চীনের ১৭তম জাতীয় বই মেলা সম্প্রতি দক্ষিণ- পশ্চিম চীনের ছুনছিন শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে । প্রকাশনালয় , টেলিভিশন কেন্দ্র , বেতার কেন্দ্র ও ওয়েবসাইট কেন্দ্রের মিলিতভাবে বইপত্র প্রকাশ করা বতর্মান জাতীয় বই মেলার একটি নতুন প্রবণতা ।
চীনের প্রথম জাতীয় বই মেলা ১৯৮০ সালে অনুষ্ঠিত হয় । এই মেলা চীনের বইপত্র ও ওডিও-ভিডিও কেনাবেচার এক সবচেয়ে বড় বাজারে পরিণত হয়েছে । হংকং ও ম্যাকাওসহ চীনের মোট ১৬ শ'টি প্রকাশনালয় এ মেলায় অংশ নিয়েছে । মেলায় প্রদর্শীত বইপত্র ও ওডিও-ভিডিওয়ের সংখ্যা দাড়িয়েছে দু লাখ ৬০ হাজার । এ মেলায় মোট পাঁচ কোটি ইউয়ান মূল্যের বইপত্র বিক্রি হয়েছে ।
চীনের জাতীয় প্রেস ও প্রকাশনা ব্যুরোর উদ্যোগে এই বই মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে । এ ব্যুরোর প্রধান লিউ পিং চে বলেছেন , প্রকাশনা ব্যবস্থা সংস্কার চালানোর সঙ্গে সঙ্গে চীনের প্রেস ও প্রকাশনা ক্ষেত্রে উন্নয়নের প্রবণতা দেখা দিয়েছে । চীনে প্রচুর শ্রেষ্ঠ বইপত্র ও শক্তিশালী প্রকাশনালয়ের আবির্ভাব ঘটেছে । প্রকাশনালয়গুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার শক্তি অনেক বেড়েছে এবং পাঠকদের সেবা করার মানও উন্নত হয়েছে ।
চীনের সি সি টি ভির ' শতমতবাদের ফোরাম ' নামে একটি অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসাররা আধুনিক চিন্তা দিয়ে প্রাচীন চীনের ইতিহাস ও মতবাদ ব্যাখ্যা করেন । এই অনুষ্ঠান দশর্কদের সাধুবাদ পেয়েছে। প্রকাশনালয় ও টিভি কেন্দ্র মিলিতভাবে প্রফেসরদের লেখা এ সব বই প্রকাশ করে পাঠকের আশা পূরণ করেছে । বই মেলায় এ সব বইয়ের বিক্রয় শীর্ষ স্থানে রয়েছে । গত বছর প্রফেসার ইউ তান আধুনিক ভাষা ও চিন্তাভাবনা দিয়ে প্রাচীন চীনের রু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি কনফুসিয়াসের মতবাদ ' লুন ইউ ' ব্যাখ্যা করেন । গত বছরের নভেম্বর মাসে ইউ তানের লেখা একটি বই প্রকাশিত হয় । প্রথম ছাপার পর ছয় লাখ বিক্রি হয় । পাঠকদের চাহিদা মেঠানোর জন্য বইটি আবার ছাপা হয়েছে । বিশেষজ্ঞদের ধারনায় , ইউ তান সহজ ভাষায় প্রাচীন চীনের মতবাদ ব্যাখ্যা করে সংস্কৃতির জনপ্রিয়করনে অবদান রেখেছেন । এ পর্যন্ত শতমতবাদের ফোরামে পাঁচজন প্রফেসরের লেখা বই প্রকাশিত হয়েছে । চুন হুয়া প্রকাশনালয়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ছি ইয়াও আমাদের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে এ পর্যন্ত শতমতবাদ ফোরামের পাঁচজনের বক্তৃতার মোট ৩৮ লাখ বই বিক্রি হয়েছে । এত অল্প সময়ের মধ্যে যে এত বেশি বই বিক্রি হয়েছে , তা' আমাদের কল্পনার বাইরে ।
টেলিভিশন ও বেতারের অনুষ্ঠানের বই ছাড়া চীনের বইপত্র বাজারে নেট লেখকের বই ক্রমেই বাড়ছে । এ সব লেখক নামকরা লেখক নয় বলে তারা উপন্যাস ও ছোট গল্প লিখে ইন্টারনেটে প্রকাশ করেন । তাদের লেখা বই নেট নাগরিকরা খুব পছন্দ করেন । তাই প্রকাশনালয় বাজারের চাহিদা অনুসারে এসব বই প্রকাশ করেছে । এখন ইন্টারনেটে বই পড়া ইতোমধ্যে চীনের পাঠকদের , বিশেষ করে অল্পবয়সী পাঠকদের বই পড়ার এক নতুন পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে ।
চীনের সান লিয়েন শুতিয়েন হলো চীনের একটি পুরনো প্রকাশনালয়। এই প্রকাশনালয়ের ছাপানো বইগুলো বুদ্ধিজীবীরা পড়তে পছন্দ করেন । এ প্রকাশনালয়ের সহকারী সম্পাদক ওয়াং চিয়া মিং বলেছেন , এখন ইন্টারনেট প্রকাশনালয়গুলোর পক্ষে চাপ হয়ে দাড়িয়েছে । আমাদের তা গুরুত্ব দিতে হবে । তিনি বলেছেন , এখন যুব সম্প্রদায় ইন্টারনেটে বই পড়তে পছন্দ করে । আমার ছেলেসহ প্রকাশনালয়ের ছাপা বই পড়ার পরিবর্তে ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন এবং বই পড়েন । কিন্তু আমি মনে করি , ইন্টারনেট কাগজের বইয়ের স্থলাভিষিক্ত করতে পারবে না ।
এখন অনেকে ইন্টার নেট থেকে বই কিনছেন । বই বিক্রির পরিমান মোট পরিমানের ১০ শতাংশ বেশি । অনেক প্রকাশনালয় ও বই কোম্পানি ইন্টারনেটে বই কেনার ব্যবস্থা নিয়েছে । বর্তমান বই মেলায় ছোট ও মাঝারী বইপত্র সরবরাহকারীদের একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছে । জানা গেছে , ঐতিহ্যিক বই প্রকাশের পরিমান কমে নি, কিন্তু পাঠকরা ইন্টারনেটে আরো সস্তায় ও সুবিধায় বই কিনতে পারেন।
|