v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-05-18 21:00:05    
রাশিয়া ও ই.ইউর সম্পর্ক কঠিন অবস্থায় সামনে এগিয়ে যাচ্ছে

cri

    দু'দিনব্যাপী রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৯তম শীর্ষ সম্মেলন ১৭ মে রাশিয়ার দক্ষিণাংশের শহর তোলায়াত্তিতে শুরু হয়েছে। ই.ইউর বর্তমান পালাক্রমিক চেয়ারম্যান রাষ্ট্র জার্মানীর প্রধানমন্ত্রী অ্যান্জেলা মার্কেল, ই.ইউ কমিশনের চেয়ারম্যান জোসে মানুয়েল বারোসো ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনসহ নেতৃবৃন্দগণ সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে উপস্থিত ছিলেন।

     ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বর মাসে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন "রাশিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে অংশীদার ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত যৌথ রাজনৈতিক বিবৃতি"তে স্বাক্ষর করে। এই বিবৃতি অনুযায়ী, ছয় মাস অন্তর একবার রাশিয়া-ই.ইউ শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৯৪ সালের ২৪ জুন রাশিয়ার তত্কালীন প্রেসিডেন্ট বোরিস ইয়েলতসিন ও ই.ইউর নেতৃবৃন্দগণ গ্রীসের কোর্ফু দ্বীপে দশ বছর মেয়াদী "অংশীদারি সম্পর্ক ও সহযোগিতা চুক্তি" স্বাক্ষর করেছেন। এই চুক্তি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় দুমা ও ই.ইউর বিভিন্ন সদস্য দেশের সংসদের অনুমোদন পাওয়ার পর ১৯৯৭ সালের ১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকরী হয়। এ বছরের অক্টোবর মাসে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। সুতরাং একটি নতুন "অংশীদারি সম্পর্ক ও সহযোগিতা চুক্তি" স্বাক্ষর করা হচ্ছে রাশিয়া ও ই.ইউ সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। দু'পক্ষ পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বর মাসে রাশিয়া ও ই.ইউর হেলসিংকি শীর্ষ সম্মেলনে নতুন চুক্তি নিয়ে আলোচনা করার কথা ছিল। কিন্তু পোল্যান্ড এর বিরুদ্ধে ভেটো প্রয়োগ করেছে। কারণ রাশিয়া পোল্যান্ডের মাংসজাত খাদ্যের আমদানীর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে চায় না। সংশ্লিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী, ই.ইউর একটি সদস্য দেশ রাজি না হলে "অংশীদারি সম্পর্ক ও সহযোগিতা চুক্তি" স্বাক্ষরিত হবে না। ফলে রাশিয়া ও ই.ইউর এই আলোচনা থেমে যায়। ই.ইউর পালাক্রমিক চেয়ারম্যান রাষ্ট্র জার্মানী ব্যক্ত করেছে যে, এ বছরের প্রথমার্ধে পোল্যান্ড ও রাশিয়ার বিবাদ নিষ্পত্তির চেষ্টা করবে। যাতে রাশিয়া ও ই.ইউর নতুন চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করা যায়। কিন্তু আজ পর্যন্ত রাশিয়া ও পোল্যান্ড কেউই আপোষ করে নি। ফলে এ সমস্যা এখন পর্যন্ত সমাধান হয় নি। তা ছাড়াও বাল্টিক সাগরের তিনটি দেশের অন্যতম লিথুয়ানিয়া ঘোষণা করেছে, তারা ই.ইউ ও রাশিয়ার মধ্যে নতুন "অংশীদারি সম্পর্ক ও সহযোগিতা চুক্তি" স্বাক্ষরের বিরোধীতা করে এবং রাশিয়ার কাছে চুক্তিটি স্বাক্ষরের পূর্ব শর্ত উত্থাপন করেছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে জনমত মনে করে, এবারের তোলায়াত্তি শীর্ষ সম্মেলনের ভবিষ্যত সম্ভাবনা উদ্বিগ্নজনক। এমনকি কোন একসময় শীর্ষ সম্মেলনটি বাতিল করা বা অন্যান্য জায়গায় আয়োজনের খবরও বের হয়েছিল।

    এখন শীর্ষ সম্মেলন পরিকল্পনা অনুযায়ী রাশিয়ার তোলায়াত্তিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবু রাশিয়া ও ই.ইউর সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে এবারের শীর্ষ সম্মেলনে কোন চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে না। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা প্রধানতঃ রাশিয়া ও ই.ইউর সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা, কোসোভো সমস্যা, মধ্য প্রাচ্যের পরিস্থিতি এবং ইরানের পারমাণবিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবেন।

    তথ্য মাধ্যম সুত্রে জানা গেছে, রাশিয়া ও ই.ইউর মধ্যকার অসংগতি প্রধানতঃ পূর্ব ইউরোপীয় অঞ্চলে কেন্দ্রীভুত। পোল্যান্ড ও রাশিয়ার অচলাবস্থা এখনো দুর হয় নি। সাবেক সোভিয়েট ইউনিয়নের সদস্য প্রজাতন্ত্র , বর্তমান ই.ইউর সদস্য দেশ এস্তোনিয়া গত মাসের শেষ দিকে রাজধানী তাল্লিনের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সোভিয়েট ইউনিয়নের সেনাবাহিনীর মুক্তি স্মৃতি সৌধ ভেঙ্গে দিয়েছে। এর জন্য এস্তোনিয়া ও রাশিয়ার সম্পর্ক দ্রুতই অবনতি ঘটে। এমন কি রাশিয়া ও ই.ইউর সম্পর্কের ওপরও তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। পোল্যান্ড ও চেক প্রজাতন্ত্র নিজের ভূভাগে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করতে রাজি হয়েছে বলে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলার পাশাপাশি রাশিয়া ও ই.ইউর সম্পর্কের ওপরও কালো ছায়া পড়েছে।

    বিশ্লেষকরা লক্ষ করেছেন, জনমত রাশিয়া ও ই.ইউর সম্পর্কের সমস্যা ও মতভেদের ওপর মনোযোগ দেয়ার পাশাপাশি রাশিয়া পক্ষ রাশিয়া ও ই.ইউর সম্পর্ক এবং রাশিয়া—ই.ইউর তোলায়াত্তি শীর্ষ সম্মেলনের ভবিষ্যত সম্ভাবনার প্রতি সক্রিয় ও আস্থাবান মনোভাব দেখাচ্ছে। সম্প্রতি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন মস্কোয় জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, "রাশিয়া ও ই.ইউর মধ্যে সংঘর্ষ নেই। কেবল কিছু কিছু বিষয়ে মতভেদ রয়েছে।" রুশ প্রেসিডেন্টের ই.ইউ বিষয়ক সহকারী সার্গেই ইয়াস্তারেম্বস্কি ১৬ মে বলেছেন, কিছু তথ্য মাধ্যম রাশিয়া ও ই.ইউর সম্পর্কের বিরোধকে গুরুতরভাবে বড় করে তুলেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, রাশিয়া ও ই.ইউকে অংশীদারি সম্পর্কের উন্নয়ন করতেই হবে। দু'পক্ষ অব্যাহতভাবে কৌশলগত সহযোগিতা করবে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান করবে।

    সুতরাং, যদিও এখন রাশিয়া ও ই.ইউর সম্পর্কের নানা কঠিন অবস্থা চলছে। তবুও দু'পক্ষের সম্পর্ক অচলাবস্থায় থাকবে না। বিশ্লেষকরা মনে করেন, "কঠিন অবস্থার মধ্যে সামনে এগিয়ে যাওয়া" হচ্ছে বর্তমান রাশিয়া ও ই.ইউর সম্পর্কোন্নয়নের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ।