গতকাল ২২ মে ছিল চতুর্দশ 'আন্তর্জাতিক জীব-বিদ্যা বৈচিত্র্য দিবস'। কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে জাতিসংঘ পরিবেশ পরিকল্পনা বিভাগের সদর দফতর এদিন ঘোষণা করেছে যে, জাতিসংঘের 'এক বিলিয়ন গাছ লাগানোর আন্দোলন' গত বছরে শুরু হলে সারা বিশ্বে বিভিন্ন পক্ষ এক বিলিয়নেরও বেশি গাছ লাগানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ তথ্য পুনরায় পরিবেশ সংরক্ষণ সমস্যার ওপর উদ্বেগ ও গুরুত্ব প্রকাশ করেছে। এখন কেনিয়ায় সিআরআই'র সংবাদদাতা সিয়ে ই'র এ সম্বন্ধে একটি প্রতিবেদন শুনবেন।
জাতিসংঘের 'এক বিলিয়ন গাছ লাগানোর আন্দোলন' গত বছরের ৮ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ এ আন্দোলন সমর্থন করতে থাকে। ২২ মে নাইরোবিতে জাতিসংঘের উপমহাসচিব ও পরিবেশ পরিকল্পনা বিভাগের কার্যনির্বাহী পরিচালক আচিম স্টেইনার এ আন্দোলনের বর্তমান অর্জিত সাফল্য বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, 'আন্দোলন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর চার মাসের মধ্যে বিভিন্ন পক্ষ এক বিলিয়নেরও বেশি গাছ লাগানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং এখন পর্যন্ত ১৪ থেকে ১৬কোটি গাছ লাগিয়েছে। এ নিয়ে আপনাদের যদি কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে ১০ মাস পর আপনারা পুনরায় আপনাদের প্রশ্ন নিয়ে এসে দেখেন কি ঘটেছে।'
পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, সেনগাল সরকার ২কোটি গাছ লাগানোর প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর বিভিন্ন পক্ষ জাতিসংঘের পরিবেশ পরিকল্পনা বিভাগের কাছে মোট এক বিলিয়ন ১২কোটি গাছ লাগানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। স্টেইনার বলেছেন, 'কিন্ডার গার্ডেন, কোম্পানি ও আঞ্চলিক সংস্থা প্রকাশ্যভাবে গাছ লাগানোর কর্মসূচী নিয়েছে। আগামী প্রশ্ন হল এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে কিনা। আমি মনে করি, বাস্তবায়িত হবে। কারণ কেউ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিতে বাধ্য করে নি এবং মেক্সিক্র, সেনেগাল ও সরিশাসের পরিবেশ পরিকল্পনা বিভাগ এবং নাগরিকদের প্রতিশ্রুতি দিতে বাধ্য করা হয় নি। কিন্তু ১২ মাসের মধ্যে তারা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না করলে লোকেরা তাদেরকে সমালোচনা করবে। আমি মনে করি, গাছ লাগানোর বিষয়ে প্রত্যেকে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করবে।'
আন্তরিকভাবে প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর সবার উচিত বাস্তবায়নের সমস্যা বিবেচনা করা। 'এক বিলিয়ন গাছ লাগানোর আন্দোলনে' অংশগ্রহণকারী কেনিয়ার ওয়াঙ্গারি মাথাই 'গ্রীন বেল্ট আন্দোলন' প্রতিষ্ঠা করেন। আফ্রিকান নারীরা তাঁর নেতৃত্বে ২০টিরও বেশি আফ্রিকান দেশে ৩কোটিরও বেশি গাছ লাগিয়েছেন। এ কারণে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। তিনি আমাদেরকে এ সম্বন্ধে অনেক অভিজ্ঞতা সরবরাহ করেন। তিনি বলেছেন, "যে দেশের ব্যক্তি ও সংস্থা গাছ লাগানোর প্রতিশ্রুতি দেয়, আমি তাদেরকে উত্সাহ দেই। সবার উচিত সবসময় পরস্পরকে উত্সাহ দেয়া। যাতে আমাদের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা যায়। আপনাদের বেশি গাছ লাগানোর দরকার নেই। আপনি শুধু একটিমাত্র গাছ লাগাবেন এবং এ গাছের সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকা নিশ্চিত করবেন। এটিই যথেষ্ট।"
মাথাই'র কথার অর্থ্য হল বিশ্বের প্রত্যেক মানুষের উচিত আবহাওয়ার পরিবর্তন মোকাবেলার চেষ্টা করা। যদিও এক্ষেত্রে চেষ্টা কম, কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ন। এটি হল 'এক বিলিয়ন গাছ লাগানোর আন্দোলনের' তাত্পর্য। এ সম্বন্ধে স্টেইনার বলেছেন, 'হয়তো এ এক বিলিয়ন গাছ বর্তমানে বিশ্বের আবহাওয়া উষ্ণ হয়ে উঠার অবস্থা পরিবর্তন করতে পারবে না। কিন্তু ১২ মাসের মধ্যে সারা বিশ্বে এক বিলিয়নেরও বেশি গাছ লাগানোর আন্দোলন এক তীব্র বার্তা বহন করছে যে, মানবজাতি এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা নেবে। আমরা জানি, আমাদের উচিত বিশ্বের আবহাওয়ার পরিবর্তন মোকাবেলার ব্যবস্থা নেয়া। আমরা তা জানি যে, বিশ্বের আবহাওয়ার পরিবর্তনের গুরুত্ব ও অপ্ররোধ্যতা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পদ্ধতিতে গাছ লাগানোর মাধ্যমে বর্তমান অবস্থা পরিবর্তন করতে পারবো। এ একবিলিয়ন গাছ হল মানবজাতির এক বিলিয়ন বিবৃতি। এতে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, আমরা ব্যবস্থা নিতে চাই এবং নিচ্ছি। বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ আমাদের সঙ্গে অংশ নেন। আমরা আশা করি, আপনিও আমাদের বিশ্ব আবহাওয়ার পরিবর্তন মোকাবেলার যৌথ আন্দোলনে অংশ নেবেন।'
|