অনুষ্ঠানের শুরুতেই আমি শ্রোতাবন্ধুদের পেইচিং তুংছেং এলাকার সবচেয়ে বিখ্যাত সুস্বাদু খাবারের রাস্তা কুইচিয়ে নিয়ে যাবো । এ রাস্তার বৈশিষ্ট্য হল অধিকাংশই রেস্টুরেন্টই ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে এবং রাত যত গভীর হয় তত বেশি লোক এখানে খাবার খেতে আসতে থাকে । রাস্তার নামটি কেন কুইচিয়ে বলা হয় ?
জানা গেছে, প্রাচীনকালে এ রাস্তা ছিল মনোহরী জিনিস এবং সজবি ও ফল বিক্রির বাজার । প্রধানত গভীর রাতে বাজার খোলা হয় এবং ভোরবেলায় তা বন্ধ হয়ে যায় । জিনিস বিক্রির সময় বাজারের ব্যবসায়ীরা কেরোসিনের বাতি ব্যবহার করতেন । তখন লোকজন এ বাজারকে কুইশি বাজার বলে ডাকতো । চীনাভাষায় কুইশি'র অর্থ হল ভূতুড়ে বাজার । পরে পেইচিং'এর তুংচেং এলাকা সরকার এ রাস্তাকে রোঁস্তরা রাস্তায় পরিণত করেছে এবং রাস্তার প্রবেশ এলাকায় ধাতবের তৈরী পান করার জন্য ব্যবহৃত মদ কাপের একটি বৃহত্ আকারের ভাষ্কর্য্য নির্মাণ করেছে । চীনাভাষায় মদ পান করা কাপের নামও কুই , সড়কের চীনা ভাষা হলো চিয়ে । এ জন্য এ রাস্তার নাম কুইচিয়ে পরিণত হয়েছে ।
কুইচিয়ের বৈশিষ্ট্য হল চীনের বিভিন্ন ধরণের সুস্বাদু খাবার এখানে পাওয়া যায় । যদিও এ রাস্তার দৈর্ঘ্য শুধু ১.৫ কিলোমিটার। কিন্তু চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন খাবারের রেস্টুরেন্ট রয়েছে প্রায় ২০০টি । সিছুয়ান প্রদেশের 'থান ইউ থৌ' হটপট, ছোংছিং শহরের 'সিয়াও তোং থিয়ান' ঝাল সুপসহ নানা ধরনের খাবার,প্রাচীন পেইচিংয়ের ছাগলের মেরুদণ্ড দিয়ে তৈরি খাবার এবং কুয়াংতুং ও শানতুংসহ বিভিন্ন অঞ্চলের সুস্বাদু খাবারও রয়েছে এখানে । ৫০০টিরও বেশি বড় লাল লণ্ঠন এবং হাজারেরও বেশি ছোট ছোট চীনের ঐতিহ্যিক লাল লণ্ঠন রাস্তার দুই পাশে ও রেস্টুরেন্টের দরজায় ঝুলিয়ে রাখা হয় । গ্রীষ্মকালে বা শীতকালে এ রাস্তায় সবসময়ই ভিড় লেগেই থাকে ।
হুয়াচিয়াই'ইউয়ান হচ্ছে বর্তমানে কুইচিয়ের বৃহত্তম রেস্টুরেন্ট । রাস্তার উত্তর পাশে তাঁর দুটি শাখা রয়েছে ,সবই পেইচিংয়ের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন প্রাচীরবেষ্টিত ছাদবিহীন অঙ্গন। রেস্টুরেন্টের ভেতরে বিভিন্ন ছোট ছোট পথ অন্য পথের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে । রেস্টুরেন্টের টেবিলও বিশেষ কাঠ দিয়ে তৈরী করা। এখানে এলে প্রাচীনকালে পেইচিংয়ের বৈশিষ্ট্য অনুভব করা যায় । রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার চিয়াং চিং চিয়ান বলেছেন, প্রাচীনকালে আমাদের রেস্টুরেন্টটি ছিল একজন জেনারেলের বাসা । পেইচিংয়ের প্রাচীরবেষ্টিত ছাদবিহীন অঙ্গনের বৈশিষ্ট্য খুব সুন্দর । আমাদের রেস্টুরেন্টটি অঙ্গনের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তৈরী করা হয়েছে । আমাদের রেস্টুরেন্টের খাবার তালিকা চীনাভাষা ও ইংরেজী ভাষায় রয়েছে । আশা করি, বিদেশী বন্ধুরা এখানে আসলে চীনের সুস্বাদু ও ঐতিহ্যিক খাবার পছন্দ করবেন ।
হুয়াচিয়াই'ইউয়ানের খাবারের বৈশিষ্ট্য চীনা ও বিদেশী খাবারের বৈশিষ্ট্যের সংমিশ্রনে তৈরী । যেমন তাদের একটি বিখ্যাত খাবারের নাম হল চীনা পিজা, তা ভূট্টা, ডিম, পেঁয়াজ এবং সবুজি দিয়ে তৈরী করা , খাওয়ার সময় সুগন্ধ ও নরম মনে হয় । এ খাবারটি চীনা ও বিদেশী পর্যটকদের কাছে খুব জনপ্রিয় ।
কুইচিয়ের আরেকটি বিখ্যাত খাবার হল ঝাল চিংড়ি মাছ । তা এ রাস্তার প্রত্যেকটি রেস্টুরেন্টেই পাওয়া যায় । এ ডিশ রান্না করার আগে, চিংড়ি মাছগুলো পানিতে দু'দিন ভেজানো থাকে, তারপর গোলমরিচের সঙ্গে অনেক কাঁচা মরিচ এবং আচার মিশিয়ে দিয়ে চিংড়ি মাছ ভাজি করা হয় । তা অনেক সুস্বাদু এবং মনে রাখার মতো। কুইচিয়ে অধিকাংশ পর্যটকই এ খাবার খাওয়ার জন্য আসেন । আপনি জানেন প্রতিদিন পর্যটকরা কত গ্রাম পরিমান ঝাল চিংড়ি মাছ খেতে পারেন ? প্রায় ১০ হাজার গ্রাম ঝাল চিংড়ি বিক্রি হয় । প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে এখানে ঝাল চিংড়ি মাছের উত্সবের আয়োজন করা হয় । তখন হাজার হাজার পর্যটক এখানে এসে এ সুস্বাদু খাবার খান । জনাব ওয়াং তো ওয়েন বহুবার কুইচিয়ে এসে এ খাবার খেয়েছেন । তিনি বলেছেন, ১৮ বছর বয়স থেকেই আমি কুইচিয়ে এসে এ খাবার খাচ্ছি, এখন আমার বয়স ২৫ । সপ্তাহে আমি কয়েকবার এখানে এসে এ খাবার খাই । রাতে বেড়ানোর শেষে খিদে লাগলেই এখানে চলে আসি । এখানকার খাবার যুবকদের খুব পছন্দের ।অনেক বেশি ধরনের খাবারও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রেস্টুরেন্টও রয়েছে । কথায় আছে, যদি তুমি পেইচিং আসো, অবশ্যই এখানে এসে খাবার খাও, নইলে অনুতপ্ত হবে ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কুইচিয়ে অব্যাহতভাবে নির্মান কাজ চলার পরে পরিবর্তনের মাধ্যমে রেস্তোঁরাগুলোর পরিবেশ আরো সুন্দর ও আরামদায়ক হয়ে উঠেছে । ৮৮ বছর বয়স্ক ওয়াং চেন সারা জীবন ধরেই এ রাস্তায় বসবাস করছেন । তিনি এ রাস্তার ক্রমাগত পরিবর্তন অবলোকন করেছে । তিনি বলেছেন, এখানে অনেক পরিবর্তন হয়েছে । আগে এখানে গাড়ি চলতে পারতো না । আমার ছোটবেলায় এখানে সারাদিনে একটি গাড়িও দেখি নি । বর্তমানে এক সেকেন্ডেই চলা গাড়ির সংখ্যা হবে আগের দিনের এক বছরের চলা গাড়ির সংখ্যার মতো ।
আসলে কুইচিয়ের পরিবর্তনের পর অনেক পাশ্চাত্যের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন রেস্টুরেন্টও চালু হয়েছে । যেমন ব্রাজিলের মাংসেররোস্ট , জাপানী সুসি, দক্ষিণ কোরিয়ার মাংসেররোস্ট । তবে বিদেশী পর্যটকদের কাছে চীনা খাবার বেশি ভাল লাগে । ডেনমার্কের কুর্ট কুটজলার কুইচিয়ের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন রোস্টডাক অনেক পছন্দ করেন । তিনি মনে করেন, এখানকার রোস্টডাক বিদেশীদের পছন্দনীয় ফ্লেভারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ । তিনি বলেছেন, আমার মনে হয়, এখানকার রোস্টডাক খুবই সুস্বাদু এবং রোস্টডাক তৈরীর প্রক্রিয়াটি আমার কাছে আশ্চর্য্যজনক মনে হয় । বিশেষ করে তা খাওয়ার সময় অনেক বেশি সবজিও দরকার হয় । আমি তা খুবই পছন্দ করি । প্রথমবার রোস্টডাক খাওয়ার জন্য আমাদেরকে অন্যদের কাছ থেকে তা খাওয়ার পদ্ধতি শিখতে হতো । মোট কথা ,রোস্টডাক খুবই সুস্বাদু ,তাই আমি তাকে ভালোবাসি ।
|