ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ১০ মে ঘোষণা করেছেন, তিনি সে দিন থেকে লেবার পার্টির নেতার পদ থেকে পদত্যাগ করবেন এবং ২৭ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যাবেন। ব্রিটেনের জনমত মনে করে, ব্লেয়ার হচ্ছেন দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর ব্রিটেনের সবচেয়ে সফল রাজনীতিবিদদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি পর পর তিন বার সাধারণ নির্বাচনে জয় লাভ করেছে। কিন্তু ইরাক যুদ্ধ ও রাজনৈতিক কেলেঙ্কারির কারণে তাঁর সুনামের ওপর গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলে তিনি বাধ্য হয়ে চাপের মুখে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সেদিন ব্রিটেনের উত্তরাংশের সেজফিল্ডে লেবার পার্টির জনসমাবেশে ব্লেয়ার এই ঘোষণা দেন। বক্তৃতাকালে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, তাঁর রাজনৈতিক জীবন সেজফিল্ড থেকে শুরু। ফলে তিনি এখান থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ১৫ মিনিটের বক্তৃতায় ব্লেয়ার নিজের রাজনৈতিক সাফল্যের সারসংকলণ করেন। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সর্বোচ্চ বেতনের মানদন্ড ও বেতনসহ ছুটির নিয়ম নির্ধারণ, সমকামীদের সমান অধিকার লাভের নিশ্চয়তা, বিশেষ করে উত্তর আয়ারল্যান্ডের শান্তি প্রক্রিয়ার আরম্ভ ইত্যাদি। তাঁর কার্য মেয়াদে ব্রিটেনের অর্থনৈতিক অবস্থা, চিকিত্সা ও শিক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রের কল্যাণমূলক ব্যবস্থা ধারাবাহিকভাবে উন্নত হয়েছে। সন্ত্রাস দমন, আবহাওয়া পরিবর্তন এবং আফ্রিকাকে সাহায্যদানের ক্ষেত্রে ব্রিটেন বিশ্বের নেতৃ স্থানে উপনিত হয়েছে। ইরাক সমস্যায় ব্লেয়ার বলেছেন, "আমার সিদ্ধান্ত হয়তো ভুল হয়েছে। কিন্তু আমি যা করেছি, তখন আমার মনে হয়েছে, আমাদের দেশের জন্য তা সঠিক বাছাই ছিল।"
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ব্লেয়ার স্পষ্টভাবে বলেছেন, তিনি ১২ মাসের মধ্যে পদত্যাগ করবেন। এরপর জনগণ তাঁর পদত্যাগের সময় নিয়ে নানা অনুমান করেছেন। ব্রিটেনের তথ্য মাধ্যম মনে করে, ব্লেয়ারের এই সময়ে পদত্যাগের কথা ঘোষণা করার কারণ হচ্ছে দু'দিন আগে নতুন উত্তর আয়ারল্যান্ডের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত নতুন সরকার শপথ গ্রহণ করেছে। উত্তর আয়ারল্যান্ড ক্ষমতা ভাগাভাগির নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। এই অগ্রগতি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী ব্লেয়ার দীর্ঘ দিনের প্রচেষ্টার পর অর্জিত গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। এখন সরে গেলে তাঁর মনে নিজের রাজনৈতিক জীবনের সাফল্য দাগ কাটতে পারে এবং লেবার পার্টির জন সমর্থন হার বাড়তে পারে।
একটা বিষয় এড়ানো যায় না। অর্থাত্ ইরাক সমস্যায় যে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার জন্য ব্লেয়ার গভীর মূল্য দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে তিনি সঠিক কাজ করেছেন বলে দাবি করছেন। তবে ব্রিটেনের তথ্য মাধ্যমগুলোর সবই মনে করে, ব্লেয়ারের রাজনৈতিক সুনাম হ্রাস পাওয়া ইরাক যুদ্ধে সৈন্য পাঠানো থেকে শুরু হয়েছে। এ কার্যকলাপ কেবল যুক্তরাষ্ট্রের আজ্ঞাবাহী হিসেবে প্রমাণ করেছে। এর মধ্যে ব্রিটেন নিজ দেশের জন্য কোন উপকার খুঁজে পায় নি। কিন্তু আজ পর্যন্ত ব্লেয়ার সরকারী সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নি। ফলে ব্লেয়ারের রাজনৈতিক জীবন শেষ হয়ে গেছে।
তা ছাড়া, ব্লেয়ারের আচরণে প্রবল প্রেসিডেন্টের ভাব রয়েছে। ফলে গুরুতরভাবে সংসদের ক্ষমতা কমে গেছে এবং ব্রিটেনের ঐতিহ্যিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা নড়চড়ে হয়ে গেছে , পার্টির ভিতরে তাঁর প্রবল বিরোধী পক্ষের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পার্টির ভিতরের বিরোধী শক্তি বিরোধী দলের সঙ্গে মিলে ব্লেয়ারের জন্য বাধা সৃষ্টি করেছে। গত এক বছর লেবার পার্টির সদস্যরা একাধিকবার ব্লেয়ারের উপর পদত্যাগ করার চাপ সৃষ্টি করেছেন । এ জন্য তাঁর লেবার পার্টির মধ্যে নেতৃত্ব বজায় রাখা খুব কঠিন হয়েছে। বিশেষ করে গত সপ্তাহে ব্রিটেনের স্থানীয় নির্বাচনে লেবার পার্টি গুরুতরভাবে হেরে গেছে। লেবার পার্টির অভ্যন্তরীন দ্বন্দু আরো তীব্র হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্লেয়ার পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
ব্লেয়ারের মুখপাত্র ১০ মে বলেছেন, লেবার পার্টির নতুন নেতা নির্বাচনের আগে ব্লেয়ার অব্যাহতভাবে "প্রধানমন্ত্রীর কাজের ওপর মনোযোগ দেবেন। তাঁর আরো অনেক কাজ রয়েছে। " অনুমান অনুযায়ী, লেবার পার্টির নির্বাচন সাত সপ্তাহ চলতে থাকবে। এখন জনমত মনে করে, বর্তমান অর্থমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের লেবার পার্টির নতুন নেতা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তিনি হয়তো ব্লেয়ারের স্থলাভিষিক্ত হয়ে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হবেন।
|