v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-05-11 20:37:42    
লো লিনফাংয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন

cri
চীনের কুইচৌ প্রদেশের কিছু সংখ্যালঘূ জাতি অধ্যূষিত গ্রামে ছেলেকে বড় করে দেখে এবং মেয়েকে ছোটোকরে দেখে এমন আচরণ খুব প্রচলিত । সেখানে সাধারণত মেয়েরা শুধু প্রাথমিক স্কুল পর্যন্ত লেখাপড়া করতে পারে, খুব কম মেয়েই উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল পর্যন্ত পড়তে পারে , বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া তো দূরের কথা । কিন্তু লো লিনফাং এমন একটি বুই জাতির মেয়ে তিনি কখনো নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন পরিত্যাগ করেন নি ।

যদিও লো লিনফাংয়ের বয়স মাত্র ২৪ বছর তবু তিনি একটি ৪ বছর বয়সী সন্তানের মা । কুইচৌ প্রদেশের কুইতিন জেলার ইয়েনশান থানার একটি প্রত্যন্ত বুই জাতি অধ্যূষিত গ্রামে তার জন্ম । তার বাবা একজন সহিস । কৃষি জমি কম বলে বাবা ঘোড়া চড়িয়ে অর্জিত টাকাপয়সা দিয়ে গোটা পরিবারের সংসার চালান । ছোটো বেলায় লো লিনফাং লেখাপড়ায় খুব ভাল ছিল । নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল থেকে স্নাতক হওয়ার পর লো লিনফাং কুইচৌ প্রদেশের অর্থনীতি বিষয়ক মাধ্যমিক পেশাদারী স্কুলে ভর্তি হন । বাবা বলেন, " ছেলের মতো মেয়েকেও লেখাপড়া করা দরকার । অন্য বাবামারা যেভাবে তাদের ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠান আমি তেমনি আমার মেয়েকে স্কুলে পাঠাব ।

২০০২ সালে কুয়াংতুঙ প্রদেশে প্রশিক্ষণ নেয়ার সময় লো লিনফাংকে জানানো হয়েছে যে, স্কুল তিনজন ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুপারিশ করেছে । তিনি তাদের মধ্যে একজন । কিছু দিন পর লো লিনফাং কুইচৌ পুলিশ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞপ্তি পান । কিন্তু সঙ্গেসঙ্গে তিনি চিন্তার মধ্যে নিমজ্জিত হন । কারণ এখানে এক বছর স্কুলফি ৩৬০০ ইউয়ান লাগবে । কিন্তু বাবা দিতে অক্ষম । যাতে লিনফাং অব্যাহতভাবে লেখাপড়া করতে পারে তার জন্য বাবা লিনফাংয়ের বড় বোনকেবিয়ে করতে নিষেধ করেছেন । তিনি আশা করেন,বড় মেয়ে মজুরী করে লিনফাংকে সাহায্য করতে থাকবে ।

বাবার বাধায় লিনফাংয়ের বড় বোনের দুঃখ হয় এবং তিনি আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেন । লিনফাং বড় বোনকে বাড়ি আনার জন্য আত্মীয়ের বাড়িতে আসেন । এই দিন ইয়াং চেনউ নামে এক যুবক যিনি পরে লিনফাংয়ের স্বামী হন তার সঙ্গে লিনফাংয়ের পরিচয় হয় । ইয়াং চেনউর কাছ থেকে লিনফাং জেনেছেন ,বড় ভাইর লেখাপড়ার জন্য তিনি স্বেচ্ছায় স্কুলচ্যুত হন । লো লিনফাং মনে করেন,সত ইয়াং চেনউ তার পড়ার চুড়ান্ত আশা । তাই লিনফাং ইয়াং চেনউকে জিজ্ঞেস করেন ,তিনি তাকে পছন্দ করেন কি না । যদি তাকে তিনি পছন্দ করেন তাহলে তিনি তাকে বিয়ে করবেন । কিন্তু তার একটি পূর্ব শর্ত হল ,তার তিন বছরের স্কুল ফি চেনউকে বহন করতে হবে । চেনউ রাজী হন ।

১৯ বছর বয়সী লিনফাং প্রথমবারের মতো নিজেই সিদ্ধান্ত নেন । বাবা মা তার সিদ্ধান্তে আপত্তি করেন । বাবা মা জানেন না ,লিনফাং কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ ছাড়ছে । স্কুল হওয়ার দিন ঘনিয়ে এসেছে । বাবা মার আপত্তি উপেক্ষা করে লিনফাং ইয়াং চেনউকে বিয়ে করেছেন । লিনফাং নিজের সব আশা স্বামী চেনউর ওপর ছেড়ে দিয়েছেন । কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসে স্কুল খোলার সময় লিনফাং স্কুলে ভর্তি হতে পারেন না । কারণ স্বামী তার স্কুলে ভর্তি হওয়ার কথা আর উল্লেখ করেন না । চেনউ ব্যাখ্যা করে বলেন ,নতুন বাড়ি তৈর করায় তিনি লিনফাংয়ের স্কুলফি দিতে এখন সক্ষম নন । লিনফাং বাধ্য হয়ে কুইচৌ পুলিশ ইনস্টিটিউট থেকে এক বছরের ছুটি নিয়েছেন । লিনফাং বাড়িতে রান্নাবান্না করেন এবং স্বামীর সঙ্গে কৃষির কাজ করেন । কিন্তু এক বছর পরও তারা স্কুলফি দিতে সক্ষম নন । এ সময় তাদের প্রথম সন্তানের জন্ম হয় । ২০০৩ সালে লিনফাং দ্বিতীয়বার কুইচৌ পুলিশ ইনস্টিটিউটে গিয়ে আরোএক বছরের ছুটি নিয়েছেন ।

২০০৪ সালে আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটে । তার দেড় বছরের ছেলে ভুল করে কীটনাশক ওষুধ পানীয় হিসেবে খেয়ে ফেলে । ডাক্তারের চিকিত্সায় ছেলে প্রাণ রক্ষা পায় । এ জন্য লিনফাং ও তার স্বামী চেনউ বিপুল ঋণী হন । নতুন টার্ম আবার শুরু হয় । কিন্তু তারা ৩৬০০ ইউয়ান দিতে অক্ষম বলে লিনফাং তৃতীয়বার পুলিশ ইনস্টিটিউটে গিয়ে এক বছরের ছুটি নিলেন ।

২০০৬ সালের জুলাই মাস লিনফাংয়ের তৃতীয়বার ছুটির শেষ সময় । নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন বিফল হবে বলে লিনফাং আর বসতে পারেন না । তিনি মাত্র ২০ ইউয়ান নিয়ে একা কুইইয়ান শহরে যান ।অনেক কষ্ট করে তিনি একটি ছোটো রেস্তরাঁয় কাজ পান । মাসে মাত্র ২০০ ইউয়ান উপার্জন করেন । পরে তিনি পানি বিক্রি করেছেন,বুয়ার কাজ করেছেন এবং বিউটি পার্লারেরকাজ শিখেছেন ।

কুইচৌ পুলিশ ইনস্টিটিউটের নিয়ম অনুযায়ী এক ছাত্র শুধু একবার স্কুল ছুটি নিতে পারেন এবং যখন তার তৃতীয়বার ছুটি শেষ হয় তখন তিনি সময়চিতভাবে পুলিশ ইনস্টিটিউটে তালিকাভুক্ত করতে পারেননি বলে পুলিশ ইনস্টিটিউট তার নাম কেটে দেয় । এব্যাপারে কেউই লিনফাংকে সাহায্য করতে পারে নি ।

লো লিনফাং স্কুলে ছুটি নেয়ার সময় কখনো স্কুল কর্তৃপক্ষকে নিজের অসুবিধার কথা বলেননি । সংবাদমাধ্যমের খবরে লিনফাংয়ের আসল অসুবিধা জানার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ লিনফাংকে সহানূভুতি দেখান এবং তাকে বলেন , যদি তিনি ২০০৭ সালের পরীক্ষায় অংশ নেন এবং তার পরীক্ষার ফলাফল পুলিশ ইনস্টিটিউটের সীমারেখায় পৌঁছায় তাহলে সম ফলাফলের অবস্থায় পুলিশ ইনস্টিটিউট প্রথমে তাকে গ্রহণ করবে ।

লো লিনফাং একটি পারিবারিক বিউটি পার্লারখুলেছেন । যদিও পুলিশ ইনস্টিটিউট তাকে কথা দিয়েছে যে,একই অবস্থায় তাকে প্রথমে গ্রহণ করবে । কিন্তু তার অবস্থা পরিবর্তন হয়েছে । এখন তার পরিবার আছে , সন্তান আছে । সারা দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে গেলে কে তার ছেলেকে দেখাশুনা করে ? একথা ভেবে লিনফাং কুইইয়াং মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটের সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি হওয়ার পরীক্ষা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন । তিনি কাজ করার প্রচেষ্টা করবেন । যাতে তিনি তাড়াতাড়ি ২৩০০ ইউয়ানের স্কুল ফি জমা দিতে সক্ষম হন ।

এখন লিনফাং প্রতিদিন শহরে যাওয়া আসা করেন । জুলাই মাসে পরীক্ষা শুরু হবে । কাজ ছাড়া তিনি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন । ব্যস্ত হলেও তিনি অত্যন্ত খুশী ও আনন্দ বোধ করেন । ভবিষ্যত সম্পর্কে তিনি অত্যন্ত আশাবাদী ।