দুদিনব্যাপী চীন-মার্কিন কৌশলগত অর্থনৈতিক সংলাপ ২২ মে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হয়েছে । চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী উ ই ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী হেনরি পাউলসোন মিলিতভাবে সংলাপ পরিচালনা করেছেন । সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপপ্রধানমন্ত্রী উ ই চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যের ইতিহাস স্মরণ করে বলেছেন , চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কৌশলগত সংলাপ অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্দেশ্যই দুদেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের প্রসার তরান্বিত করা । তিনি বলেছেন , দুদেশের মধ্যে কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সময় দু দেশের বাণিজ্য ছিল না বলা যায় । কিন্তু ২০০৬ সালে দুদেশের বাণিজ্যের পরিমান দাড়িয়েছিল ২৬২.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার । দুটি দেশই একে অপরের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশিদার হয়েছে । এর পাশাপাশি রাজনীতি , সংস্কৃতি , বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি , পর্যটন ও সামরিক ক্ষেত্রে দু দেশের বিনিময়ও ক্রমেই বাড়ছে।
উ ই বলেছেন , চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কৌশলগত নির্ভরশীলতা বাড়ানো এবং গঠনমূলক সহযোগিতার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা দুদেশের মৌলিক স্বার্থের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ । তিনি বলেছেন , দুটি দেশের সহযোগিতা দুদেশে স্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত । কাজেই সমতার ভিত্তিতে মতবিনিময় করে সহযোগিতা করা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রধান সমস্যায় পরিণত হয়েছে ।
উ ই আরো বলেছেন , চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রসারের পথে বাধা দূর করতে হবে এবং সমস্যার সমাধান করতে হবে । দুপক্ষকে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সমস্যাকে রাজনীতিকরণের পরিবর্তে সংলাপ ও আলাপ পরামর্শের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা উচিত । তিনি বলেছেন , বর্তমানে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ব্যাপক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে । এতে সংশ্লিষ্টবিভিন্ন পক্ষের স্বার্থ জড়িত রয়েছে । দুদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের সমস্যাগুলো ঠান্ডামাথায় বিশ্লেষণ করে উপযুক্তভাবে মীমাংসা করতে হবে । অর্থনৈতিক নিয়ম অনুসারেই অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সমস্যা সমাধান করা যায় । অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সমস্যার রাজনীতিকরণ সমস্যার সমাধানে সহায়ক হবে না এবং সমস্যাগুলোকে আরো জটিল করে তুলবে । দু দেশের বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতা সম্বন্ধে উ ই বলেছেন , বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতার প্রধান কারণ হলো দুটি দেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে । তিনি বলেছেন , চীন ও যুক্তরাষ্ট্র অর্থনীতি উন্নয়নের ভিন্ন দুটি পর্যায়ে রয়েছে । দুটি দেশ বিশ্বের অর্থনীতি উন্নয়নের দুটি মেরুতে অবস্থান করছে । দুটি দেশের অর্থনীতির পরিপূরকতা বেশি । বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ব ও বিরোধের প্রধান কারণ হলো নিজ দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামোর পুনর্বিন্যাসে সমস্যা নিষ্পত্তির পদ্ধতি ও সহন শক্তি একই নয় । কাজেই মতবিনিময় করে দুদেশের বাণিজ্যিক বিরোধ মীমাংসা করা উচিত । নিজ দেশের সমস্যা নিয়ে অপর পক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা অথবা জোর করে নিজের মত অপরের উপর চাপিয়ে দেয়া বিরোধ নিরসনে সহায়ক হবে না । চাপ সৃষ্টি শুধু সমস্যাকে আরো জটিল করে তুলবে ।
উ ই বলেছেন , চীন মার্কিন পক্ষের সঙ্গে মিলে দুদেশের বাণিজ্যের ভারসাম্যহীনতা মীমাংসা করতে আগ্রহী । যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনের আমদানি বাড়ানো ও চীনে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি বাড়ানোসহ অনেক ব্যবস্থা নেয়া যায় । বিশ্বের বৃহত্তম শিল্পোন্নত দেশ হিসেবে চীনে যুক্তরাষ্ট্রের হাইটেক পন্য রপ্তানি ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক করার আছে ।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী পাউলসোন বলেছেন , এর আগে আমরা কখনও দেখি নি যে চীনের এত বেশি মন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন । দু পক্ষই দুটি দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছে ।
সংলাপে পরিসেবা শিল্প, বিনিয়োগ , জ্বালানী সম্পদ , পরিবেশ ইত্যাদি বিষয়ে মতবিনিময় করা হয় ।
|