v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2007-05-04 21:46:24    
কৃষির  আধুনিকায়নে  চীনের গ্রামাঞ্চলের  দারিদ্র্য বিমোচন   হচ্ছে

cri
    গত বছর থেকে চীনে নতুন গ্রামাঞ্চল গড়ে তোলার জন্যে দেশজুড়ে একটি অভিযান চালানো হয়েছে । এই কর্মসূচী চালু করার লক্ষে চীন সরকার কৃষকদের ভরতুকী দেয়া এবং গ্রামাঞ্চলের উত্পাদন ও জীবনযাপন ব্যবস্থা সংস্কার করার ক্ষেত্রে বিপুল অংকের অর্থ বরাদ্দ করেছে , যাতে শহর ও গ্রামাঞ্চলের ব্যবধান কমানো যায় । এর মধ্যে কৃষি উত্পাদনের ঐতিহ্যিক ও পশ্চাত্পদ পদ্ধতি রূপান্তর করা এবং উচ্চ ফলপ্রসূ আধুনিক কৃষি শিল্প গড়ে তোলা নতুন গ্রামাঞ্চলের নির্মাণকাজের একটি প্রধান কাজ । আজ এই অনুষ্ঠানে এ সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলছি আমি …

    উত্তর-পূর্ব চীনের হেইলুংচিয়াং প্রদেশে অবস্থিত সিংশিশি নামে একটি ছোট গ্রাম আছে । ৫০ বছর আগে বেশ কিছু লোক অন্য এলাকা থেকে এই গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন । তখন এই গ্রামে কোন বাড়িঘর ও আবাদী জমি ছিল না । ৫০ বছর হয়ে গেছে । এখন সিংশিশি একটি বিশ্রুত গ্রামে পরিণত হয়েছে । গ্রামে সমতল ও প্রশস্ত একটি সিমেন্ট সড়ক নির্মিত হয়েছে । সড়কের দু'পাশের তৃণাবৃত জমিতে একটির পর একটি বাগান বাড়ি দাঁড়িয়ে আছে । সংবাদাতা একজন গ্রামবাসীর বাসায় এলেন । এই সুন্দর দালানের মেঝের আয়তন ২ শো বর্গ মিটারেরও বেশি । গ্যারেজে মোটর গাড়ি থামে ।

    ৭৫ বছর বয়স্ক চাং উই লিয়াং এমন একজন বৃদ্ধ , যিনি ৫০ বছর আগে এই গ্রামে স্থানান্তরিত হয়ে এসেছেন । তার স্মৃতিপটে অতীতের প্রচুর অবিস্মরণীয় ঘটনা এখনো ফুটে উঠছে । তিনি বলেছেন ,

    যখন তিনি এই গ্রামে এলেন , তখন গ্রামে একেবারে বন্য ঘাস ছাড়া আর কোন আবাদী জমি ছিল না । গ্রামের সামনে শুধু একটি চিহ্নফলক দাঁড়িয়ে আছে , উপরে লেখা আছে সিংশিশি গ্রাম । তখন তাদের শুধু খড়ের ঘরে থাকতে হতো । বালুঝড় বা বৃষ্টি হলে ভেতর ও বাইরে খুব নোংরা হয়ে যেতো ।

    চাং উই লিয়াং বলেছেন , এখন সিংশিশি গ্রামে গ্রামবাসীদের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে । ২ শো পরিবারের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ লোক বাগান বাড়িতে থাকেন । গ্রামবাসীদের আয়ও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে । গত বছর এই গ্রামের মোট আয় ১ বিলিয়ন ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে ।

    সিংশিশি গ্রামের যে এত পরিবর্তন হয়েছে , তার মূলে রয়েছে কৃষির আধুনিকায়নের সুফল । বেশ কয়েক বছর আগে গ্রামে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও কৃষি জমির জলসেচ ব্যবস্থা উন্নয়নের কর্মসূচী চালু হয়েছে । কৃষি কাজের দায়িত্ব বন্টন ব্যবস্থা অনুযায়ী গ্রামের ১৮টি কৃষক পরিবারকে ১ হাজার হেক্টর জমি দেয়া হয়েছে । লিউ হোং ওয়ে তাদের মধ্যে একজন । গত বছর তিনি ও তার পরিবার পরিজন ভুট্টা ও সয়াবিন চাষ করেছেন । তাদের বার্ষিক আয় ৫ লাখ ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে । এতে লিউ হোং ওয়ে খুব সন্তুষ্ট । তিনি বলেন , তারা যে এত বেশি আয় করেছেন , তার মূলে রয়েছে বৈজ্ঞনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদকে জনপ্রিয় করে তোলা ।  

    চাষাবাদের উন্নত মানের প্রযুক্তি জনপ্রিয় করে তোলার জন্য জেলার কৃষি প্রকৌশলীরা প্রতি বছর আমাদের প্রশিক্ষণ দেন । তাদের পরামর্শ অনুযায়ী, তাদের এই অঞ্চলের জন্য বপনযোগ্য ফসল চাষ করা হয় । উন্নত মানের অভিজ্ঞতা শিখে নেয়ার জন্য তারা অন্য জায়গায়ও পরিদর্শন করতে যান ।

    পর্যাপ্ত আয়ের আকর্ষণে সিংশিশি গ্রামের খাদ্য শস্য উত্পাদনকারী কৃষকদের আগ্রহও বেড়েছে । লিউ হোং ওয়ে বলেছেন , এ বছর তিনি এক নতুন ধরনের ভুট্টার বীজ ব্যবহার করবেন । তখন গত বছরের তুলনায় প্রতি হেক্টর জমিতে ভুট্টা উত্পাদনের পরিমাণ সাড়ে ৭ টন বৃদ্ধি পাবে ।

    কৃষির যান্ত্রিকীকরণ বাস্তবায়িত হওয়ার ফলে বিপুল পরিমাণ জনশক্তির সাশ্রয় হয়েছে । সিংশিশি গ্রামে কৃষি পণ্যদ্রব্যের প্রক্রিয়াকরণ শিল্প বিকশিত হতে লাগল এবং এই শিল্প প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার জন্য কৃষকদের উত্সাহ দেয়া হচ্ছে । বর্তমানে গ্রামে কৃষি , বন , পশুপালন ও পর্যটনভিত্তিক একটি বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান-হেইলুংচিয়াং ফু হুয়া শিল্প গোষ্ঠী গড়ে তোলা হয়েছে । এই শিল্প গোষ্ঠীর ভাইস চেয়ারম্যান চাং ক্ ছেং বলেছেন , সিংশিশি গ্রামের শিল্প প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে গ্রামাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সার্বিকভাবে ত্বরান্বিত করা হয়েছে ।

    এখন গ্রামের শিল্প গোষ্ঠীর প্রধান কাজ খাদ্য শস্যের সার্বিক প্রক্রিয়াকরণকে কেন্দ্র করে কৃষির শিল্পায়নের বিকাশ ত্বরান্বিত করা । ফলে খাদ্য শস্য বিক্রির দামের ব্যাপারে কৃষকদের বেশি সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়েছে এবং গ্রামের উদ্বৃত্ত শ্রম শক্তির সদ্ব্যবহার করা হয়েছে । শীতকালে কৃষকরা কৃষি কাজ করেন না । উদ্বৃত্ত শ্রম শক্তি শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা যায় । এতে কৃষকরা যেমন আয় করেছেন , তেমনি তাদের নৈপুণ্যও বেড়েছে ।

    চাং ক্ ছেং সিংশিশি গ্রামের এমন একজন লোক ছিলেন , যিনি গত শতাব্দির আশির দশকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন । বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার পর শিল্প প্রতিষ্ঠান চালানোর মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য তিনি গ্রামে ফিরে এসেছেন । গ্রামের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিজের বুদ্ধিজ্ঞানের অবদান রাখবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন । সিংশিশি গ্রামে চাং ক্ ছেংয়ের মতো আরো বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছাত্রও গ্রামে ফিরে এসেছেন । এর পাশাপাশি শিল্প প্রতিষ্ঠান দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বেশ কিছু শ্রেষ্ঠ প্রকৌশলীও সংগ্রহ করেছে ।

    এর পাশাপাশি সিংশিশি গ্রাম পরিবেশ উন্নত করার ওপরও খুব গুরুত্ব দিচ্ছে । গ্রামবাসীরা নিজেদের বাড়ির সামনে ও পেছনে তৃণাবৃত জমি গড়ে তুলেছেন , ফুল গাছ রোপণ করেছেন এবং বালুঝড় প্রতিরোধের জন্য একটি বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল গড়ে তুলেছেন । গ্রামের প্রধান ফু হুয়া থিং বলেছেন , এই বনাঞ্চলের আয়তন ৬ শো হেক্টরে দাঁড়িয়েছে । এতে গ্রামের পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে । তিনি বলেছেন ,

    সিংশিশি গ্রামের অর্থনৈতিক বিকাশের পাশাপাশি গ্রামের পরিবেসা ব্যবস্থাও আরো পূর্ণাঙ্গ হয়ে উঠেছে । এখন গ্রামে রাস্তাঘাট পরিপাটি , বিভিন্ন ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গ এবং গ্রামে আপাততঃ নগরায়ন বাস্তবায়িত হয়েছে । গ্রামে আমোদ- প্রমোদ কেন্দ্র ও খেলার মাঠও নির্মিত হয়েছে । এতে কৃষকদের অবসর জীবনযাপন ব্যাপক সমৃদ্ধ হয়েছে ।