উত্তর কোরিয়ার পণ্যবাহী জাহাজ "কাংসুং" ২০ মে দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তম বন্দর বুসানে পৌঁছেছে। এটি হলো অর্ধ শতাব্দীর পর উত্তর কোরিয়ার পণ্যবাহী জাহাজের প্রথম বারের মতো বুসান বন্দরে পৌঁছা। সঙ্গে সঙ্গে ২১ মে বুসান থেকে উত্তর কোরিয়ার নাচিন বন্দরে যাওয়ার নৌ-পথও খোলা হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদ মাধ্যমের মতে ১৭ মে দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে রেলগাড়ি যোগাযোগ শুরু হওয়ার পর থেকে এবার জাতীয় সমঝোতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
কাংসুং জাহাজ ১৮ মে উত্তর কোরিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের নামপো বন্দর থেকে রওনা হয়ে বুসান বন্দরের দিকে যায়। এবারের জাহাজ চলাচল আগামী সপ্তাহে নাচিন বন্দর থেকে বুসান বন্দরের মধ্যে নিয়মিত মালবহনের জন্য পরীক্ষামূলক প্রস্তুতি নিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার মালবহন কোম্পানি অনুমান করছে যে, এ পদক্ষেপ স্থিতিশীলভাবে দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়ার ব্যবসা ত্বরান্বিত করবে।
চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি ছ-পক্ষীয় বৈঠকের পর উত্তেজনাকর দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক প্রশমিত হয়েছে। জাতীয় সমঝোতা ও সহযোগিতা ক্রমাগত বাস্তবায়িত হচ্ছে। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে অনুষ্ঠিত উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে ২০তম মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় দুপক্ষ একমত হয়েছে যে, সরকারি সংলাপ এবং ধারাবাহিক সহযোগিতা প্রকল্প পুনরায় শুরু করবে। এরপর দু'পক্ষের মধ্যে নানা ধরণের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে। যেমন, ১৩তম উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনৈতিক সহযোগিতা ত্বরান্বিত কমিটির সম্মেলন, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার রেড-ক্রস সোসাইটির সম্মেলন এবং ১৫তম জেনারেল পর্যায়ের বৈঠক, বিছিন্ন হওয়া পরিবারের একীকরণ তত্পরতা এবং উত্তর কোরিয়া সরকারকে দেয়া মানবতা সাহায্য ইত্যাদি।
এর সঙ্গে সঙ্গে দু'পক্ষ আগে স্বাক্ষরিত ধারাবাহিক সহযোগিতা চুক্তিও পুনরায় কার্যকর হয়েছে। এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত ১৩তম দক্ষিণ ও উত্ত কোরিয়ার অর্থনৈতিক সহযোগিতা ত্বরান্বিত কমিটির সম্মেলনে দু'পক্ষ ১৭ মে রেল যোগাযোগ আবার শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়। ৮ মে থেকে ১১ মে পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পঞ্চম জেনারেল পর্যায়ের সম্মেলনে দু'পক্ষ একমত হয়েছে যে, রেল যোগাযোগ সুরক্ষা করার জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। যাতে দু'পক্ষের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য ভিত্তি স্থাপন করা যায়।
গত বছরের জুন মাসে দু'পক্ষ উত্তর কোরিয়ার কাছে হালকা শিল্পের কাঁচা মাল সরবরাহ করা এবং উত্তর কোরিয়ার জ্বালানি সম্পদ উন্নয়নে একমত হয়েছে। কিন্তু এর পূর্বশর্ত হলো দু'দেশের রেল যোগাযোগ চালু করা। গত বছরে দু'পক্ষ এই পরক্ষীমূলক রেল যোগাযোগ নিয়ে কোনো সামরিক সমর্থনে একমত হয়নি। এতে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প স্থগিত রয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত ১৩তম উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনৈতিক সহযোগিতা কমিটির সম্মেলনে দু'পক্ষ এই চুক্তি সংশোধন করেছে।
দক্ষিণ কোরিয় সংবাদ মাধ্যমের মতে ২০০০ সালের জুন মাসে দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়ার নেতারা পিংইয়ংয়ে ঐতিহ্যিক সংলাপ আয়োজনের পর, দু'দেশের মধ্যে আদানপ্রদান ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছে। যদি দু'পক্ষ কাঁচা মাল সরবরাহ সংক্রান্ত চুক্তিতে একমত হয়, সঙ্গে সঙ্গে কেয়সুং শিল্প কেন্দ্র ও কুমগাংসান পর্যটন প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে উন্নয়ন হয় তাহলে দু'দেশের মধ্যে মালবহনের পরিমান নিশ্চয় বাড়বে। দু'দেশের মধ্যে এখন রেলগাড়ি ও বিমান যোগাযোগ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই নৌ-জাহাজ বহন প্রধান বিনিময় পদ্ধতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বুসান থেকে নাচিন বন্দরের নিয়মিত নৌ-পথ খোলার পর নিশ্চয় দু'দেশের মধ্যে আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে অবদান রাখবে। তা কোরীয় উপদ্বীপের পরিস্থিতির জন্যও অনুকূল হবে।
|