চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ভিন্ন ভিন্ন বলে গ্রামীণ অঞ্চলের শিক্ষকদের গুণগত মান তেমন একটা উন্নত হয়নি। সেখানকার শিশুদের শহুরে শিশুদের মতো উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ ভোগ করার জন্য চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় সক্রিয়ভাবে শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের গ্রামাঞ্চলে পাঠানোর ব্যাপারে উত্সাহ দিতে শুরু করেছে। উল্লেখ্য যে, চীনে বিভিন্ন ক্ষেত্রের গ্রামীণ শিক্ষকদের উচ্চতর প্রশিক্ষণের কাজ চালানো হচ্ছে । ২০১০ সালে চীনের মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলের মোট ৫০ শতাংশেরও বেশি গ্রামীণ শিক্ষককে প্রশিক্ষিত করে তোলা সম্ভব হবে।
এই মাত্র আপনারা শুনেছেন যে সি ছুয়ান গ্রামীণ স্কুলের মোট ৩০ জনেরও বেশি নারী শিক্ষিকারা বিদেশী বিশেষজ্ঞর অধীন ইংরেজি ক্লাসের প্রশিক্ষণকে গ্রহণ করতেন। তাঁরা বিদেশী বিশেষজ্ঞর সাথে ইংরেজি শব্দগুলো বহুবার একাগ্রচিত্তে শিখছেন বলে ক্লাসের অবস্থা এখন খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
২০০৩ সালে চীনের গ্রামীণ নারী শিক্ষিকাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা চালু হয়েছে। প্রতি বছর স্থানীয় দরিদ্র অঞ্চলের মোট ৩০ জন গ্রামীণ নারী শিক্ষিকা প্রায় একসপ্তাহব্যাপী অবৈতনিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারেন। এ সময়ে দেশি-বিদেশী সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা তাদেরকে ইংরেজি, ইন্টারনেট ব্যবহার , শিক্ষা প্রদান পদ্ধতি এবং মনস্তাত্তিক বিষয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। এ পর্যন্ত মোট একশো'রও বেশি নারী শিক্ষিকা এ প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন।
প্রশিক্ষণের সময় খুবই কম । শুধু একবছরের মধ্যে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের শিক্ষাদানের গুণগত মানের অনেক উন্নতি হয়েছে। যেমন তিব্বতী জাতির মেয়ে কে মু ছুও , তিনি সি ছুয়ানের কান চি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের একটি ছোট স্কুলে শিক্ষক তা করেন। আগে তিনি হান ভাষাও ভালভাবে বলতে পারেতেন না। এমন কি ইংরেজির ২৬টি শব্দও নিশ্চিত করে বলতে সক্ষম হননি। তবে শুধু ছ'মাসের প্রশিক্ষণেই এখন তিনি ইংরেজিতে বিদেশীর সঙ্গে সহজভাবে কথা বলতে পারেন। তিনি বলেন:" আগে আমাদের ক্লাসে শুধু আমি ইংরেজি খুবই কম জানতাম । তবে এখন বিদেশীর সঙ্গে আমি যোগাযোগ করতে পারি।"
গ্রামীণ নারী শিক্ষিকার অর্জিত সাফল্য দেশি-বিদেশী সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের বৈশিষ্টময় শিক্ষাদানের উপায়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। এসব নারী শিক্ষিকার প্রশিক্ষণের মান ভালভাবে উন্নত করার জন্য একটি নতুন উন্মুক্তকরণ শিক্ষাদানের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী নারী শিক্ষিকারা বলেছে, প্রশিক্ষণের প্রক্রিয়ায় তাঁরা নতুন শিক্ষাদানের অনেক উপায় শিখেছেন। উল্লেখ্য যে, তাঁরা নতুন এবং আধুনিক শিক্ষাদানের ধারণা সম্পর্কে জানতে সক্ষম হয়েছেন। একজন অংশগ্রহণকারী বলেছে" বিদেশী শিক্ষকের শিক্ষাদানের পদ্ধতি খুবই নমনীয়। তাঁরা প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর অবস্থার ওপর গুরুত্ব দেন। আমাদের ক্লাসে মাঝে মাঝে শুধু দু'একজন ভালভাবে না জানার কারণে একটু পিছিয়ে পড়ে । তবে এটি সবারই ভালভাবে শিখার জন্য অনেক সহায়ক হবে।"
নারী শিক্ষিকা এ চমত্কার শিক্ষাদানের উপায় নিজের স্কুলে প্রয়োগ করেছেন বলে স্থানীয় শিশুদের শিক্ষা ক্ষেত্রে তা এখন বেশি শিক্ষার সুযোগ এনে দিয়েছে।
একজন শিক্ষিকা ফেং আন ইং, তাঁর স্কুলে ইংরেজি ক্লাস ছিলো না। তবে প্রশিক্ষণে অংশ নেয়ার পর, তিনি নিজের স্কুলে ফিরে এসে একটি ইংরেজির ক্লাস স্থানীয় শিশুদের জন্য খুলেছেন। তিনি বলেন:" আগে আমাদের স্কুলে ইংরেজি ক্লাস ছিলো না। প্রশিক্ষণের পর , ইংরেজি ক্লাস আমাদের স্কুলে চালু করেছি। ছাত্রছাত্রীরা এখন ইংরেজীর ক্লাস অনেক পছন্দ করে।"
ছিং কুয়াং ইয়া এ শিক্ষাদান সংক্রান্ত দারিদ্র্য বিমোচন কাজের পরিচালনা হিসেবে তিনি প্রশিক্ষণে অর্জিত ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এ প্রশিক্ষণ প্রকল্প হচ্ছে একটি নতুন পর্যায়ের পরীক্ষা । এটি চীনের সি ছুয়ান প্রদেশের দরিদ্র অঞ্চলের শিক্ষার অবস্থা উন্নয়নের জন্য সক্রিয়ভাবে ভূমিকা পালন করবে । তিনি বলেন:" চীনের পশ্চিমাঞ্চল পূর্বাঞ্চলের চেয়ে একটু দরিদ্র । কারণ , সেখানকার ভিত্তি কিছুটা দুর্বল। তবে পশ্চিমাঞ্চলের দুর্বল দিক হচ্ছে গ্রাম। গ্রামের দুর্বল দিক হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষার দুর্বল দিক হচ্ছে শিক্ষক। এ জন্য আমরা এ কাজ করতে চাই। এর সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শিক্ষককে প্রশিক্ষিত করে তোলা।
|