v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-05-10 17:05:05    
সিশোংবাননায় দাই জাতির নববর্ষ উপভোগ

cri
    দাই জাতি হচ্ছে চীনের ৫৫টি সংখ্যালঘু জাতির অন্যতম। দাই জাতি প্রধানতঃ দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইউনান প্রদেশে বসবাস করে। চীনের ঐতিহ্যিক বসন্ত উত্সব ছাড়াও দাই জাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মনোজ্ঞ উত্সব হচ্ছে নিজেদের স্বকীয় বৈশিষ্টময় নববর্ষ।

    দাই জাতির প্রায় ২০০০ বছরের ইতিহাস রয়েছে। দাই জাতির ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, চলতি বছর হচ্ছে দাই জাতির ১৩৬৯ সাল। দাই জাতির প্রথা অনুসারে দাই জাতির নববর্ষ প্রতি বছর ১৩ থেকে ১৫ এপ্রিল উদযাপিত হয়।

    এ বছরের ১৩ এপ্রিল হচ্ছে দাই জাতির নববর্ষের প্রথম দিন। সেদিন ভোর বেলা থেকেই নানা ধরনের সুন্দর ফুল দিয়ে সাজানো গাড়ি ইউনান প্রদেশের চিংহোং শহরের রাস্তায় বের হয়। লাল ও হলুদ রংয়ের অসংখ্য ফুল দিয়ে উত্সবের আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। জাতীয় পোষাক পড়া দাই জাতির মেয়েরা গাড়ির ওপর দাঁড়িয়ে ফুলের রঙিন পাপড়িগুলো ও সুখ-শান্তির প্রতীক হিসেবে আশেপাশে দাঁড়ানো মানুষের মধ্যে ছিটিয়ে দেয়। ইস্রাইল থেকে আসা পর্যটক ওরি কোহেন এই প্রথমবার সিশোংবাননায় এসেছেন। তিনি ফুলের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার পর সংবাদদাতাকে বলেছেন, "আমি কুয়াংচৌ, ইয়াংসো ও কুইলিন গিয়েছিলাম। তবে আমার মনে হয়, সিশোংবাননা হচ্ছে শ্রেষ্ঠ জায়গা। এখানকার সমস্ত জিনিস অতি সুন্দর। যদিও মাঝেমাঝে বৃষ্টি হয়, তবু এখানকার মানুষ হচ্ছে আতিথেয়তাসম্পন্ন এবং খুবই দয়ালু। তাঁরা আনন্দচিত্তে আমাদের ছবি তোলায় সাহায্য করেছেন।"

    ১৪ এপ্রিল হচ্ছে দাই জাতির নববর্ষের দ্বিতীয় দিন। দাই জাতির বিশেষ বাজার এ দিন থেকে শুরু হয়। এ দিন চিংহো শহর ও নিকটবর্তী অঞ্চলের লোকেরা সবাই চিংহো শহরের পাশে দিয়ে প্রবাহিত লানচাং নদীর তীরে এসে জাঁকজমকপূর্ণ বাজারে অংশগ্রহণ করেন। লানচাং নদীর তীরের প্রায় দুই কিলোমিটার জায়গা জুড়ে নানা ধরনের স্থানীয় খাবার, কারুশিল্প ও লোক শিল্পসহ অনেক ছোট ছোট দোকান বসে।

    দু'একটা উদাহরণ দিচ্ছি। যেমন এক খাবার দোকানের দোকানদার টাটকা মাছকে পরিষ্কার করার পর বিশেষ সসের মধ্যে কিছু ক্ষণের জন্য ডুবিয়ে রাখেন। তারপর স্থানীয় এক রকম বিশেষ পাতা দিয়ে প্যাকেট করার পর আগুনে পুড়িয়ে নেন। এটা হচ্ছে দাই জাতির এক রকম বিশেষ খাবার। মাছের সুগন্ধ রান্নার সাথে সাথে বের হতে থাকে। মাছের মাংস খেতেও কিন্তু খুব সুস্বাদু।

    মিঃ লি মিং চিংহো শহরেই বড় হয়েছেন। তিনি প্রতি বছর দাই জাতির নববর্ষের সময় এখানে আসেন। তিনি মাছ খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বলেছেন, "আমি ত্রিশ বছরেরও বেশি এখানে বাস করেছি। প্রতি বছরই আমি এখানে আসি। এখন আগের চেয়ে আরো আকর্ষণীয় হয়েছে। রঙিন জাতীয় পোষাক পড়া পর্যটকরা সিশোংবাননার এক বিশেষ দৃশ্যে পরিণত হয়েছে। আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে বাজারে এসে মজা করুন, ড্র্যাগন নৌকা প্রতিযোগিতা দেখুন এবং দাই জাতির বৈশিষ্ট্যময় খাবার খান। মজা পাবেন।"

    উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ড্র্যাগন নৌকা হচ্ছে এখানকার একটি মজার খেলা। চিংহো শহরের উপকণ্ঠের কয়েকটি গ্রামের কৃষকরা বেশ কয়েকটি দল গঠন করেন। তাঁরা তাদের দল নিয়ে লানচাং নদীতে লম্বা লম্বা ড্র্যাগন নৌকা চালানোর প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। আসলে এই প্রতিযোগিতার সময় খুব কম। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। প্রতিযোগিতাটি শেষ হওয়ার পর কৃষকরা নৌকাকে তীরের পাশে রেখে পানি ছিটানো খেলা শুরু করেন।

     কারণ দাই জাতির বসন্ত উত্সবের তৃতীয় দিন হচ্ছে পানি ছিটানো খেলা উত্সব। জানেন, এই উত্সবের পিছনে কিন্তু একটি কাহিনী রয়েছে।

     প্রাচীনকালে এক শয়তান সিশোংবাননাকে দখল করেছে এবং সাতজন সুন্দরী মেয়েকে অপহরণ করে নিজের স্ত্রী করেছে। এই সাতজন সাহসী ও চালাক মেয়ে একসাথে পরিকল্পনা করে একদিন এই শয়তানকে হত্যা করেছে। কিন্তু শয়তানের মাথা যে জায়গায় পড়ে যায়, সেখানে আগুন জ্বলে ওঠে । ফলে সেখানকার লোকেরা সবাই পানি নিয়ে এসে শয়তানের মাথার উপরে ঢেলে দেয়। যাতে শয়তানকে নির্মূল করা যায়। তারপর দাই জাতির নববর্ষের সময় দাই জাতির লোকেরা পরস্পরের গাঁয়ে পানি ছিটিয়ে দেয়। এর মাধ্যমেই তারা আগামী দিনের সুখ-শান্তি কামনা করে।

দাই জাতির পানি ফিটানো উত্সব হয় চিংহোং শহরের উদযাপনী অনুষ্ঠানের শেষ দিনে। সকাল ৯টা থেকে পুরো শহরের পুরুষ , নারী , বৃদ্ধ ও বাচ্চা সবাই বাড়ি থেকে বের হয়ে পানি ছিটানো দলে যোগ দেন। প্রধান প্রধান রাস্তায় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ আগে থেকেই পানি নেয়ার স্থান প্রস্তুত করে রাখে। এই দিনে পানি ছিটানো হচ্ছে সকল লোকের অভিন্ন ভাষা। পরস্পরকে না জানলেও পানি ছিটানোতে বাধা নেই। তাঁদের বিশ্বাস, গাঁয়ে যত বেশি পানি লাগবে , তার পাওয়া কামনাও তত বেশি হবে। তাহলে নতুন বছরে নিজের জীবনযাপনও হয়ে উঠবে সুষ্ঠু ও আনন্দময় । অল্পক্ষণের মধ্যেই রাস্তায় যাতায়াতকারী সব লোক বৃষ্টিতে ভেজার মতোই ভিজে যায়।

আপনারা শুনে মজা পাবেন যে, সেদিনে চিংহোং শহরের কিছু রাস্তায় বাতি খুটিগুলো বৈশিষ্টময় হয়ে ওঠে। বাতিগুলোর উচু খুটি ওপর থেকে পানি ছিটাতে শুরু করে। যেন আকাশ থেকে পবিত্র পানি ঝরছে।

অনুষ্ঠানে আমাদের একজন সংবাদদাতা বৃটেনের মানচেষ্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা ভাষা বিভাগের একজন ছাত্রের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁর নাম ম্যাট কেল । তিনি চিংহোং শহরে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের ইংরেজী ভাষা শেখান। দাই জাতির নববর্ষের পর তিনি বৃটেনে ফিরে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স শেষ করবেন। কিন্তু তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, দু'বছর পর তিনি আবার ইউনানে ফিরে আসবেন। তিনি অব্যাহতভাবে এখানকার শিশুদেরকে ইংরেজী ভাষা শেখাবেন।

তিনি বলেছেন, "আমি প্রথমবার চিংহোং এসেছি। এলাকাটি খুব সুন্দর। অনেক সুস্বাদু খাবার আছে। এখানকার মেয়েরাও খুব সুন্দর। দু'বছর পর আমি অবশ্যই আবার ফিরে আসবো। "