v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-05-22 15:22:09    
ছেন কুয়াং  ইউয়ান ও তার   হাতের লেখা কোরান

cri
    কোরান মুসলমানদের মূল ধর্মগ্রন্থ। এ গ্রন্থে মোট ৩ লাখেরও বেশি শব্দ রয়েছে । এই ধর্মগ্রন্থকে চীনের একজন প্রবীণ মুসলমান তার নিজ হাতে ৫২৮টি প্রস্তরে খোদাই করে লিখেছেন । তা শিগ্গীরই বিশ্বের সকল মুসলমানের জন্য প্রদর্শিত হবে । প্রস্তরে কোরান খোদাই করার আগে কাগজে হাতে লিখে নেয়ার লেখার মাধ্যমে তাকে লিখে নেয়ার পর তা প্রস্তরে খোদাই করতে হয় । এই পবিত্র ও কঠিক কাজ সম্পাদন করেছেন ছেন কুয়াং ইউয়ান নামে চীনের একজন প্রবীণ ইমাম । তার বয়স প্রায় ৭০ । আজ এই অনুষ্ঠানে ছেন কুয়াং ইউয়ান ও তার হাতের লেখা কোরান সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলছি আমি…

    ছেন কুয়াং ইউয়ান চীনের গণ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং চীনের ইসলাম ধর্ম সমিতির মহাপরিচালক । হাতের লেখা কোরান ও তার ভাস্কর্য প্রসঙ্গে এই প্রবীণ ইমাম বলেন ,

    একজন মুসলমান প্রস্তর ভাস্কর্য শিল্পীর ইচ্ছানুসারে ছেন কুয়াং ইউয়ান হাতের লেখা কোরানের কাজ সম্পন্ন করেছেন । তিনি এই কাজের ওপর খুব গুরুত্ব দেন । প্রথমে তিনি কাজে ব্যস্ত ছিলেন বলে এই কাজ সম্পন্ন করতে না পারার বিষয়টি চিন্তাও করেছিলেন । কোরানের লেখার সুগভীর তাত্পর্যসম্পন্ন কথা বারংবার বিবেচনা করে তিনি অবশেষে এই দায়িত্বকে কবর্ত্য হিসেবে মনে করে তা সম্পাদনের সিদ্ধান্ত নেন । এর মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের কথা সম্প্রসারণ করা যেতে পারে ।

    ২০০২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ছেন কুয়াং ইউয়ান ৪ বছরেরও বেশি সময় নিয়ে কোরানের হাতের লেখার কাজ সম্পন্ন করেছেন । নিত্য দিনের কাজ ছাড়াও তিনি অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে কোরানকে হাতে লিখে নিয়েছেন । এই বৃদ্ধ নানা বাধা-বিঘ্ন কাটিয়ে উঠে ইসলাম ধর্মের সংস্কৃতি ও মনোবল সম্প্রসারণের যে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন , তাতে পেইচিংয়ের তুংশি মসজিদের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা মান হেং ফা খুব মুগ্ধ হয়েছেন । তিনি বলেছেন ,

    ছেন কুয়াং ইউয়ান কোরানকে হাতে লিখে নেয়ার কাজ সম্পন্ন করার যে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন , তা চার বছরেরও বেশি সময় লেগেছে । উত্সব হোক, গ্রীষ্মকাল হোক বা শীতকাল হোক না কেন তার কোরানের হাতের লেখার কাজ অব্যাহত ছিল ।

    ছেন কুয়াং ইউয়ান প্রায় ৭০ বছর বয়স্ক একজন প্রবীণ মুসলমান । চার বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি সকল অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে হাতে কোরান লেখার যে কাজ সম্পন্ন করেছেন , তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য । তিনি বলেন , বয়সের জন্য লিখতে লিখতে তিনি অত্যন্ত ক্লান্ত হতেন , মাঝে মাঝে তিনি শরীরের অসুস্থতাও বোধ করতেন । কিন্তু তিনি অধ্যবসায়ের সঙ্গে লিখে গেছেন নিরলসভাবে ।

    তিনি বলেছেন , পবিত্র কোরান হাতের লেখা একটি খুবই সূক্ষ্ম ও দুরূহ কাজ । এতে কোন ভুল থাকতে পারবে না । তিনি বলেছেন ,

    লেখার সময় কোন সংশোধন ও শব্দের অভাব থাকতে পারবে না ।

    কোরানের প্রতি ভালবাসা ও অসাধারণ অধ্যবসায়ের ওপর নির্ভর করে তিনি পাবিত্র কোরান হাতে লেখার কাজ সম্পাদন করেছেন । এর পাশাপাশি এই মুসলিম ভাস্কর্য শিল্পী ৫২৮টি প্রস্তরে তার হাতের লেখা খোদাই করেছেন । এই ধরনের প্রতিটি প্রস্তর এক মিটার লম্বা , ০.৫ মিটার চওড়া এবং ৩০ সেন্টিমিটার উচ্চ । এই সব প্রস্তরের আয়তন ২৬৪ বর্গ মিটার , সেগুলির ওজন ২৬ টন ।

    কোরানের হাতের লেখা এই মহা প্রকল্প সম্পাদনের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে বৃদ্ধ ছেন উত্ফুল্লচিত্তে বলেন যে ,

    প্রস্তরে খোদাই করা কোরান প্রদর্শিত হওয়ার পর সুগভীর তাত্পর্য সৃষ্টি হয়েছে । এর আগে যেমন চীন তেমনি পৃথিবীতে প্রস্তরে খোদাই করা কোরান অদ্বিতীয় ছিল । তা ইসলাম ধর্মের বাণী সম্প্রসারণের জন্য বিরাট অবদান রেখেছে ।

    ছেন কুয়াং ইউয়ান বলেছেন , বিদেশী মুসলমানরা প্রস্তরে খোদাই করা এই কোরানের ওপর ব্যাপক মনোযোগ দিয়েছেন । কারণ আরব ও ইসলামী দেশগুলোতে প্রস্তরে খোদাই করা এই ধরনের কোরান কখনো দেখা যায় নি । সেজন্য চীনের মুসলমানরা গৌরব বোধ করেছেন । পেইচিংয়ের তুংশি মসজিদের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা মান হেং ফা সংবাদদাতাকে বলেন , প্রস্তরে খোদাই করা কোরানের একটি অংশ এখন তুংশি মসজিদে সংরক্ষিত আছে । ফলে এই মসজিদের সুখ্যাতি অনেক বেড়েছে ।

    তুংশি মসজিদে প্রস্তরে খোদাই করা কোরানকে এক ধরনের অমূল্য ঐশ্বর্য বলে মনে করা হয় । তুংশি মসজিদ যেমন নামাজ পড়া ও ধর্মীয় ক্রিয়াকর্ম আয়োজনের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান , তেমনি তা পেইচিংসহ সমগ্র চীনের ইসলাম ধর্মের বাণী প্রচারের একটি কেন্দ্র ।

    ইমাম ছেন কুয়াং ইউয়ানের সঙ্গে আরেকজন প্রবীণ মুসলমান লিউ স্যু ছেনের পরিচয় হয়েছে ২০ বছরেরও বেশি সময় হল । তিনিও চীনের গণ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের একজন সদস্য । তিনি বলেন , ছেন কুয়াং ইউয়ান ধর্মীয় ক্ষেত্রের একজন প্রবীণ ও সুধী ব্যক্তি । ধর্মীয় ক্ষেত্রে তিনি খুব জ্ঞানী । কোরানের হাতের লেখা একটি মহা প্রকল্প । এতে যেমন ব্যাপকভাবে কোরানের উপদেশ প্রচার করা হয়েছে , তেমনি সমাজতান্ত্রিক সুষম সমাজ গড়ে তুলতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করার ব্যাপারে চীনের ধর্মীয় ক্ষেত্রকে ত্বরান্বিত করা হয়েছে । তিনি বলেন ,

    এতে যেমন ইসলাম ধর্মের শিক্ষা ও উপদেশ প্রচার করা হয়েছে , তেমনি তা সংখ্যালঘু জাতি ও ধর্মীয় স্বাধীনতার নীতির প্রতি চীন সরকারের প্রযত্নের পরিচায়ক । ইমাম ছেন কুয়াং ইউয়ান যে এমন একটি মহা প্রকল্প সম্পন্ন করেছেন , তা অভিনন্দনযোগ্য । এতে চীনের ব্যাপক মুসলমানরা সরকারের যত্ন ও স্নেহ অনুভব করেছেন । চীনে সমাজতান্ত্রিক সুষম সমাজ গড়ে তোলার কর্মসূচীতে এটা সুগভীর তাত্পর্য সৃষ্টি করবে ।