v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-05-18 15:44:57    
কৃষিতে পুঁজিবিনিয়োগের জন্য হাইনান প্রদেশ তাইওয়ানের ব্যবসায়ীদের আকর্ষণ করছে

cri
    ১৯৯৯ সালে দক্ষিণ চীনের হাইনান প্রদেশকে চীন সরকারের উদ্যোগে মূলভূভাগে প্রণালীর দুই তীরের কৃষি সহযোগিতার একমাত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা অঞ্চল হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে । তখন থেকে হাইনানের কৃষি ক্ষেত্রে তাইওয়ানের ব্যবসায়ীদের পুঁজি বিনিয়োগের উত্সাহ ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে । তখনকার ফসলের উন্নত মানের বীজ আমদানি , ফলমূলের বৃক্ষ রোপন , ফুল গাছ ও বিভিন্ন মৌসুমের শাক-সবজির চাষ থেকে শুরু করে এখনকার সমুদ্রের পানিতে মত্স্য ও জলজ দ্রব্য চাষ , জলজ দ্রব্যের প্রক্রিয়াকরণ এবং হাইটেকের প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রকল্প গড়ে তোলা পর্যন্ত হাইনানে নানা ধরনের শিল্পের একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে ।

    হাইনানের চিনতেফুং কৃষি উন্নয়ন কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার হুয়াং ই ফুং এমন একজন ব্যবসায়ী , যিনি রসিক এবং বেশি কথাবার্তা বলেন । হাইনানের রাজধানী হাইখৌ শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত একটি খামারে তিনি এক ঝুড়ি ফল তুলে ধরে সংবাদদাতাকে দেখিয়ে বলেন ,

    হাইখৌ শহরের কৃষি ক্ষেত্রে পুঁজি বিনিয়োগে নিয়োজিত তাইওয়ানের ব্যবসায়ী বেশি । তারা বিবিধ ফলমূল চাষ করেন । কিন্তু এই সব জাতের ফলমূলের মধ্যে মোমের মতো আপেল সবচেয়ে বেশি চাষ করা হয় ।

    হুয়াং ই ফুংয়ের জন্মস্থল তাইওয়ানের পিননান জেলায় । হাইনানে যাওয়ার আগে তিনি তাইওয়ানে মোমের মতো আপেল চাষাবাদে নিয়োজিত থাকতেন । ১৯৯৮ সালে তিনি হাইনানে পরিদর্শন করেছিলেন । তখন এই মনোরম জায়গা তাঁকে খুব আকর্ষণ করল । তিনি হাইনানে মোমের মতো আপেল চাষের একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে শুরু করলেন । ২০০১ সালে তিনি হাইখৌ শহরের উপকন্ঠের ৫ লাখ হেক্টর কৃষি জমি ভাড়ার জন্য দরখাস্ত করলেন । হুয়াং ই ফুং বলেন ,

    স্থানীয় সরকার তার দরখাস্তকে খুব সমর্থন করল । তিনি শীঘ্রই এই সব জমি ভাড়া করলেন । ২০০২ সালে তিনি ২০ জাহার মোমের মতো আপেল গাছ লাগিয়েছেন । ২০০৩ সাল থেকে এই সব গাছে ফল ধরতে লাগল । ঐ বছরের শেষ নাগাদ মোমের মতো আপেলের উত্পাদন পরিমাণ ৪ লাখ কিলোগ্রামে দাঁড়িয়েছে । তার পর তার খামারের কৃষি জমির এখন আয়তন ৮ লাখ হেক্টর হয়েছে ।

    তিনি বলেছেন , টাটকা মোমের মতো আপেল যেমন সুন্দর তেমনি পুষ্টিকর । হাইখৌ এশিয়ার বৃহত্তম মোমোর মতো আপেল উত্পাদনকারী কেন্দ্রে পরিণত হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন ।

    এ পর্যন্ত তাইওয়ানের ব্যবসায়ীরা হাইনানে ৮০ জাতের ৫ শোরও বেশি জাতের উন্নত মানের বীজ আমদানি করেছেন । তাইওয়ানের ব্যবসায়ী উ চিন মু ও তার স্ত্রী হাইনানে সাফল্যের সঙ্গে পেঁপের গাছ লাগিয়েছেন । তাদের পেঁপে বাগানে কোন আগাছা নেই , পেঁপে গাছে ফল থরে থরে ধরেছে ।

    হাইনানে আসার আগে উ চিন মু ও তার স্ত্রী তাইওয়ানের কাও স্যুন শহরে সোনার অলংকার তৈরীর ব্যবসা করতেন । ১৯৯৯ সালে তারা পেঁপে চাষ করার জন্য হাইনানে এসেছেন । তার পরিকল্পনা প্রসঙ্গে উ চিন মু আবেগের সঙ্গে সংবাদদাতাকে বলেন ,

    আগে হাইনানে পেঁপেকে শুধু এক ধরনের সবজি বলে মনে করা হতো । তখন মূলভূভাগের বাজারে পেঁপে দেখা যেতো না । তারা হাইনানে পরীক্ষামূলকভাবে তাইওয়ানের বিশ জাতেরও বেশি পেঁপে চাষ করেছেন । ফলে তাদের চেষ্টা সফল হয়েছে । পরে মূলভূভাগের পুরো চাহিদা মেটানোর জন্য কয়েক শো হেক্টর জমিতে পেঁপে চাষের প্রয়োজন হবে । পেঁপের চাষ বাড়ানোর জন্য তারা হাইনানে পেঁপে চাষের কাজে নিয়োজিত তাইওয়ান ও স্থানীয় অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সহযোগিতা চালানোর একটি কার্যক্রম বিবেচনা করছেন ।

    হাইনানে কৃষি উত্পাদন ধীরে ধীরে বিকশিত হওয়ার পাশাপাশি কৃষিজাত দ্রব্যের প্রক্রিয়াকরণ শিল্পও বিকাশ লাভ করেছে । অধিক থেকে অধিকতর তাইওয়ানের ব্যবসায়ী হাইনানে বিকাশের আরো বেশি ভবিষ্যত্-সম্ভাবনা অর্জন করেছেন ।

    ছুয়ান সিং শিল্প গোষ্ঠী তাইওয়ানের একটি প্রসিদ্ধ শিল্প প্রতিষ্ঠান । গত ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই শিল্প গোষ্ঠীর উদ্যোগে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ২০টিরও বেশি জলজ দ্রব্য চাষ ও প্রক্রিয়াকরণ শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত শতাব্দীর আশির দশকে এই শিল্প গোষ্ঠী ইন্দোনেশিয়া , থাইল্যান্ড , মালয়োশিয়া , ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনসহ পূর্ব এশিয় দেশগুলোতে পুঁজিবিনিয়োগ করে শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছে । গত কয়েক বছরে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় দূষণমুক্ত জলজ দ্রব্যের ওপর অধিক থেকে অধিকতর নজর রাখছে । জরীপ চালাবার মাধ্যমে এই শিল্প গোষ্ঠী লক্ষ্য করে যে , হাইনান দূষণমুক্ত জলজ দ্রব্য উত্পাদনের জন্য খুব উপযোগী ।

    ২০০৩ সালের জুন মাসে ছুয়ান সিং শিল্প গোষ্ঠীর উদ্যোগে হাইখৌ শহরের কুই লিন ইয়ান অর্থনৈতিক উন্নয়ন এলাকায় হাইনান উই লান সামদ্রিক খাদ্য কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । এই কোম্পানিতে প্রধাণতঃ জলজ দ্রব্য উত্পাদন করা হয় । এই কোম্পানির অধীনস্থ হিমায়িত খাদ্য দ্রব্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানার মেঝের আয়তন ৫৫ হাজার বর্গ মিটার । এই কারখানা গড়ে তোলার জন্য ৬ কোটি ইউয়ান অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে । ২০০৫ ও ২০০৬ সালে এই কারখানার উত্পাদন মূল্য যথাক্রমে ১ কোটি মার্কিন ডলার ও ৩ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে । এই কোম্পানির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মাদাম ইয়াং হুয়া ইং বলেন ,

     গত কয়েক বছরে কোম্পানির মুনাফা বেশ ভাল হয়েছে । ইয়াং হুয়া ইংয়ের জন্মস্থান তাইওয়ানের কাও স্যুন শহরে । তিনি কাও স্যুন সামুদ্রিক জলজ দ্রব্য ইনস্টিটিউট থেকে পাস করেছেন । স্নাতক হবার পর তিনি তাইওয়ানের সামুদ্রিক মত্স্য চাষের কাজে নিয়োজিত ছিলেন । ১৯৯৮ সালে মত্স্য চাষ শিল্প পরিদর্শন করার জন্য তিনি হাইনানে এসেছেন । তখন থেকে তিনি হাইনানে মত্স্য চাষ শিল্পে নিয়োজিত অন্যতম তাইওয়ানের ব্যবসায়ীতে পরিণত হয়েছেন । তিনি সংবাদদাতাকে বলেন , তাদের কোম্পানির জলজ দ্রব্য যুক্তরাষ্ট্র , জাপান ও ই ইউ'তে রফতানি করা হয় ।

    জানা গেছে , এ পর্যন্ত হাইনানে মোট ২৮৫টি তাইওয়ানের নিয়োজিত শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং এ সব শিল্প প্রতিষ্ঠানের পুঁজি বিনিয়োগের মোট মূল্য ৪০.৬ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে ।