v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-05-18 20:17:23    
মঙ্গোলীয় চিত্রশিল্পী ও লেখিকা চো ইয়া

cri
    চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে চোইয়া নামে মঙ্গোলীয় জাতির একজন চিত্রশিল্পী ও লেখিকা আছেন । ১৯৯৮ সালে তিনি সিনচিয়াংয়ে সাফল্যের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে এক চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন এবং পরপর তিনি " চোইয়ার সংক্ষিপ্ত মন্তব্য বা অনিয়মিত লেখা", "বাবার পিঠ" , "অন্য একটি স্বর্গ" সহ বেশ কয়েকটি গদ্য সংকলন প্রকাশ করেছেন । তবে চোইয়া পেশাদারী চিত্রকর ও লেখিকা নন ।

    তরণকালে চোইয়া মাধ্যমিক স্কুলে চীনা ভাষা পড়াতেন । পরে তিনি পদত্যাগ করে গৃহিনী হন । বাড়িতে তিনি স্বামী ও সন্তানদের দেখাশোনা করেন এবং নিজের পছন্দসই চিত্র আঁকেন ও লেখালেখি করেন ।১০ বছর ধরে তিনি এ ধরণের জীবনযাপন করছেন । চোইয়া বলেন , এই ১০ বছর যেমন ছিল তাঁর সবচেয়ে সুখের দশ বছর তেমনই ছিল তার সবচেয়ে দুঃখের দশ বছর ।বিয়ে হওয়ার পর তারা এক কুড়ে ঘরে সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন বটে , তবে চোইয়া আনন্দে ছিলেন, কারণ তাঁর হাতে তুলি ছিল । তিনি বলেছেন , নির্মল মন না থাকলে ভাল ছবি আঁকা যায় না । মন মহত্ ও পবিত্র হলেই কেবল তুমি এই বিশ্বকে, নিজেকে এবং অন্য কাউকে ভালবাসতে পারবে । সঙ্গীত শুনে আমি সঙ্গীতের মনোহর রূপ চিত্রে তুলে ধরতে পারি । যেমন ব্যক্তিত্ব তেমন প্রকৃতি । একজন চিত্রশিল্পী হিসেবে তোমার চরিত্র যেমন চিত্রও যেন তেমন হয় ।

    ১৯৯২ সালে চো ইয়া মনে করেন , তাঁর চিত্র আঁকার মান উন্নত করা দরকার ।তাই নিজের দৃঢ়সংকল্পতা ও অনবরত প্রচেষ্টার মাধ্যমে তিনি সিনচিয়াং শিক্ষা ইনস্টিটিউটের চিত্রকলা কোর্সে ভর্তি হন । দু বছরের কোর্সে তার চিত্রকলার অনেক উন্নতি হয়েছে । তার বেশির ভাগ চিত্র নারীর ওপর আঁকা । সেগুলোতে নারীর সুশীল ও বিনম্র সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে । সিনচিয়াং নরমাল ইউনিভার্সিটির চিত্রকলা ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ওয়ান সিছিন বলেছেন , চোইয়ার চিত্রে যেমন রয়েছে চীনা জীবনের প্রভাব তেমনি জাপানী স্টাইলে আঁকাচিত্রেও রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মের শান্ত ও স্নীগ্ধ রঙ । তিনি বলেছেন ,তিনি চিত্রের প্রতিভাপূর্ণ নারী শিল্পী । কোনো কোনো সময় আমরা স্বপ্ন দেখার মতোই তার চিত্রকে উপভোগ করি । তিনি ফুল, ঘাস, গাছ এমনকি মানুষকে সুন্দরভাবে সমন্বয় করেছেন । তিনি মানুষকে প্রকৃতির ভেতর দিয়ে রঙ ও রেখায় ফুটিয়ে তুলেছেন । তিনি চমত্কারভাবে মানুষ ও পৃথিবীর সম্পর্কের সমন্বয় করেছেন ।

    চোইয়ার সঙ্গে সিনচিয়াং চিত্রকলা সমিতির চেয়ারম্যান উ ছিফোংয়ের পরিচয় নেই । তার চিত্র দেখা তো দূরের কথা । চোইয়া চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করতে চান শুনে তিনি তাঁকে কয়েকটি চিত্র দেখাতে বলেন । উ ছিফোং চোইয়ার চিত্রগুলো দেখেন এবং প্রশংসা করেন শুধু তাই নয় তিনি চোইয়ার চিত্রকলা প্রদর্শনীর জন্যও ভুমিকা লিখেছেন । চোইয়ার চিত্র প্রদর্শনী সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৫ দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী দর্শকদের অনুরোধে ১০দিন পর্যন্ত বাড়ানো হয় । এমনকি অনেক লোক অন্য শহর থেকে এই প্রদর্শনী দেখতে আসেন । সিনচিয়াং ইউনিভার্সিটির শিক্ষকরা বেশ কয়েকবার ছাত্রদের নিয়ে প্রদর্শনী দেখতে এসেছেন । এ সম্পর্কে চোইয়া বলেন, আমার জীবন কিছুটা কষ্টকর হলেও আমি বিশেষভাবে সন্তুষ্ট । হাতের খরচ তত বেশি নয়, কিন্তু যথেষ্ট । অবসর সময় আমি চিত্র আঁকি এবং কিছু কিছু লিখি ।

    চোইয়ার কবিতা ও ছবি পাঠকদের প্রশংসা ও সমাদর পেয়েছে । তিনি প্রায়শঃই নিজের লেখা ও ছবি সমন্বয় করেন । " চোইয়ার সংক্ষিপ্ত মন্তব্য" শিরোনামে কবিতা সংকলনটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন তিনি নিজেই । বইটির প্রচ্ছদের ডিজাইন এমনিঃ নারীর একটি হাত তরঙ্গের মতো হালকাভাবে লম্বা চুল আঁচড়াচ্ছে । চারপাশে সবুজ রঙের মধ্যে অস্তিত্ব খুঁজে বেড়াচ্ছে অসংখ্য চোখ । নারীটির দুঃখময় চোখে গম্ভীরভাব এবং তার মাথার উপরে সমৃদ্ধশালী তৃণ ও গাছ মানুষের মনকে আলোড়িত করে । গোটা প্রচ্ছদের রঙ মরুদ্যান ও মরুভূমির প্রতিযোগিতা , সংঘর্ষ ও দ্বন্দ্বকে সজীব করে তুলেছে ।চোইয়া বলেন , কবিতা ও চিত্র এবং মানুষ ও প্রকৃতির একীকরণ তার চিত্রের চূড়ান্ত লক্ষ্য ।

    পেশাদার চিত্রশিল্পীদের জীবন স্থিতিশীল ও নিশ্চিত । চোইয়া পেশাদার চিত্রশিল্পী নন । তাই তিনি পেশাদার চিত্রশিল্পীদের পরিবেশ সম্পর্কে ইর্ষা করেন । তবে তিনি একজন স্বাধীন চিত্রশিল্পী হতে চান । তিনি বলেন , যিনি চিত্রশিল্পী হতে চান তাকে নিজের আত্মার স্বাধীনতা ও হৃদয়ের পরিস্কারের বিষয়টিকে নিশ্চিত করতে হবে । নইলে তার চিত্র তার মনোভাবের মতো দর্শক ও পাঠকদের ক্লান্তিতে ও আবেগে ফেলবে ।

    চিত্র আঁকা ও কবিতা লেখা ছাড়া সংসার থেকে চোইয়া অনেক কিছু শিখেছেন । ১০ বছর আগে চোইয়া সিনচিয়াংয়ে আসেন । এখন চোইয়া তার এই ১০ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি চলচ্চিত্রের জন্য লিখছেন । তিনি মানবজাতি ও প্রকৃতির সুষম সম্পর্কের উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন ।এই জন্য তিনি সিনচিয়াংয়ের কবিতা ও চিত্রশিল্পের অভূতপূর্ব দৃষ্টি আকর্ষণ করেন । সিনচিয়াংয়ের লেখক ছেমো বলেন, চো ইয়ার লেখা সুন্দর , পরিস্কার , আমি তার লেখা পছন্দ করি । আমরা তার লেখা প্রকাশ করার পরিকল্পনা নিয়েছি । আশা করি , আরও অনেক পাঠক তার গদ্য, অনিয়মিত লেখা ও কবিতা পছন্দ করবেন ।

    চো ইয়া মনে করেন , চিত্র আঁকা ও কবিতা বা গদ্য লেখা বিশ্বের সঙ্গে তার সংলাপের দুটো উত্তম পদ্ধতি । তার পক্ষে এ দুটো পদ্ধতি একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ । এ দুটো পদ্ধতির মাধ্যমে তিনি তার আসল মনোভাব বর্ণণা করেছেন । ভিন্ন ভিন্ন সময়ে তিনি ভিন্নভিন্ন পদ্ধতিকে বেছে নেন । যে পদ্ধতি ভালভাবে তার সেই সময়কালের মনোভাব ব্যক্ত করতে পারে তিনি সেই পদ্ধতিই বেছে নিতেন । চো ইয়া বলেন , তিনি এ ধরণের পথ অনুসরণ করতেই থাকবেন।