মহাপ্রাচীর হলো মানব জাতি'র একটি মহান নকশা। খৃষ্টপূর্ব ২ শতাব্দী আগে চীনের প্রথম রাজা ছিন শি হুয়াং দেশকে একীকরণ করে বিভিন্ন রাজ্যের প্রাচীর সংযুক্ত করে মহাপ্রাচীর তৈরী করতে শুরু করেন। পরের এক হাজার বছরের মধ্যে বিভিন্ন রাজবংশের সম্রাটগণ মহাপ্রাচীরের নতুন অংশ বা পুরোনো অংশের মেরামত করেন। এখন চীনের মহাপ্রাচীর পূর্ব দিকের সমুদ্র থেকে পশ্চিম দিকে মরুভূমি পর্যন্ত মোট দৈর্ঘ্য প্রায় কয়েক হাজার কিলোমিটার। এর মধ্যে মিং রাজবংশের নির্মাণ অংশ সবচেয়ে বড় এবং সুরক্ষিত। এই মানব জাতি'র মহান নকশার উপর একজন মানুষের দৃঢ় উপস্থিতি দেখা যায়। তিনি হলেন তুং ইয়াও হুই।
১৯৮৪ সালে তার বয়স ২৮ বছরের সময়ে তুং ইয়াও হুই এবং অন্য ২ বন্ধু ৫০৮ দিনের মধ্যে হেঁটে হেঁটে সব মহাপ্রাচীর ঘুরে দেখেছেন। তাঁর বন্ধু, চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত আশফাকুর রহমান বলেছেন:
"আমি সব সময় ভাবছি যে, তার পা দেখবো এবং পায়ের পেশির উপর হাত দিয়ে ছোঁয়াবো। কারণ একজন লোক কিভাবে নিজের পায়ে হেঁটে হেঁটে ৩ হাজার কিলোমিটারের মহাপ্রাচীর ঘুরতে পারে?"
তুং ইয়াও হুই আগে মহাপ্রাচীরের পূর্বাংশের ছিন হুয়াং তাও শহরের বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মী ছিলেন। তিনি পাহাড়ে উঠতে পছন্দ করেন। সময় পেলে তিনি প্রবন্ধ লিখে থাকেন। বিংশ শতাব্দীর আশির দশকে তাঁর সকল মহাপ্রাচীর ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছা জেগে উঠে
"আমি মহাপ্রাচীর পছন্দ করি। কিন্তু তখন এ বিষয় সংক্রান্ত বইপত্র খুবই কম। খুঁজে পাওয়া যত কঠিন জানার জন্য তত বেশি আগ্রহী। তাছাড়া, মহাপ্রাচীরের প্রথম পদক্ষেপ দি নিজের হয় তাহলে খুব গৌরব মনে হবে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে এই কাজটিই করবো।"
১৯৮৪ সালে তুং ইয়াও হুই তার মহাপ্রাচীর অভিযান শুরু করেন। তিনি শান হাই কুয়ান থেকে শুরু করেন অনেক কষ্টের পর চিয়া ইয়ু কুয়ানে পৌঁছেন। এর মধ্যে তিনি পথের ১০০টিরও বেশি জেলা ও শহরের ইতিহাস ও পরিবর্তন রেকর্ড করেছেন।
মহাপ্রাচীরের উপরে তুং ইয়াও হুইয়ের গভীর ভালবাসা রয়েছে। তিনি মনে করেন প্রতি মহাপ্রাচীরের অংশের নিজস্ব বৈশিষ্ট আছে।
"প্রতি অংশ মহাপ্রাচীরের নিজস্ব বৈশিষ্ট আছে। যেমন সি মা থাই মহাপ্রাচীর বিপদপূর্ণ, কু পেই খো, ফান লুং শান এবং চিন শান লিং মহাপ্রাচীর খুবই লম্বা। শান হাই কুয়ান সমুদ্রের সঙ্গে সংযুক্ত হয়, তার অন্য রকম সৈন্দর্য আছে।"
পরে ১৯৮৫ সালে তিনি পিকিং ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে ইতিহাস ও ভূবিজ্ঞান বিষয়ক বিখ্যাতঅধ্যাপক হো রেন জি থেকে পড়াশোনা শুরু করেছেন। ১৯৮৬ সালে তার মহাপ্রাচীরে ঘুড়ে বেড়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি "মিং রাজবংশের মহাপ্রাচীরের তদন্ত" একটি বই প্রকাশ করেছেন। বিখ্যাত ঐতিহাসিক চৌ কু ছেং বলেছেন, এটা একটি "পায়ের মাধ্যমে তৈরী বই" বর্ণনা করেন।
তুং ইয়াও হুই'র মতে মহাপ্রাচীর এত গুরুত্বপূর্ণ শুধু তার মহামানয়তার জন্য নয়। মহাপ্রাচীর হলো চীনের কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসের প্রমাণ।
"মহাপ্রাচীর আসলে মাটির সঙ্গে সংযুক্ত একটি নির্মাণ কৌশল। তা রাজার ভবন নয়, ধর্মীয় জায়গা নয়। তা হলো প্রাচীনকালে কৃষক ও পশুপালকদের মধ্যে পরিবর্তন ও সমন্বয় করার একটি পদ্ধতি। তা যুদ্ধ এড়ানোর জন্য নির্মিত হয়। মহাপ্রাচীর চীনের ইতিহাসে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে এসেছে।"
তুং ইয়াও হুই'র মতে মহাপ্রাচীর হলো সারা মানব জাতির অমূল্য ধনী। তাকে যথাযথ সুরক্ষা করা উচিত। তিনি তার জীবন দিয়ে এই কাজে করতে ইচ্ছুক।
|