয়েছে । স্থানীয় কৃষকরা নিছক কৃষি উত্পদনে নিয়োজিত থাকা থেকে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে শুরু করেছেন । এতে তাদের আয়ের উত্স আগের চেয়ে আরো স্থিতিশীল হয়েছে এবং তাদের অবসরকালীন সাংস্কৃতিক জীবনও আগের চেয়ে আরো বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠছে ।

    সম্প্রতি আমাদের সংবাদদাতা আন হুই প্রদেশের ফান ছাং জেলার সুন ছুন নগরে যান । তিনি আমন্ত্রণক্রমে একজন কৃষকের বাড়িতে যান । এটি একটি সুন্দর দোতলা বাড়ি । বাড়িতে ঢুকে আমাদের সংবাদদাতা দেখতে পান , একতলায় রয়েছে রান্নাঘর, বাথরুম , বৈঠকঘর ও দুটো শোয়ার ঘর এবং দোতলায় রয়েছে তিনটি বড় গোছের শোয়ার ঘর । এ কৃষকের বাড়িতে সব ধরণের আসবাবপত্র ও গৃহস্থালীরইলেক্ট্রনিক যন্ত্র রয়েছে । আমাদের সংবাদদাতার চোখে এ বাড়ি হুবহু শহরের বাড়ির মত ।

    এ বাড়ির মালিকের নাম চাং থুং মিং । তার বয়স ৫৯ বছর । তিনি তার স্ত্রী ,ছোট মেয়ে ও জামাইয়ের সংগে থাকেন । তিনি বলেছেন , তিনি নিজের ০.২ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ করেন । প্রতিবছর তিনি প্রায় ১ হাজারেরও বেশি কিলোগ্রাম চালের ফলন পান । তাছাড়া তিনি কয়েকটি মুরগীও পালন করেন । এভাবে হিসাব করলে দেখা যায় , কৃষি উত্পাদন থেকে পাওয়া ফলন কেলব তার পরিবারের খাওয়া-দাওয়ার চাহিদা মেটাতে পারছে এবং বিক্রির জন্যে আর কিছু বাকি থাকে না । তাহলে তিনি কেমন করে এ সুন্দর বাড়ি নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছেন ? লাজুক চাং থুং মিং সহাস্যে তার বর্ণনা করেছেন । তিনি বলেন ,

    আমার দোতলা বাড়িতে নীচের তলায় দুটো আর দু তলায় তিনটি শোয়ার ঘর রয়েছে । ২০০৪ সালে এ বাড়ি নির্মিত হয়েছে । এ বাড়ি নির্মাণ করতে আমার যাবতীয় জমা টাকা ফুরিয়ে গেছে । তবে আমার মেয়ে ও জামাই চাকরী করে আবার টাকা উপার্জন করতে পারবে ।

    ঐতিহ্যিক কৃষকদের কাছে চাকরী করা খুব অচেনা হলেও এখন ফান ছাং জেলায় তা টাটকা বিষয় নয় । চাং থুং মিং এ জেলার সুন ছুন নগরে বসবাস করেন । এ নগরে এখন তৈরি পোষাকের মত ২ শ' সত্তরটিরও বেশি কারখানা চালু হয়েছে । এ কারখানাগুলো এ নগরের জন্যে প্রায় ২০ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে । এ নগরের মোট লোকসংখ্যা মাত্র ৬০ হাজার । সুতরাং স্থানীয় কৃষকদের জন্যে এখন চাষাবাদ করা তাদের টাকা উপার্জন করার একমাত্র উপায় নয় । ৫১ বছর বয়সের কৃষক চাং ছুন সিয়া আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , তার মেয়ে নগরের একটি তৈরি পোষক কারখানায় কাজ করেন এবং তার জামাই ধাতু ঢালাইয়ের একটি কারখানায় কাজ করেন । তারা দুজনই এক বছর ৩০ হাজার ইউয়ান উপার্জন করতে পারেন । তিনি বলেছেন ,

    এখন আমার বাড়িতে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবস্থা রয়েছে । অনেক সময় বিদ্যুতের সাহায্যে আমি চাল সিদ্ধ করে থাকি । রান্নার জন্যে আগে আমরা সবসময় লাকড়ি ব্যবহার করতাম । গত দু বছর আমাদের আয় অনেক বেড়েছে । আমাদের জীবন আগের চেয়ে শত গুণ ভালো হয়েছে ।

    তবে যেসব কৃষক যুগ যুগ ধরে জমিচাষ করে আসছেন , সেসব কৃষক কি বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাজের সংগে খাপ খাওয়াতে পারেন ? এ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের জন্যে কি কি সুযোগ সুবিধা দিয়েছে ? এসব প্রশ্ন নিয়ে আমাদের সংবাদদাতা ফান ছাং জেলার সুন তা পোষাক কোম্পানিতে গিয়েছেন । এ কোম্পানির সমস্ত পোষাক বিদেশে এবং প্রধানত দক্ষিণ আমেরিকা ও জাপানে রফতানি হয় । এ কোম্পানির পরিচালক উ আই চুন বলেছেন , তাদের কোম্পানির শ্রমিক প্রধান আশেপাশের গ্রামাঞ্চল থেকে এসেছেন । কোম্পানিটি তাদের পেশাগত প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি ভালো সুযোগ সুবিধাও দিয়ে থাকে । তিনি বলেছেন ,

    আমাদের কারখানার শ্রমিকদের অধিকাংশই আশেপাশের কৃষক । আমাদের কারখানায় মোট শতাধিক শ্রমিক রয়েছে । কারখানাটি তাদের সংগে চুক্তি স্বাক্ষর করে । প্রতি বছর শ্রমিদের ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হয় । এখন আমরা ভাবছি , যেসব প্রবীণ শ্রমিক কয়েক বছর ধরে আমাদের কারখানায় কাজ করেছেন , সেসব শ্রমিকদেরকে অবসরকালীন বীমা ব্যবস্থায় আনা হবে ।

    আমাদের সংবাদদাতা দেখতে পেলেন , এখানকার কর্মশালা বেশ প্রশস্ত । নারী শ্রমিকরা দক্ষতার সংগে সেলাই কল চালাচ্ছিলেন । তাদের প্রত্যকের কাছে জমা ছিল তৈরি পোষাকে ভরা বাক্স । ২৫ বছর বয়সের নারী শ্রমিক উ লিয়ান একজন কৃষক ছিলেন । এ কোম্পানিতে কাজ করতে পেরে তিনি আনন্দ বোধ করেন । তিনি বলেন ,

    আমার কাজ হলো নমুনা পোষাক তৈরি করা । আমার মাসিক বেতন হচ্ছে দেড় হাজার ইউয়ান । এখানকার কাজে আমি সন্তুষ্ট । আমি কারখানার দেয়া কামরায় থাকি । পরিবেশ বেশ ভালো । কারখানাটি প্রতি মাসে সময়মত আমাদের বেতন দেয় । প্রতি বছর আমাদের জন্যে ভ্রমণের ব্যবস্থা রয়েছে । এ বছর আমরা সু চৌতে ভ্রমণ করতে গেছি ।

    কৃষকদের জীবনের কথা উঠলে চিকিত্সা একটি অনিবার্য বিষয় । অতীতে ফান ছাং জেলার কৃষকরা অসুস্থ্য হয়ে পড়লে হাসপাতালে যেতেন না । কেন না , তাদের বেশি টাকা ছিল না । কিন্তু এখন এখানে গ্রামীন সমবায়মূলক চিকিত্সা ব্যবস্থা চালু হয়েছে । কৃষকরা প্রতি বছর ১০ ইউয়ান করে জমা দিলে চিকিত্সা সুবিধা পেতে পারেন । বৃদ্ধা চাং ছুন সিয়া বলেছেন , গত বছর তিনি অন্ত্রনলীর প্রদাহে ভুগছিলেন । তিনি হাসপাতালে এক সপ্তাহ ধরে বাস করেছেন । হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসার পর অল্প দিনের মধ্যে তিনি নিজের প্রাপ্য চিকিত্সা ভাতা পেয়েছেন । তিনি বলেছেন ,

    গত বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে আমার একটি অপারেশন হয়েছে । অপারেশন করতে আমার চার হাজার ইউয়ান লেগেছে ।